নশ্বর পৃথিবীর সব সৃষ্টিই নশ্বর। কোনো কিছুই অবিনশ্বর নয়। সবকিছুরই সৃষ্টি হয়েছে কোনো এক সময় ধ্বংস হবে বলে। মানুষও চিরদিন বেঁচে থাকবে না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দেহের বিকাশ ঘটে। আবার একসময় মানুষের দেহের অঙ্গগুলোও আস্তে আস্তে ক্ষয় হতে থাকে। বয়স ৪০-এর কোটায় পৌঁছাতেই মানুষের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মস্তিষ্কের ক্ষয় হতে শুরু করে। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা দেখেছেন, মানুষের বয়স ৪৫ থেকে ৪৯-এর মধ্যে থাকাকালে স্মৃতিশক্তি শতকরা ৩ দশমিক ৬ শতাংশ লোপ পায়। গবেষকেরা ১০ বছর ধরে ৪৫ থেকে ৭০ বছর বয়সী সাত হাজার নারী-পুরুষের স্মৃতিশক্তি, শব্দভান্ডার ও কোনো কিছু বোঝার সক্ষমতার ওপর এ গবেষণা করেন।
এদিকে আলঝেইমারস সোসাইটি বলেছে, এভাবে মস্তিষ্কের নানা পরিবর্তন বিষয়ে জানা গেলে সেটা মানসিক ভারসাম্যহীনতার (পাগলামি) কারণ বুঝতে সহায়ক হবে। এ-সংক্রান্ত আগের কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ বছর বয়সের পর মানুষের বোঝার ক্ষমতা ব্যাপকভাবে কমতে থাকে। কিন্তু এ গবেষণায় বলা হয়েছে, মাঝ বয়স থেকেই মানুষের মস্তিষ্ক কর্মক্ষমতা হারাতে থাকে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা ৪৫ থেকে ৭০ বছর বয়সী পাঁচ হাজার ১৯৮ জন পুরুষ এবং দুই হাজার ১৯২ জন নারীর ওপর গবেষণাটি করেন। তাঁরা সবাই ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ১০ বছরব্যাপী এ গবেষণাকর্মটি চলে।
গবেষণায় অংশ নেওয়া নারী-পুরুষের স্মৃতিশক্তি ও শব্দভান্ডারের দক্ষতা যাচাই করা হয়। এ ছাড়া কোনো কিছু দেখে ও শুনে তাঁরা কতটুকু মনে রাখতে পারেন, তা-ও যাচাই করে দেখেন গবেষকেরা।
গবেষণায় দেখা যায়, শব্দভান্ডার বাদে অন্যান্য ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ ভেদে সবারই মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা লোপ পেয়েছে। আর বেশি বয়স্কদের বেলায় মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বেশি হ্রাস পেয়েছে। গবেষণায় আরও দেখা যায়, ৬৫ থেকে ৭০ বছরের নারী-পুরুষের মধ্যে পুরুষের স্মৃতিশক্তি শতকরা ৯ দশমিক ৬ শতাংশ কমে যায়। অন্যদিকে নারীদের স্মৃতিশক্তি কমে শতকরা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাত্ নারীদের স্মৃতিশক্তি পুরুষদের চেয়ে ভালো।
গবেষক দলটির নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক অর্চনা সিং-মেনাক্স। তিনি ফ্রান্সভিত্তিক সেন্টার ফর রিসার্চ ইন এপিডেমিওলজি অ্যান্ড পপুলেশন হেলথে কাজ করেন। অর্চনা সিং বলেন, এ গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয় যে মানুষের কোনো কিছু বোঝার ক্ষমতা কমে যাওয়ার সঙ্গে তার মানসিক ভারসাম্যহীনতা বা পাগলামির সম্পর্ক আছে।
আরও পড়ুন: চল্লিশের পরও চেহারায় তারুণ্য ধরে রাখার ৫ উপায়
আলঝেইমারস সোসাইটির চিকিত্সক অ্যানি করবেট বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ধূমপান ও অন্য আরও কিছু অভ্যাসের কারণে মানুষের বোঝার ক্ষমতা ব্যাহত হয়। তিনি আরও বলেন, একজন মানুষ যদি ৫০ বছর বয়সে রোগে আক্রান্ত হন, আর চিকিত্সকেরা যদি ১০ বছর পর অর্থাত্ ৬০ বছর বয়সে ওই রোগটি শনাক্ত করেন, তবে ওই রোগীকে সুস্থ করে তোলা কঠিন হয়ে যাবে।
অ্যানি করবেট আরও বলেন, মানুষের মানসিক ভারসাম্যহীনতা বুঝতে হলে তার মস্তিষ্কে আরও কী কী পরিবর্তন হয়ে থাকে, তা-ও জানতে হবে। আর সে জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।
আলঝেইমারস সোসাইটির প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা চিকিত্সক সিমন রিডলে বলেন, ‘মানসিক ভারসাম্যহীনতা প্রতিরোধে এখনো পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো উপায় আমাদের জানা নেই। তার পরও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করলে, সুষম খাবার খেলে, ধূমপান না করলে এবং রক্তচাপ ও চর্বির মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পারলে মানসিক ভারসাম্যহীনতা কমে যায়।’