ঢাকা, ৪ নভেম্বর- প্রযুক্তি জগতে বাংলাদেশের প্রবেশ দেড়িতে হলেও অর্জনের দিক থেকে বেশ এগিয়ে। কারণ বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার বিদেশের বাজারে ক্রমশ দ্বার উন্মোচন হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশী সফটওয়্যার রফতানি করে বছরে ১০০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে এ খাতের উদ্যোক্তারা। ইতিমধ্যে বছরে ১০ কোটি ডলার ঘরে তুলা সম্ভব হচ্ছে সফটওয়্যার রফতানি করে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে লক্ষাধিক যুবকের।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, তথ্য-প্রযুক্তি এবং এ সংশিষ্ট সহায়ক সেবা (আইটিইএস) খাতের রফতানি আয় গত কয়েক বছর ধরেই ঊর্ধ্বমুখী।
ইতিমধ্যে দেশের শীর্ষ ১৫টি রফতানি খাতের একটিতে স্থান করে নিয়েছে এ খাত। ফলে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে সফটওয়্যার রফতানিতে সম্ভাবনা বেড়েই চলেছে।
এ খাত থেকে রফতানি আয়ের বড় উৎস হওয়ার সম্ভবনা নিয়ে আশাবাদী খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সম্প্রতি তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সফটওয়্যার খাত নিয়ে ব্যাপক আশাবাদী আমরা।
তৈরি পোশাক শিল্প থেকে রফতানিতে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছিল। তারপরও ১০ কোটি ডলার আয় করতে ৫ বছরেরও বেশি লেগে গিয়েছিল।
এক্ষেত্রে সফটওয়্যার অল্প সময়ের মধ্যেই এ অবস্থায় পৌঁছে গেছে। এজন্য এটা নিয়ে সরকারকে অবশ্যই ভাবতে হবে।
এদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম খান সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, গত বছর ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে দেশে ২ কোটি ডলার এসেছে।
এবার সেটি ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার পেরিয়ে যাবে। এই হিসাব বিবেচনা করা হলে সব মিলে সফটওয়ার খাত থেকে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে রপ্তানি আয় ২০ কোটি ডলার পেরিয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চলতি অর্থ বছরের শুরুতেই সফটওয়্যার রফতানি খাতে আয় বেড়েছে। প্রথম দুই মাসের আয়ের পরিমাণ গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের আয়কে ছাড়িয়ে গেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুসারে, জুলাই-আগস্ট সময়ে মোট রফতানি হয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলারে। গত অর্থবছরে প্রথম তিন মাস শেষে আয় হয়েছিল ১ কোটি ৫ লাখ ডলার।
অন্য সব পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসের তথ্য দেওয়া হলেও সফটওয়্যারের তথ্য পাওয়া গেছে কেবল জুলাই-আগস্ট সময়ের।
সর্বশেষ এ হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতের আয় গত বছরের বেড়েছে ৯৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
তবে প্রথম দু’মাসে আয় বাড়লেও ২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি শামীম আহসান এ বিষয়ে বলেন, সফটওয়্যার খাতটি আগের চেয়ে অনেক বেশি দক্ষতা অর্জন করেছে।
তাছাড়া এ খাতে নতুন উদ্যোক্তা যেমন যোগ হয়েছে, তেমনি বিদেশিদের আস্থাও বেড়েছে আমাদের ওপর। সে কারণে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে।
শামীম বলেন, চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। তবে আমরা এর চেয়েও অনেক বেশি আয় এনে দিতে পারব বলে আশা করছি।
গত ২০১২-১৩ অর্থবছর শেষে আয় দাঁড়িয়েছিল ১০ কোটি ১৬ লাখ ডলার। সেখানে লক্ষ্য ছিল সাড়ে আট কোটি ডলার।
বেসিস সভাপতি বলনে, ২০১৮ সালের মধ্যে প্রতি বছর এক বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য বিভন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বেসিস।
যেভাবে সব কিছু এগুচ্ছে তাতে তার আগেই আমরা এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারব বলে আশা করছি।