নয়াদিল্লী, ২০ নভেম্বর - অবরুদ্ধ কাশ্মীর উপত্যকায় কবে কখন ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা হবে সে সিদ্ধান্ত তখনই নেয়া হবে যখন স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে সন্তুষ্ট হয়ে কেন্দ্র সরকারকে তাদের অনাপত্তিপত্র দেবে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ আজ বুধবার দেশটির সংসদকে এ কথা জানিয়েছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী অমিত শাহ সংসদে দাবি করেছেন, গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে রাজ্যটি ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করার পর থেকে সেখানে মোতায়েন নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের গুলিতে উপত্যকার একজন মানুষও নিহত হয়নি। পাল্টা পাথর নিক্ষেপের পরিসংখ্যান দিয়েছেন তিনি।
ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় দেয়া বক্তৃতায় অমিত শাহ বলেন, ‘কাশ্মীরে ইন্টারনেট সংযোগ পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে তাদের সন্তুষ্টির কথা জানানোর পর। প্রতিবেশী দেশ কাশ্মীরে নানা কিছু করার চেষ্টা করছে, তাই নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে আমাদের।’
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের অন্যতম কারিগর অমিত শাহ আরও বলেন, ‘আমরা শুনছি নেতারা বলছেন কাশ্মীরের শ্রীনগরে নাকি রক্তগঙ্গা বয়ে গেছে কিন্তু আমি তাদের বলবো এরকম কিছুই হয়নি। আমি খুব খুশি যে পুলিশের গুলিতে একজন মানুষেরও মৃত্যু হয়নি।’
সরকার যখন কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে তার আগে থেকেই উপত্যকাটির মোবাইল, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। সম্প্রতি আংশিকভাবে পোস্টপেইড মোবাইল সেবা চালু হলেও সেই থেকে আজ অবধি সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন।
গত সোমবার ভারতের পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে। অধিবেশন শুরু হওয়ার পরই বিরোধী দলের সাংসদদের কাশ্মীর ইস্যুতে তোলা প্রশ্ন নিয়ে সংসদ উত্তাল। গতকাল মঙ্গলবার বিরোধী সাংসদদের তোপের মুখে রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতবি করা হয়। বিরোধীরা গ্রেফতার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও নেতাদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছেন।
শুধু গ্রেফতার নেতাদের মুক্তি নয় কাশ্মীরে আসলে কী ঘটছে তাও জানে না এবং সেখানে বিরোধী কোনো নেতাকে কেনো যেতে দেয়া হয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে সংসদে। অনেকে সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের এমপিদের কাশ্মরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না কিন্তু বিদেশের এমপিদের ডেকে এনে ঠিকই কাশ্মীর ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে সরকার।
ভারতে মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার গত ৫ আগস্ট কাশ্মীর উপত্যকার বিশেষ মর্যাদা রদ ও রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার আইন পাস করে। গত ৩০ অক্টোবর সে আইন কার্যকর হয়েছে। এখন কাশ্মীর ভারতের রাজ্য নয় জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ নামে কেন্দ্রশাসিত দুটি পৃথক অঞ্চল।
কাশ্মীরের সাবেক তিন মুখ্যমন্ত্রীসহ হাজারো নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনিতেই বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকায়িত এলাকা হিসেবে বিবেচিত অঞ্চলটিতে নতুন করে আরও ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ আসছে।
কাশ্মীর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (কেসিসিআই) বলছে, বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর অবরুদ্ধ করে রাখায় ১০০ কোটির বেশি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে কাশ্মীরকে। অঞ্চলটির মূল বাণিজ্য সংস্থাটি এ হিসাব জানিয়ে বলেছে, এই ক্ষতির জন্য তারা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করছে।
সূত্র : জাগো নিউজ
এন এইচ, ২০ নভেম্বর