গাজীপুর, ১১ সেপ্টেম্বর- গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান ৯ দিনের সরকারি সফরে শনিবার (৮ই সেপ্টেম্বর) ইন্দোনেশিয়া গেছেন। তার বিদেশ যাওয়ার পরের দিন রোববার (৯ই সেপ্টেম্বর) ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর দায়ের করা মামলায় মেয়রের নাম-ঠিকানা দিয়ে এক ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে মেয়রের কারাগারে যাওয়ার খবর প্রকাশ হলে শ্রীপুরের শুরু হয় নানা গুঞ্জন। তাদের কথা, মেয়র বিদেশে। কিন্তু আত্মসমর্পণ করে কারাগারে গেলেন এ আবার কোন মেয়র?
শ্রীপুর পৌরসভার সচিব বদরুজ্জামান বাদল বলেন, আমার উপস্থিতিতে শনিবার রাত ১১টায় মালিন্দো এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান ৯ দিনের এক সফরে ইন্দোনেশিয়ায় গেছেন। কিন্তু তিনি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জেনেছেন মেয়র কারাগারে। এমন খবরে তিনিও হতবাক হয়েছেন বলে জানান। পরে দুপুরে তিনি স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, মেয়র জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে বিদেশে রয়েছেন।
তবে, মেয়র সেজে কে কারাগারে রয়েছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানাতে পারেননি আর মামলাগুলোর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
শ্রীপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমজাদ হোসেন জানান, মেয়র বিদেশ থাকায় তিনি গতকাল (রোববার) থেকে পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। তার জানা মতে মেয়র বিদেশ রয়েছেন।
তবে, মেয়র আনিছুর রহমানের ছোট ভাই মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোকলেছুর রহমান বলেন, মেয়রের আস্থাভাজন যুবলীগ কর্মী নূরে আলম মোল্লা নামে একজন মেয়রের নামে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে গেছেন বলে শুনেছি। তবে, মেয়র আনিছুর রহমান এখন বিদেশে। শনিবার রাতে দক্ষিণ এশিয়ার পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক এক সম্মেলনে যোগ দিতে সরকারি সফরে মেয়র আনিছুর রহমান ইন্দোনেশিয়ায় গেছেন। তিনি সেখানে ৯ দিন থাকবেন।
মেয়র আনিছুরের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান নামে একজন রোববার ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে চার মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। চার্জশিটের সঙ্গে তার নাম ও পিতার নাম মিল ছিল। আদালত তিন মামলায় জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তিনি সঠিক মেয়র কি না এ বিষয়ে কাগজে প্রমাণিত হবে। তার সঙ্গে শ্রীপুর পৌরসভার সাবেক হিসাব রক্ষক আব্দুল মান্নানকেও কারাগারে প্রেরণ করা হয়। তবে, মেয়র বিদেশ রয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
প্রসঙ্গত, দুদকের চারটি মামলার মধ্যে এক মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, পৌরসভার রশিদের মাধ্যমে আদায়কৃত ট্যাক্স ও বিবরণীর ৪৩ লাখ ৭৬ হাজার ১০৭ টাকা পৌরসভার তহবিলে জমা না করে আত্মসাৎ করেন তারা। ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১শে জানুয়ারি দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম মামলা করেন। ২০১৬ সালের ১২ই জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করেন।
আরেক মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০১০ সালে শ্রীপুর পৌরসভার অন্তর্গত পাঁচটি হাট-বাজার থেকে সাত লাখ ৩৫ হাজার ২০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। ওই ঘটনায় ২০১৪ সালের ১৭ই জুলাই দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৫ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন। অপর দুই মামলায়ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা দুদক তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
তথ্যসূত্র: মানবজমিন
আরএস/ ১১ সেপ্টেম্বর