রাঙামাটি, ১২ এপ্রিল-আর মাত্র দুইদিন বাকি। আসছে বাঙালির প্রাণের উৎসব বৈশাখ। শুরু হবে নতুন বছরের পরিক্রমা। বাংলা ভাষাবাসীদের জন্য এ এক আনন্দের দিন। এত বড় সর্বজনীন উপলক্ষ আর নেই। এই নির্মল আনন্দে প্রতিবারের মতো যোগ দিয়েছেন পার্বত্য অঞ্চলের মানুষেরাও। শুরু হয়েছে নানা উৎসব।
এরই ধারবাহিকতায় শুক্রবার সকাল থেকে বৈশাখী উৎসবের আয়োজন করে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির তঞ্চঙ্গ্যা সম্পদ্রায়। আয়োজন ছোট। তবে ছিল প্রাণের ছোঁয়া। অফুরন্ত আনন্দ যেন এর মাঝে খুজে পান এ আদিবাসীরা। আর তঞ্চঙ্গ্যা নারীরা যেন এখানে বেশ এগিয়ে। তারা মাথায় মাদাখাবং আর জুম্মা শালুম পড়ে দিনভর সেজে ছিলেন। শালুমের ওপর খাদি ও ওড়না, কোমরে ফাদুড়ী আর পেইনুন পরে তরুণীরা আসেন বিদ্যালয় মাঠে।
শুক্রবার সকালে জেলার কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা উচ্চ বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, এক আন্দমুখর চিত্র। যেন প্রাণের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে বিদ্যালয় মাঠটি। ছোট মাঠের পূর্ব দিকে একটি সাজানো-গোছানো পরিপাটি ছোট মঞ্চ।
আরেকদিকে, ছোট ছোট চারটি স্টল। সেখানে বিক্রেতারা পসরা সাজিয়ে বসেছেন ছোটদের নানা রকম খেলনার। রয়েছে খাবারের দোকানও।
আবার বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে মানানসই করে উৎসবের আমেজ দিতে আয়োজন করা হয় বিশেষ লটারি; যেখানে রাখা হয় আকর্ষণীয় নানা পুরস্কার। আর ছোট-বড় সবার কাছে বেশি আকর্ষণীয় ছিল ছড়ি নিক্ষেপ, যেটি দিয়ে দক্ষরা জিতে নিচ্ছিলেন একটি টেবিলে গুছিয়ে রাখা রকমারি ব্যবহার্য জিনিসপত্র।
প্রচণ্ড রোদ আর তৃষ্ণা যেন কাবু করতে পারছিল না তাদের। তৃষ্ণা মেঠাতে যেন আইসক্রীম ছিল তাদের ভরসা।
তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের শিশু হরি তঞ্চঙ্গ্যা থেকে শুরু করে কিশোর, মধ্য বয়েসী এমনকি কিশোর সন্তোষ তঞ্চঙ্গ্যা পর্যন্ত এসেছে উৎসবের স্বাদ নিতে। সারাদিন বৈশাখ উদযাপন করতে র্যালি, খেলাধুলা, আলোচনা সভা আর সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়।
বরাবরের মতো এবারের উৎসবে তঞ্চঙ্গ্যা তরুণ-তরুণীরা মেতেছিল গীলাখেলা উৎসবে। রাঙামাটির আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী খেলা এটি।
গদাবি তঞ্চঙ্গ্যা, মধুমালা তঞ্চঙ্গ্যা, জেমি তঞ্চঙ্গ্যাসহ আরও আদিবাসী মেয়েরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানেই বিকেলে জমে গিলাখেলা। আসেন তরুণেরাও।
গীলাখেলায় পাথরের একটি খণ্ড নিক্ষেপ করেন মাঠের এক পাশে রাখা আরেকটি পাথরের কাছাকাছি। তারপর পুরুষেরা হাঁটুর ওপর রেখে আর মেয়েরা হাতের আঙ্গুলের ওপর রেখে প্রথম পাথরটিকে ছুড়ে মারে দ্বিতীয় পাথরের ওপর। লাগাতে পারলেই উচ্ছ্বাসে চিৎকার করে ওঠেন তঞ্চঙ্গ্যা তরুণ-তরুণীরা।
এদিকে, বৈশাখ আয়োজনে এ সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িতে চলে মজার মজার খাবারের আয়োজন। হরেক রকম সবজির পাসন, তেলের পিঠা আর তরমুজ দিয়ে এসব বাড়িতে আপ্যায়ন করেন বাড়ির গৃহিনীরা।
বৃদ্ধ সন্তোষ বলেন, “ভালো লাগে এ দিনটি আসলে। এটি আমাদের প্রাণের উৎসব।”
অপরদিকে, ওয়াগগা উচ্চ বিদ্যালয়েল মলয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “এই দিন আমাদের যেকোনো উৎসবের দিন থেকে বেশিই প্রিয়।”
প্রসঙ্গত, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায় বাস করেন তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী। এ ছাড়াও কক্সবাজারে খুবই সামান্য সংখ্যায় রয়েছেন এ আদিবাসী গোষ্ঠী। সব মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার তঞ্চঙ্গ্যার বসবাস এ দেশে।
এদিকে, উৎসব উপলক্ষে ওয়াগগা ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে একটি বড় র্যালি বের করেন তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা। যেটি কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ এলাকা হয়ে আবার ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙণে এসে শেষ হয়।