আবুধাবি, ০৭ সেপ্টেম্বর- ঈদের শুভেচ্ছা। এখন ঈদ আনন্দের সংবাদ সম্প্রচার করা হচ্ছে। আজ আবুধাবির গেট সিটির রাষ্ট্রদূত ভবনে প্রবাসী বাঙালিদের ঈদ পুনর্মিলনী উদ্যাপন করা হয়। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।
আয়োজনে ছায়াছবি নির্ভর একটি পর্ব উপস্থাপন করা হয়। পর্বটির নাম আনন্দ আনন্দ। এ পর্ব সংগীত ও চলচ্চিত্র জগতের দুই দিকপাল আবদুল জব্বার ও নায়করাজ রাজ্জাককে উৎসর্গ করা হয়। সংগীত ও নৃত্যে শিল্পীরা এ সময় শ্রোতা–দর্শকের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন। খবরটি এ পর্যন্তই।
এটা কোনো সংবাদ নয়, সংবাদ কণিকা। আবার প্রথাগত অর্থে পড়াও নয়। সংবাদ পাঠকের হাতে না আছে স্ক্রিপ্ট না আছে কলম। মাইক্রোফোনে কেবল বলে যাওয়া। বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ হলে খবর পড়ার ভাষায় সংবাদ পড়ছি বলে নিজের নামটি জুড়ে দিতে পারতাম।
আসলে সংবাদ কণিকাটি ছিল তাৎক্ষণিকতার ফসল। সে প্রসঙ্গ আপাতত থাক। সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে এখন আসি। সে আমার প্রাণপ্রিয় প্রথম আলো। এরই বুকে আশ্রয় নিয়ে আমি আমার সব কথা বলার চেষ্টা করব। সংবাদ প্রচারের ভাষায় যেমনটি বলা হয়, এখন শুনুন বিস্তারিত।
ঈদ আনন্দ ছিল সেদিনকার অনুষ্ঠানের মূল চেতনা। ঈদের দিন (১ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রদূত ভবনে আয়োজন করা হয় এ অনুষ্ঠানের। এখানে প্রবাসী বাঙালিরা আসেন দল ধরে।
উপভোগ করেন ভিন্নধর্মী একটি পর্ব—আনন্দ আনন্দ। এ পর্ব পরিচালনা করেন রাষ্ট্রদূত দম্পতি মোহাম্মদ ইমরান ও জাকিয়া হাসনাত। চলচ্চিত্রের গান বাজানো হয়। বলতে হবে তার শিল্পী কে, কেইবা ওই চলচ্চিত্রের নায়িকা! উত্তর দেবেন দম্পতিরা। তারা বসলেন জোড়ায় জোড়ায়।
যাদের জোড়া নেই তারা কি করবেন? তাদের জন্যও ছিল ব্যবস্থা। তারা বসতে পারেন নিকটতম কোনো বন্ধুর সঙ্গে। পরামর্শ করে উত্তর দিতে পারেন। একপর্যায়ে বিষয়টি আরেকটু ব্যাখ্যা করেন আরমানউল্লা চৌধুরী। ১২টি প্রশ্নের শিট তুলে দেওয়া হয় তাদের হাতে। নির্দিষ্ট সময় ধরে গান বাজে, তারা উত্তর লেখেন।
গান দিয়ে শুরু। পূর্ণা শবনম গাইলেন, শুধু গান গেয়ে পরিচয়। চলার পথে ক্ষণিক দেখা একি শুধু অভিনয়। দিন শেষে পাখি ফেরে নীড়ে। তার চিত্রনাট্য লেখা হয়ে যায় আকাশের প্রচ্ছদপটে। সে এক মধুর কাহিনি। কিন্তু মানুষের বেলায় সেটা কি কেবলই অভিনয়! সেটা হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এবার সব চাইতে বড় অভিনয়ের কথা বলব।
এখন চারপাশের বহু মানুষ মানুষের মতো দেখতে শুধু। আসলে অন্য কিছু। ভেতরে তাদের হিংস্রতা লুকিয়ে থাকে। বনের পশু কোরবানি করা সহজ। মনের পশুকে তাড়াবে কীভাবে! ঈদ-উল–আজহার ঠিক আগে এই প্রশ্নটি অনেক বড় হয়ে সামনে এসেছে। সামনে এনেছে রূপা নামের এক তরুণী।
না, আর বেঁচে নেই সে। চলন্ত বাসে তার ওপর নির্যাতন চালায় একদল নরপশু। সিরাজগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে নিষ্ঠুর আক্রমণের শিকার হয় রূপা।
এক লড়াকু মেয়ে ছিল এই তরুণী। স্কুল জীবনে ছাত্র পড়িয়ে গরিব কৃষক পরিবারকে সাহায্য করেছে সে। ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে চড়েছিল। অন্য যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর বাসের হেলপাররা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরে ঘাড় মটকে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর বন থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আসামিরা ধরা পড়েছে। হয়তো বিচার হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কি করে এমনটি সম্ভব হলো?
সত্যিকার অর্থে, ভেতরে-ভেতরে পশু তারা। মানুষের বোধ এদের নেই। তা না হলে মেধাবী রূপা অকালে ঝরে পড়বে কেন! সে ছিল সুশ্রী, বিয়ের জন্যও প্রস্তাব এসেছিল বহু। কিন্তু সেদিকে সে মনোযোগ দেয়নি। সে আইন পড়া শুরু করেছিল। আত্মনির্ভর হবে বলে একটা সংস্থায় চাকরিও করত।
ফাঁকে দিতে যায় শিক্ষকতার নিবন্ধন পরীক্ষা। পশুর অধিক যে নরপশু, তারা কি করে মূল্য দেবে এর। সারা দেশের মানুষ এই প্রশ্ন তুলছেন। অভিনয় শুধুই অভিনয়! তারা বলছেন, বনের পশুকে কোরবানি দেওয়ার আগে মনের পশুকে জবাই করতে হবে। তবেই কেবল সার্থক হতে পারে কোরবানি।
ওই আসরে নাচে তিন শিশু। আনন্দময় শৈশব ওদের। জারা, শেলি ও মাইশা নাচে মনের আনন্দে। নজরুল ইসলামের গান। অনুরাধা পাদোয়াল নেচে নাম করেছে এ গানে। ওরা অনুসরণ করে বড় শিল্পীকে বড় হয়ে উঠবার মানসে।
মোমের পুতুল যেন ওরা! মমির দেশের মেয়ে কখনো খেজুর বাগানে, কখনো সাহারা মরুভূমিতে নাচে। লু হাওয়ায় ওড়না উড়িয়ে নাচে। নাচে তারা ঢেউ তুলে নীল দরিয়ায়। সুরমা পরা আঁখির মেয়েদের আকর্ষণে জ্যোৎস্না আসে। আহা কী সে আনন্দ!
এ সময়ে মিয়ানমারে চলছে হত্যাযজ্ঞ। হ্যাঁ, সেখানে রাজনীতি আছে সবকিছুর অন্তরালে। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশকে নিয়ে আরকান ইসলামিক স্টেট ঘোষণা করতে চায়। রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ও রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) আসলেই জঙ্গি ও সন্ত্রাসী পথেই দৌড়াচ্ছে। তবে এর জন্য নিরীহ ও অশিক্ষিত রোহিঙ্গাদের খেসারত দিতে হবে কেন?
আহা, মানুষ কীভাবে যে মানুষকে হত্যা করছে। হাজার হাজার মানুষ ঘর হারা। আগুনে পুড়ে মরছে। গুলি করে কুপিয়ে মারা হচ্ছে তাদের। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মানুষের কোনো মর্যাদা দিতে নারাজ মিয়ানমার সরকার। নারী-পুরুষ শিশুরা তাই বাঁচার জন্য ছুটতে ছুটতে চলে আসছে বাংলাদেশের সীমানায়।
বঙ্গোপসাগর দিয়ে ঢুকে পড়ছে। এখানেও মৃত্যু। জলে একাধিক নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। এরপরও পৃথিবী তাকাচ্ছে না চোখ তুলে। মানুষরূপী খুনিদের বর্বরদের বলছে না কিছু। এ অবস্থায় বাংলাদেশের মানবিক মানুষ সত্যি বেদনাহত।
আনন্দ আনন্দ অনুষ্ঠান চলে। এর ফলাফলের জন্য বিচারকের দায়িত্ব পড়ল প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেনের ওপর। আরও পারিষদ নিলেন তিনি। তারা খাতা দেখলেন, নম্বর দিলেন। ইজাজ কলিম-নাজনীন ইজাজ দম্পতি প্রথম, মোস্তাফিজুর রহমান-আনোয়ারা আক্তার দম্পতি হলেন দ্বিতীয়।
তৃতীয় হলেন দুই দম্পতি মোহাম্মদ শহিদুল হক-আঞ্জুমান আরা শিল্পী আর আরমানুল্লা-কারিশমা। ঈদের আনন্দ সত্যিই অন্যরকম। এদিনে আমরা একজন আরেকজনের কাছাকাছি আসি। আনন্দ করি, আনন্দকে ভাগ করে নিই। প্রবাসের মাটিতেও গড়ে তুলি একটুকরো বাংলাদেশ।
অধ্যক্ষ মীর আনিসুল হাসান বলেন, ঈদ অর্থ খুশি, আনন্দ। একা ভোগ করার মধ্যে কোনো আনন্দ নেই। ঈদের আনন্দ, মানবিক মহিমায় ছড়িয়ে পড়ুক হৃদয় থেকে হৃদয়ে হৃদয়ে। প্রকৌশলী মোহাম্মদ হামিদ হোসেন বলেন, এটা পরিবারের সঙ্গে পরিবারের মিলন। আমরা এখানে আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরি।
নাজনীন ইজাজ বলেন অন্যভাবে, আমরা উপভোগ করি তবে মা, ভাই, বোনের কথা মনে পড়ে। আমরা স্মৃতিকাতর হই।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকারও রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল, রাজনৈতিক দল বিএনপিও। এ এক ভালো লক্ষণ। পুনর্মিলনীতেও বিষয়টি আসে ভিন্ন ভিন্ন আলোচনায়। তারা এ নিয়ে কথা বলে খণ্ড খণ্ড ভাবে। দুজন, তিনজন কিংবা চারজন মিলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ হচ্ছে। শোক করা হচ্ছে। কিন্তু সমাধান নেই।
সব দেখে বলতে মন চায়-বেঁচে থাকা সবার জন্য নয়। তুমি ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত হও। তোমার বাড়িতে আগুন। আগুনে পুড়ে গলে যাও তুমি। সীমান্তে কাঁটাতার। তুমি গেঁথে থাকো সেখানে। জলে ভেসে যাক তোমার শিশু সন্তান। তুমি কাঁদতে কাঁদতে মরো। মরো। না মরলে আর বাঁচবে না তুমি। জাতিসংঘ তোমাকে বাঁচাবে না। শান্তির নোবেল বাঁচাবে না তোমাকে। এবং আমরা যারা শোক করছি তারা অক্ষম। তোমার কাছে ক্ষমা চাইব। বাঁচাব না তোমাকে। মৃত্যু তোমাকে বাঁচাবে। তুমি মরো। মৃত্যুর কাছে আশ্রয় নাও ভুল করে পৃথিবী তে আসা রোহিঙ্গা মানব।
কথা হয় তরুণ দম্পতি সজীব চৌধুরী-টুসি সাহার সঙ্গে। আনন্দ আনন্দ উপলব্ধি ছিল তাদের সারাক্ষণ। সজীব বললেন, এই দিনে সকল দুঃখ–দুর্দশা ভুলে গিয়ে প্রতিটি মানব জেগে উঠুক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে। প্রতিটি হৃদয় জ্বলে উঠুক ত্যাগের মহিমায়। দ্বিতীয়জন যোগ করলেন, শুধু ঈদের দিনই নয়, এ বন্ধন হোক প্রতিটি দিন আর তা শুরু হোক আজকের ঈদ দিয়েই।
ইয়াসমিন মিনু অনুষ্ঠানকে বৈচিত্র্যময় বলে অভিহিত করেন। শিউলি আহমেদ বললেন, আনন্দ আনন্দ আমেজ আজ সবার মধ্যে। নওরিন ইকবাল লাকি কুপন ড্রর পুরস্কার নিচ্ছিলেন। তারও প্রকাশ, বড় মজার কাটছে সময়টি। তরুণ প্রকৌশলী শামসুল হক রিয়াদ। তারও সঙ্গে তার সহধর্মিণী সামিয়া ইউসরা। ঈদ পুনর্মিলনীর উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বললেন তিনি।
পুনর্মিলনীতে ছিল প্রীতিভোজ। রাষ্ট্রদূত ও তার সহধর্মিণী আগতদের আপ্যায়ন করলেন। সেখানে ছিল মাংস–কোর্মা–পোলাও আর মিষ্টির ছড়াছড়ি। পরম তৃপ্তিতে সে সব গ্রহণ করেন অতিথিরা। এই ভাবে আনন্দের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠানের। সেই সঙ্গে এখনকার মতো শেষ হলো পুনর্মিলনীর সুদীর্ঘ খবরও।
আর/১০:১৪/০৭ সেপ্টেম্বর