ক্রিকেট

মানসিকতার পরিবর্তনেই ধারাবাহিক সোহান

ঢাকা, ৩০ এপ্রিল – আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা গেছে খুব সামান্যই। নুরুল হাসান সোহানের প্রতিভার বিচ্ছুরণ এখনো হয়নি বলাই যায়। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে। কিপিংয়ে দেশসেরার স্বীকৃতি মিললেও ব্যাট হাতে সোহান অনুজ্জ্বল। পাঁচ টেস্ট, তিন ওয়ানডে যেমন তেমন, টি-২০ তে ৩০ ম্যাচ খেলা সোহানের ব্যাটিং গড় খুবই হতাশার (১২.৪৭)। লোয়ার অর্ডারে নামলেও ডানহাতি এই ব্যাটার নিজেকে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন।

সীমিত ওভারের দুই ফরম্যাটেই এখন জাতীয় দলের বাইরে সোহান। টেস্টে দ্বিতীয় কিপার হিসেবে দলে থাকছেন বটে, তবে ম্যাচ খেলা হচ্ছে না। ২৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার পরিবর্তনের ছবি আঁকছেন। ব্যাটিংয়ে প্রত্যাশিত রূপে ধরা দিচ্ছেন তিনি। দুরন্ত ধারাবাহিকতায় ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে রান করেছেন সোহান।

লিগ চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে ৮ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৯৬.৬০ গড়ে ৪৮৩ রান করেছেন, যেখানে একটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফ সেঞ্চুরি ছিল। ঠিক এই পরিসংখ্যানও সোহানের পারফরম্যান্সের মূল ছবিটা তুলে ধরতে পারছে না। কারণ, শেখ জামালের শিরোপা জয়ে তার দাপুটে, দায়িত্বশীল ব্যাটিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে ও পরে ৮ ইনিংস খেলেছেন সোহান। প্রথম ম্যাচে অনায়স রান তাড়ায় অপরাজিত ২৫, দ্বিতীয় ম্যাচে দলকে আগলে রেখে ৬৪, তৃতীয় ম্যাচে ২২ রান করে সেট হয়েও আউট হন। চতুর্থ ম্যাচে পরিস্হিতির দাবি মিটিয়ে ৭৩, পঞ্চম ম্যাচে একা হাতে দলকে জেতালেন তিনি। ৮১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসা দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান সেঞ্চুরি করে, অপরাজিত ১৩২ রান করেন। ষষ্ঠ ম্যাচে ৮৬ রানে দলের ৫ উইকেট পতনের পর ৭৩ রানের ইনিংস, সপ্তম ম্যাচে আবারও দল বিপর্যয়ে ৭৮ রানে নেই ৫ উইকেট। স্রোতের বিপরীতে বুক আগলে দাঁড়িয়ে অপরাজিত ৮১ রান, শেখ জামালের শিরোপাও নিশ্চিত হয়ে যায় এই ম্যাচে। লিগ শেষের ম্যাচে ১৫ রানের ইনিংস খেলেন সোহান।

নিজেকে বদলানোর প্রয়াসেই এই সাফল্য এসেছে তার। মানসিকভাবে পরিবর্তন আনা, পরিশ্রম করাই সোহানের মূল মন্ত্র। মাইন্ড ট্রেনারের সঙ্গেও কাজ করছেন তিনি।

নিজের ব্যাটিংয়ে পরিবর্তন ও ধারাবাহিকতার বিষয়ে সোহান বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের খেলোয়াড়দের মানসিক পরিবর্তন ও চিন্তা-ভাবনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে আমি এটা নিয়ে কাজ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, আধুনিক ক্রিকেটে পরিবর্তনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব সময় নিজের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। আরও যে দুর্বলতা আছে, সেগুলো নিয়েও কাজ করবো।’

উইকেটে গিয়ে প্রতিনিয়ত অপ্রথাগত শট খেলার চেষ্টা দেখা যেত সোহানের মাঝে। এখন উইকেটে শান্ত-স্হির এবং ইনিংস এগিয়ে নেওয়ার পরিণত ছবিই দেখা যায় ২৮ বছর বয়সী এ তরুণের ব্যাটিংয়ে। এ সম্পর্কে সোহান বলেন, ‘শান্ত থাকার যে কথা বলছিলেন, এখন স্কিলের চেয়ে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকা এবং মানসিকভাবে ফিট এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তো এই জিনিসগুলো নিয়েও কাজ করছি।’

শুধু ঘরোয়া ক্রিকেট নয় বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও এমন কার্যকর পারফরম্যান্সের আশা করছেন সোহান। এ তরুণ ক্রিকেটার বলেন, ‘বাংলাদেশ দলকে অনেক বড় জায়গায় দেখতে চাই। আমাদের লক্ষ্য থাকবে, আমরা যেন পরের ধাপে নিয়ে যেতে পারি। অবশ্যই বাংলাদেশের হয়ে অনেক বড় কিছু করার আশা।’

সূত্র : ইত্তেফাক
এম এস, ৩০ এপ্রিল

Back to top button