উত্তেজনা তুঙ্গে, পোল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৫ যুদ্ধবিমান
ওয়াশিংটন, ১১ ফেব্রুয়ারি – ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধের শঙ্কা ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তের কাছে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে তারা বেলারুশের সঙ্গে সামরিক মহড়াও চালিয়ে যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের পাশে থাকা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোও নানা প্রস্তুতি শুরু করেছে। ব্রিটেন ও পোল্যান্ডে যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার দ্য হিল অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৫ যুদ্ধবিমান পোল্যান্ডে এসে পৌঁছেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোর ন্যাটোকে শক্তিশালী করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ন্যাটোর পক্ষ থেকে এক টুইটার বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে ইউক্রেন সীমান্তে আরও সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার প্রকাশিত স্যাটেলাইট ছবিতে নতুন সেনা মোতায়েনের বিষয়টি উঠে আসে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এ খবর জানায়।
নতুন এ ছবিটি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রে কলোরাডোভিত্তিক স্পেস টেকনোলজি কোম্পানি ম্যাক্সার টেকনোলজিস। এতে দেখা গেছে, কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী ক্রিমিয়ার তিনটি স্থানে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
মার্কিন গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন করে সেনা, যুদ্ধযান ও অন্যান্য যুদ্ধ সরঞ্জাম ইউক্রেন সীমান্তবর্তী নভোজেরনয়ি ও স্লাভনি এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।
সেখানে সাড়ে পাঁচশ’র বেশি তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান করছেন রুশ সেনা সদস্যরা। ক্রিমিয়া উপদ্বীপের পাশে একটি বিমান ঘাঁটিতে শত শত যুদ্ধযানও মোতায়েন করা হয়েছে।
স্যাটেলাইট ছবিতে আরও দেখা গেছে, পশ্চিম রাশিয়ার কুর্শক শহরের কাছ সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। শহরটি ইউক্রেনের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ খারকিভের নিকটবর্তী।
ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ইউক্রেন দাবি করেছে, রাশিয়া তাদের সমুদ্রপথ বন্ধ করে রেখেছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা এ দাবি করেন।
শুক্রবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী সপ্তাহে নৌমহড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। এ পরিস্থিতিতে তারা সমুদ্রপথ বন্ধ করে দিয়েছে।
দিমিত্রি কুলেবা বলেন, রাশিয়ার বাহিনী আজভ সাগর একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে এবং কৃষ্ণ সাগর প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গত বছরের শেষ দিকে ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করে রাশিয়া। এ প্রেক্ষাপটে রাশিয়া ইউক্রেনে একটি আগ্রাসন চালাতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো।
অবশ্য রাশিয়া বরাবরই এ দাবি অস্বীকার করে আসছে।
পরিস্থিতি যখন এমন, তখন সব মার্কিনিকে ইউক্রেন ছাড়ার অনুরোধ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সম্ভাব্য সামরিক আগ্রাসনের মধ্যে তিনি এ নির্দেশনা দিলেন। এর আগে তিনি বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারিতেই ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া।
বাইডেন বলেন, যদি মস্কো ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায় তাহলে তিনি মার্কিনিদের রক্ষা করতে কোনো সেনা পাঠাবেন না। তিনি সতর্ক করে বলেন, ওই অঞ্চলে দ্রুতই পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে।
চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইউক্রেন নিয়ে যুদ্ধের শঙ্কার মধ্যে ইউরোপের দেশ বেলারুশে সামরিক মহড়া শুরু করেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার ১০ দিনের এ সামরিক মহড়া শুরু হয়।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়া যে ইউক্রেনে সম্ভাব্য একটি যুদ্ধের বিষয়ে আসলেই ভাবছে, সেটা ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোকে দেখাতেই এ মহড়া।
মধ্য জানুয়ারিতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্য ও অস্ত্র-সরঞ্জাম বেলারুশে আসতে শুরু করে। সামরিক মহড়ায় প্রায় ৩০ হাজার সেনা অংশ নিচ্ছেন।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়, এস-৪০০ এয়ার মিসাইল সিস্টেমের দুটি ব্যাটেলিয়ন এবং ১২টি সুখই সু-৩৫ যুদ্ধবিমান বেলারুশে মোতায়েন করা হয়েছে।
ন্যাটো বলছে, স্নায়ু যুদ্ধের সময়ের পর বেলারুশে এটা রাশিয়ার সবচেয়ে বড় সেনা ও অস্ত্র মোতায়েন।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২