ব্যবসা

লোকসান ঠেকাতে ডিজেল-ফার্নেস অয়েলের দাম বাড়াতে চায় বিপিসি

ঢাকা, ২৯ অক্টোবর – জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করতে চায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় লোকসান কমাতে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কথা ভাবছে সংস্থাটি। বিপিসি বলছে, সরকার নির্ধারিত আগের দরে ডিজেল বিক্রি করতে গিয়ে প্রতি লিটারে ১৩-১৪ টাকা লোকসান হচ্ছে। একই সঙ্গে ভারতের বাজারের চেয়ে বাংলাদেশের বাজারে তেলের দাম কম হওয়ায় পাচারের আশঙ্কার কথাও ভাবা হচ্ছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছে বিপিসি। চিঠিতে বিপিসি ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। শুধু তাই নয়, বিপিসি অন্য জ্বালানি তেলের মতো ডিজেল, অকটেন, কেরোসিন ও পেট্রোলের দাম নির্ধারণের ক্ষমতাও চাচ্ছে। লোকসান এবং পাচার রোধে প্রতিমাসে দাম সমন্বয় করতে চায় তারা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের বিকল্প নেই। আগের দামে বিক্রি করতে গিয়ে বিশাল লোকসান হচ্ছে। পৃথিবীতে তেলের দাম বেড়ে গেছে। কয়েক গুণ বেড়েছে। খুব খারাপ অবস্থা।

করোনা মহামারির প্রকোপ কমার সঙ্গে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৮৩ ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বিপিসির পরিচালক (অপারেশন্স ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহদী হাসান বলেন, তিনি মাস আগে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম যখন ৭০ ডলার ছিল, তখন থেকেই আমাদের লোকসান শুরু হয়েছে। দেশে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। তাতে লিটারে ১৩ থেকে ১৪ টাকা লোকসান হচ্ছে। মেহদী হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৭০ ডলার পর্যন্ত হলে দেশে ৬৫ টাকা লিটার ডিজেল বিক্রি করে ‘ব্রেক ইভেনে’ থাকা যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে এর চেয়ে দাম কমলে লাভ থাকে, বাড়লে লোকসান হয়। এ কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ফার্নেস অয়েলের দাম চলতি মাসেই ৫৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৯ টাকা করা হয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিদিন ডিজেল ও ফার্নেস তেল বিপণনে ২০ থেকে ২২ কোটি টাকার মতো লোকসান হচ্ছে। তেলের দাম আরও বাড়লে লোকসানটাও বাড়বে। বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, চাহিদা পূরণে প্রতিবছর ৪০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করতে হয় বাংলাদেশকে। আকটেন আমদানি করা হয় এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টন। প্রায় সমান পরিমাণ পেট্রোল উৎপাদন করা হয় দেশীয় উৎস থেকে। বিপিসি জানিয়েছে, আগে পেট্রোল ও অকটেন বিপণনে তাদের মুনাফা হতো। এখন লোকসান হচ্ছে।

সরকার সর্বশেষ ২০১৬ সালে যখন প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা ঠিক করে দেয়, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ ডলারের আশপাশে। তবে ডিজেলের লোকসানই বেশি ভাবাচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল ব্যবহার হয়, এর ৭৩ শতাংশের বেশি ডিজেল। সড়ক ও নৌপরিবহণ, কৃষির সেচ পাম্প এবং বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ নানা ক্ষেত্রে ডিজেলের ব্যবহার রয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম পুনর্নির্ধারণের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারত ইতোমধ্যে দুইবার বাড়িয়েছে। আমাদের সঙ্গে তারতম্য থাকলে বর্ডার এলাকা থেকে তেল স্মাগল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

২০১৩ সালে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। ২০১৬ সালে এসে দাম কমানোও হয়। ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের সময় প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৬ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৬ সালে লিটারপ্রতি ডিজেল ৬৫, কেরোসিন ৬৫, অকটেন ৮৯ ও পেট্রোলের দাম ৮৬ টাকা করা হয়। গত ২০ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৯৪ দশমিক ৫৯ ডলার। আর বাংলাদেশে লিটারপ্রতি এই ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। বিপিসির হিসাবে তাদের লোকসান হচ্ছে লিটারপ্রতি ১৩ দশমিক ৭৭ টাকা। একইভাবে ফার্নেস অয়েলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৪৮৭ দশমিক ২১ ডলার, দেশে বিক্রি হচ্ছে ৫৯ টাকা, এতে লোকসান হচ্ছে ৫ দশমিক ৭৩ টাকা।

বিপিসি জানায়, গত ২৪ অক্টোবর ভারতে ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৯৯ দশমিক ৪৩ পয়সা, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২৩ টাকা ২৪ পয়সা। সে হিসাবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ডিজেলের দামের ব্যবধান লিটারপ্রতি প্রায় ৫৮ টাকা ২৪ পয়সা। এ কারণে বাংলাদেশের সরকারের ভর্তুকিতে দেওয়া কম দামের ডিজেল ভারতে পাচারের আশঙ্কা দেখছে বিপিসি। বিপিসির এক কর্মকর্তা জানান, এখন ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল ও কেরোসিনের দাম নির্ধারণ করে জ্বালানি বিভাগ। তবে আগে থেকেই জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল ও মেরিন ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করে বিপিসি। তিনি বলেন, একদিকে লোকসান এবং অন্যদিকে পাচারের কথা চিন্তা করে প্রতিমাসে দাম সমন্বয় করা প্রয়োজন।

সূত্র: যুগান্তর
এম ইউ/২৯ অক্টোবর ২০২১

Back to top button