চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে রোগীর জন্য ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ওষুধ মিলছে না

চট্টগ্রাম, ২৯ জুলাই – ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ বা মিউকরমাইকোসিসে (কালো ছত্রাক) আক্রান্ত প্রথম রোগীর সন্ধান মিলেছে চট্টগ্রামে। আক্রান্ত রোগী ৫০ বছর বয়সী ফেরদৌস বেগম পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে আক্রান্ত নারীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা। ওই নারী চারদিন আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই রোগীর ছেলে বেলাল হোসাইন বলেন, চমেক হাসপাতালের ডাক্তাররা অ্যামফোটেরিসিন-বি ইনজেকশনটি মায়ের জন্য দিয়েছেন। আমরা ৪ দিন ধরে ঢাকা চট্টগ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছি, কিন্তু ওষুধটা পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, মেডিকেল থেকে যে ইনজেকশনটি রেফার করেছে সেটি বিকনের, আমরা বিকনের ঢাকা চট্টগ্রাম সব অফিসে যোগাযোগ করেছি।, কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। দিনে ৫ ভায়াল করে ১৪ দিন নাকি দিতে হবে এই ওষুধ। ডাক্তাররা সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলেছেন, একটি অস্ত্রোপচার লাগবে। মায়ের নাক, মুখ ও চোখে এই অস্ত্রোপচার হবে, যাতে পুনরায় নতুন জায়গায় ফাঙ্গাস না ছড়ায়।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ওই রোগীর ছেলে বেলাল হোসাইন বলেন, পাঁচদিন আগে আমি আব্বাকে হারিয়েছি। এখন আমার মা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তার জন্য অ্যামফোটেরিসিন-বি ইনজেকশনটি খুঁজছি। কিন্তু তা পাওয়া যাচ্ছে না। প্লিজ আপনারা এই ওষুধের সন্ধান দিন। যত টাকা লাগে আমরা দেবো। আমার মাকে বাঁচাতে চাই।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, ৫০ বছরের বেশি বয়সের এ রোগী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরে বুধবার আমরা নিশ্চিত হই তিনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত। আমাদের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা চলছে। তার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

জানা যায়, গত মাসের ২৫ জুলাই থেকে জ্বরে আক্রান্ত হন পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব গৃহিণী ফেরদৌস বেগম। চলতি মাসের ৩ তারিখ তিনি কোভিড টেস্টে পজেটিভ হন। ১৫ জুলাই কোভিড নেগেটিভ হলেও তার নানা শারিরীক অসুবিধা দেখা দেয়। পরে স্বজনরা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।

সেখানে চিকিৎসকরা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এই রোগীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আরও অধিকতর পরীক্ষার জন্য ঢাকায় নমুনা পাঠানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস দেশে আগে থেকেই ছিল। গোবরে, আকাশে, বাতাসে ছত্রাকটি আছে। এছাড়া অপরিচ্ছন্ন স্থান থেকেও এটা হতে পারে। খুবই ছোঁয়াচে একটা রোগ এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। এতে আক্রান্ত হলে মৃত্যুহার ৫০ থেকে ৫৪ শতাংশ। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হতে পারেন।

এক্ষেত্রে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। আইসিইউতে এই ওষুধ বেশি ব্যবহার হয়। এই ওষুধ ব্যবহারের ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ক্যান্সার রোগী, কিডনি রোগী ও এইডস রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। করোনার আক্রান্ত রোগীর ওপর স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ বেশি প্রয়োগ করা হয়। তাই করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে বাড়ে সেজন্য ডাক্তারের পরামর্শে থাকতে হবে।

উল্লেখ্য, সর্বপ্রথম গত ৮ মে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ৪৫ বছর বয়সী এক রোগীর শরীরে ছত্রাকটির সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয়। এরপর গত ২৩ মে ৬০ বছর বয়সী আরেকজনের শরীরেও রোগটি পাওয়া যায়।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/২৯ জুলাই ২০২১

Back to top button