ক্রিকেট

জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

হারারে, ২৫ জুলাই – জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। হারারেতে আগে ব্যাটিং করে জিম্বাবুয়ে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান তোলে। জবাবে ৪ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় মাহমুদউল্লাহর দল। এর আগে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতে ২১৫ রান করে জিতেছিল বাংলাদেশ।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় সিরিজ জয়। এর আগে পাঁচটি সিরিজের তিনটি ড্র হয়েছিল। দুইটি জিতেছিল বাংলাদেশ।

২০১৩ সালের পর এবার জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজে স্বাগতিকদের উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। দাপট দেখিয়ে ৩-০ ব্যবধানে জিতে নেয় ওয়ানডে সিরিজও। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুটাও হয়েছিল দুর্দান্ত। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ দেয়। আজকের অঘোষিত ফাইনালে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হলেও শেষ হাসিটা হেসেছে বাংলাদেশ।

স্কোর: বাংলাদেশ ১৯৪/৫, ওভার: ১৯.২

জিম্বাবুয়ে ১৯৩/৫, ওভার: ২০

মহামূল্যবান জুটি গড়ে সাজঘরে সৌম্য

মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৩৬ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়ে জিম্বাবুয়েকে দারুণ জবাব দিচ্ছিলেন সৌম্য। এ সময়ে সৌম্য ফিফটি তুলে নিয়ে ইনিংস বড় করছিলেন। কিন্তু দ্রুত রান তোলার তাড়ায় বাঁহাতি ব্যাটসম্যান উইকেট হারালেন। লুক জংওয়েকে উড়াতে গিয়ে হাওয়ায় ক্যাচ ভাসান। লং অফে ক্যাচ নেন মুসাকান্দা। ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৬৮ রান করে সৌম্য ফেরেন সাজঘরে। ৪৯ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কা হাঁকান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। নতুন ব্যাটসম্যান আফিফ ছক্কায় উড়িয়ে রানের খাতা খুলেন। এরপর ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকেও ছক্কা হাঁকান তিনি। কিন্তু তার ইনিংসটি থেমে যায় ১৪ রানে।

সৌম্যর পঞ্চম ফিফটি

শুরুতে রান পেতে লড়াই করেছেন। থিতু হয়েও বড় শটে টাইমিং মেলাতে পারছিলেন না। ডট বলে চাপ বাড়ছিল। তবে মাঝপথে নিজেকে ফিরে পেয়ে দারুণ ফিফটি তুলে নিয়েছেন সৌম্য সরকার। ৪০ বলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি পেয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ইনিংসটি বড় করে বাংলাদেশকে জেতাতে পারেন কিনা সেটাই দেখার।

এখানেও পিছিয়ে বাংলাদেশ!

৬ ওভারে জিম্বাবুয়ের রান ছিল ৬৩, বাংলাদেশের ৫০। ১০ ওভারে বাংলাদেশের রান ৯০, জিম্বাবুয়ের ছিল ১০১। পাওয়ার প্লে’র পাশাপাশি ইনিংসের অর্ধেকতম ওভারেও বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। শেষ ১০ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ১০৪ রান। পারবে তো বাংলাদেশ?

সাকিবের উইকেট হারাল বাংলাদেশ

লুক জংওয়েকে দুই ছক্কা মেরে বড় কিছুর আশা দেখাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু তৃতীয় ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনলেন। লং অনে ক্যাচ দিয়ে সাকিব ১৩ বলে ২৫ রান করে ফিরলেন। তৃতীয় উইকেটে জুটি বেঁধেছেন মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্য।

শুরুতেই হোঁচট

১৯৪ রানের টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারালো বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারে মুজারাবানি বোলিংয়ে আসেন। এসেই ফেরান নাঈম শেখকে। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মিড অন দিয়ে বল উড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টাইমিংয়ে গড়বড় করে সহজ ক্যাচ দেন।

পাওয়ার প্লে’তে ১৩ রান পিছিয়ে বাংলাদেশ

বৃত্তের সুবিধা কাজে লাগিয়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা পাওয়ার প্লে’তে ৬৩ রান তুলেছিল। বাংলাদেশ পেয়েছে ৫০ রান। এখানেই ১৩ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। তবে দুই দল হারিয়েছে ১টি করে উইকেট।

টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান

ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান করলো জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে মাত্র ৫ উইকেট হারিয়ে করেছে ১৯৩ রান। এর আগে ২০১২ সালে হ্যামিল্টনে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ২ উইকেটে তারা করেছিল ২০০ রান।

হারারেতে আজ ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই মনোভাবে খেলেছে জিম্বাবুয়ে। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে প্রতিপক্ষকে এলোমেলো করে দেওয়ার চিন্তা ছিল শুরু থেকেই। তারা তাদের পরিকল্পনায় সফল। বাংলাদেশের বোলাররা তাদের ঝড়ে এলোমেলো। সব মিলিয়ে ১৪ চার ও ১০ ছক্কা ছিল জিম্বাবুয়ের ইনিংসে। তাতে স্রেফ উড়ে যায় বাংলাদেশ।

তাসকিন চতুর্থ ওভারে ২০ রান দিয়েছিলেন। এরপর তাকে আর বোলিংয়ে আনেননি মাহমুদউল্লাহ। চাকাবার ব্যাটে হ্যাটট্রিক ছক্কা হজম করে নাসুম ১১তম ওভারে দেন ২১ রান। সাইফ উদ্দিন ছিলেন সবচেয়ে বাজে। ১৮তম ওভারে ১৯ রান দেওয়াসহ ৪ ওভারে ৫০ রান দেন ডানহাতি পেসার।

জিম্বাবুয়ের হয়ে শেষটা রাঙান রায়ান বার্ল। ১৫ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৩১ রান। মাঝে চাকাবা ২২ বলে ৬ ছক্কায় করেন ৪৮ রান। সর্বোচ্চ ৫৪ রান করা মাধেভেরে বল খেলেন মাত্র ৩৬টি। ৬টি চার হাঁকান তিনি। বাংলাদেশ বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে জয় পাবে নাকি সিরিজ হাতছাড়া করবে?

মাভেরেকে ফেরালেন সাকিব

১৬তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে সাকিব বাংলাদেশকে চতুর্থ উইকেটের স্বাদ দিলেন। তুলে নিলেন হাফ সেঞ্চুরিয়ান ওয়েসলি মাধভেরের উইকেট। বাঁহাতি স্পিনারকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন ৩৬ বলে ৫৪ রান করা মাধেভেরে। ওই ওভারে সাকিব খরচ করেন মাত্র ৩ রান। পরের ওভারে শরিফুল ৭ রানের বেশি দেননি। কিন্তু ১৮তম ওভারে সাইফ উদ্দিন ১৯ রান দিয়ে জিম্বাবুয়ের রান আবার বাড়িয়ে দেন।

সৌম্যর জোড়া আঘাত, লড়াইয়ে ফিরল বাংলাদেশ

বিপজ্জনক চাকাবাকে ফেরানোর পর সৌম্য সরকার সাজঘরের পথ দেখালেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক সিকান্দার রাজাকে। ডানহাতি পেসারের অফস্টাম্পের বাইরের বল টেনে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়াতে চিয়েছিলেন চাকাবা। কিন্তু সীমানায় নাঈমের দারুণ দক্ষতায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় সাফল্য পায়। চাকাবা ২২ বলে ৪৮ রান করেন ৬ ছক্কায়। ওই ওভারের পঞ্চম বলে রাজাকে বোল্ড করেন সৌম্য।

৩১ বলে মাধেভেরের ফিফটি

সৌম্যর অফস্টাম্পের বাইরের বল কভার দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠাতে চেয়েছিলেন মাধেভেরে। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে বল কিপারের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৪৭ রানে থাকা মাধেভেরের রান পৌঁছে যায় ৫১ রানে। ডানহাতি ব্যাটসম্যান তুলে নেন সিরিজের দ্বিতীয় ফিফটি। মাত্র ৩১ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মাধেভেরে।

চাকাবার ছক্কার হ্যাটট্রিক

নাসুম আহমেদের একই বল। চাকাবার একই শট। তাও আবার একই জায়গা দিয়ে। হাওয়ায় ভাসিয়ে চাকাবা পরপর তিন বল সীমানার বাইরে পাঠিয়েছেন। তাসকিন ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ২০ রান দিয়েছিলেন। ১১তম ওভারে নাসুম দিলেন ২১ রান।

জিম্বাবুয়ের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে এলোমেলো বাংলাদেশ

বাংলাদেশের বোলিং এলোমেলো করে ৫৭ বলে দলীয় শতরানে পৌঁছে যায় জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের অর্ধেকতম ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকদের রান ১০১। ক্রিজে আছেন চাকাবা ও মাধেভেরে। দুই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান প্রবল চাপে রেখেছেন বোলারদের। নিয়মিত বাউন্ডারি তুলে ঝড়ো গতিতে রান বাড়াচ্ছেন তারা।

পাওয়ার প্লে’তে দুর্দান্ত জিম্বাবুয়ে

তাসকিনের চতুর্থ ওভারে ৫ চার মারলেন ওয়েসলি মাধেভেরে। এর আগে শরিফুলকে ১টি করে চার ও ছক্কা উড়ান মারুমানি। তার ব্যাটেই প্রথম ওভারে তাসকিন হজম করেছিলেন বাউন্ডারি। উইকেটের দুই প্রান্ত থেকে দুই ব্যাটসম্যানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে এলোমেলো বাংলাদেশ। নিয়মিত বাউন্ডারি আসায় রান বাড়ছে তরতরিয়ে। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে জিম্বাবুয়ে ১ উইকেট হারিয়ে তোলে ৬৩ রান। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে সাইফ উদ্দিন বোল্ড করে ফেরান মারুমানিকে (২৭)।

তাসকিনের ৬ বলে ৫ চার!

মাধেভেরেকে বল ফেলার জায়গাই পেলেন না তাসকিন আহমেদ। ইনিংসের চতুর্থ ওভার করতে এসে তাসকিন হজম করলেন ৫ চার! বাউন্ডারিগুলি মেরেছেন ওয়েসলি মেধেভেরে। ওভারে ২০ রান দিয়ে জিম্বাবুয়ে রান চূড়ায় নিয়ে গেলেন ডানহাতি পেসার। শর্ট ও লেন্থ বল করেই যাচ্ছিলেন তাসকিন। বলে গতি থাকলেও বৈচিত্র্য ছিল না। ফলে দেখেশুনে খেলতে কোনো সমস্যাই হয়নি মাধেভেরের। কোনো ঝুঁকি না নিয়ে প্রপার ক্রিকেটিং শটে ৫ চার তুলে নিয়েছেন মাধেভেরে।

‘ফাইনাল’ ম্যাচেও ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ

হারারেতে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে চারটায় ম্যাচটি শুরু হয়। প্রথম দুই ম্যাচেও বাংলাদেশ টস হেরে আগে ফিল্ডিং করেছিল।

বাংলাদেশ দলে একটি পরিবর্তন

স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসানকে বসিয়ে নেওয়া হয়েছে স্পিনার নাসুম আহমেদকে। শেষ টি-টোয়েন্টিতে একটির বেশি পরিবর্তন করেননি মাহমুদউল্লাহ।

বাংলাদেশ একাদশ: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), নাঈম শেখ, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, কাজী নুরুল হাসান সোহান, আফিফ হোসেন ধ্রুব, শামীম হোসেন পাটোয়ারি, নাসুম আহমেদ, সাইফউদ্দিন, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।

আগের একাদশ নিয়ে খেলছে জিম্বাবুয়ে

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির একাদশ নিয়েই মাঠে নামছে স্বাগতিকরা। ম্যাচ জেতায় উইনিং কম্বিনেশন ভাঙেনি স্বাগিতকরা।

জিম্বাবুয়ে একাদশ: সিকান্দার রাজা (অধিনায়ক), ওয়েসলি মাধেভেরে, তাদিওয়ানাশে মারুমানি, রেগিস চাকাবা, ডিয়ন মায়ার্স, মিল্টন শুম্বা, রায়ান বার্ল, লুক জংউই, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, টেন্ডাই চাতারা, ব্লেসিং মুজারাবানি।

অঘোষিত ‘ফাইনাল’ বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের

টেস্ট, ওয়ানডের পর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে এসে প্রথম জয়ের দেখা পায় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের জয়রথ থামিয়ে অবাক করে দেয় সিকান্দার রাজার দল। তিন ম্যাচ সিরিজ এখন ১-১ এ সমতায়। ভুল শুধরে ফাইনাল জিততে চায় বাংলাদেশ।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এর আগে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। জিতেছে দুইটি। ড্র হয়েছে তিনটি। হারারেতে কখনও সিরিজ জিততে পারেনি। মাহমুদউল্লাহরা নিশ্চয়ই সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাইবেন না।

সূত্র : রাইজিংবিডি
এম এউ, ২৫ জুলাই

Back to top button