সচেতনতা

মেয়েদের স্তনের সমস্যা

স্তনের সমস্যা নিয়ে যত মহিলা ডাক্তারের শরণাপন্ন হন তার প্রধান কারণ মূলত শুধু ব্যথা। আর এ সমস্যা নিয়ে রোগীরা ডাক্তারকে যে প্রশ্নটি করেন তা হলো, আমার কি ক্যান্সার হয়েছে, আর সেই কারণে কি আমার স্তনব্যথা করছে? এসব ব্যথাকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়
* সাধারণত স্তনব্যথা।
* বিশেষ ধরনের স্তনব্যথা।

সাধারণ স্তনব্যথা : এ ধরনের ব্যথার সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে এবং সেই একই কারণে শরীরের অন্য যে কোন স্থানে ব্যথা হতে পারে। যেমন (১) আঘাতজনিত ব্যথা, (২) ফোঁড়া জাতীয় ইনফেকশন বা প্রদাহ, (৩) নানা ধরনের রোগের সংক্রমণ যেমন যক্ষ্মা, সিফিলিস, (৪) স্তনে দুধ জমে যাওয়া, যা শিশু জন্মের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে সাধারণত হয়ে থাকে। সাধারণ কারণে স্তনব্যথা হলে তা একটু চেষ্টা করলেই যে কোন চিকিৎসক নির্ণয় করতে পারেন এবং সঠিক চিকিৎসায় এ জাতীয় রোগ সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা সম্ভব।
বিশেষ ধরনের ব্যথা : এটা কেবল স্তনের কোন রোগ বা অসামঞ্জস্যের জন্য অনুভূত হয়। ডাক্তারি শাস্ত্রে এ জাতীয় ব্যথাকে ম্যাস্টালজিয়া বলা হয়। স্তনের সমস্যাজনিত যত কারণে মহিলারা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হন তার প্রধান কারণই এই ম্যাস্টালজিয়া।

রোগের কারণ অনেক ক্ষেত্রেই অত্যন্ত জটিল হয়ে থাকে। এ অবস্থার জন্য অনেক সময় স্তনের অস্বাভাবিক অথবা অনিয়মিত বৃদ্ধিকে দায়ী করা যায়, যা মূলত রক্তে হরমোনের অনাকাক্সিক্ষত তারতম্যের কারণে হয়ে থাকে। রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে সাধারণ চিকিৎসকের পক্ষে এই রোগের সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা অসম্ভব এবং সে কারণেই রোগীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন আর অসহায় হয়ে ছুটে বেড়ান এক ডাক্তার থেকে অন্য ডাক্তারের কাছে।

ম্যাস্টালজিয়া সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে (১) চক্রাকার ম্যাস্টালজিয়া ও (২) চক্রহীন ম্যাস্টালজিয়া। চক্রাকার ম্যাস্টালজিয়াতে যে ধরনের ব্যথা অনুভূত হয় তা মাসিকের ঠিক আগে শুরু হয় এবং মাসিক শুরুর পরপই তা বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত দুই স্তনেই ব্যথা হয় এবং জাতীয় সমস্যা ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে স্তনের ওপরের অংশের বহির্ভাগে ব্যথা বেশি অনুভূত হয় এবং তা বগল হয়ে বাহু পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। অনেক সময় একটি স্তনে অন্যটির চেয়ে বেশি ব্যথা হয়। এই ব্যথা আপনাআপনিই চলে যেতে পারে, তবে প্রয়োজনবোধে কিছু চিকিৎসা দিতে হয়।

চক্রহীন ম্যাস্টালজিয়াতে সাধারণত ৪০ উর্ধ মহিলারা আক্রান্ত হন এবং মাসিকের সাথে এর কোন সম্পর্ক নির্ণয় করা যায় না। এই ব্যথা মাসের যে কোন সময় অথবা দুই-তিন মাস পর পর অর্থাৎ এর কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। স্তনের নিম্নাংশে ভেতরের দিকে বেশি ব্যথা হয় এবং চারপাশে খুব একটা ছড়ায় না। যে কোন একটিতে অথবা উভয় স্তনে এ ব্যথা হতে পারে।

বুকের মাংসপেশি, অস্থি অথবা সংযোগস্থলের ব্যথাকেও অনেক সময় রোগীরা স্তনের ব্যথা মনে করে ডাক্তারের কাছে ভুল বর্ণনা দেন। ডাক্তারই কেবল রোগীর বর্ণনা এবং সাধারণ পরীক্ষার মাধ্যমে এই দুই ধরনের ব্যথার পার্থক্য নির্ণয় করতে পারেন, যা প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তর। স্তন ব্যথা ক্যান্সারের কারণে হচ্ছে কি-না তা জানার জন্য চিকিৎসক দুটি বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হবেন (১) ব্যথার স্থান সঠিকভাবে নিরূপণ, (২) স্তনে কোন চাকার অস্তিত্ব নিরূপণ। পরিসংখ্যানে জানা যায়, স্তনে ব্যথার মাত্র ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ২ ভাগের ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে ক্যান্সারকে দায়ী করা হয়। অন্যদিকে যারা স্তনে চাকা এবং একই সাথে ব্যথা নিয়ে আসেন তাদের ১৮ ভাগ ব্যথার জন্য ক্যান্সারই দায়ী।

আরও পড়ুন- যেসব খাবার খেলে দূর হয় অবসাদ

স্তনের ব্যথাকে খুব সহজভাবে নেয়ার কারণ নেই। একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরী এবং একমাত্র তিনিই নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের সঠিক কারণ নির্ণয় করতে পারেন। রোগীর যদি অন্য কোন রোগ না থাকে এবং পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার জাতীয় জটিল রোগের আশঙ্কাকে অমূলক প্রমাণ করা যায় তবে ৮৫ ভাগ মহিলার স্তনে ব্যথা কেবল আশ্বাসের মাধ্যমে অর্থাৎ ‘আপনার কোন খারাপ অসুখ বা ক্যান্সার হয়নি’- এই বলেই দূর করা যায়। বাকি ১৫ ভাগ মহিলার ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ে ওষুধ প্রহণের। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন এবং উপযুক্ত চিকিৎসা নিয়ে নিরাপদে থাকুন।

আডি/ ২২ অক্টোবর

Back to top button