জাতীয়

আ.লীগ নেতারা মানবিক কর্মকাণ্ডে

মুহম্মদ আকবর

ঢাকা, ২৪ জুলাই – করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে কাটল টানা চারটি ঈদ। এবারের ঈদুল আজহাও কেটেছে নানা বিধিনিষেধের মধ্যে। সবার তো বটেই, রাজনীতিকদের জন্য এমন ঈদ আরও বেশি নিরানন্দের। মানুষ নিয়ে যাদের কাজ, করোনা সেই মানুষ থেকেই তাদের দূরে থাকতে বাধ্য করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রায় সবাই এবার ঢাকায় ঈদ করেছেন। নেতৃবৃন্দের ভাষ্য, দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও চিরচেনা মানুষের কাছে যেতে না পারা, কোলাকুলি করতে না পারা, সর্বোপরি জনসাধারণের সঙ্গে মিশতে না পারাটাই তারা বেশি অনুভব করছেন। তাদের ভাষ্য, ঈদে যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন কিন্তু ঈদের সেই উচ্ছ্বাস-আবেগ পাননি তারা।

অবশ্য মানুষের প্রতি কর্তব্য ভুলে যাননি নেতারা। টানা লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের ছিল না ঈদের খুশি। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতারা আগেই বলেছিলেন তারা ঈদে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, সাহায্য সহযোগিতা করবেন। দলটির কেন্দ্রীয় প্রায় সব নেতাই এই ঈদে মানবিক কর্মকা-ে সক্রিয় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহার এবং আওয়ামী লীগের ঈদসামগ্রী মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

এবারের ঈদের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ঈদ-পার্বণে মানুষের মধ্যে যে অনাবিল আনন্দ থাকে সঙ্গত কারণেই এবার তা নেই। ঈদে আমরা যেভাবে মানুষের কাছে যাই, অবলীলায় কথা বলি, এবার তা পারলাম না। সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও একটা পিছুটান থাকে। তবুও দায়িত্ববোধ বিবেচনায় আমাদের পিছুটান নেই। নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মানুষের পাশে থেকে করোনার সংকট মোকাবিলা করাটাকেই কর্তব্য বলে মেনে নিয়েছি। নিজ এলাকায় যেতে না পারলেও ঢাকায় বসে অসহায়-দরিদ্র মানুষের দুঃখ লাঘবের চেষ্টা করেছি। আর অপেক্ষা করছি সুদিনের। করোনার বিদায় ঘটলে আবারও আমরা উৎসব মুখরতায় শামিল হব।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ঈদে স্বজন ও আপনজন তথা জনগণের প্রতি যে আবেগ থাকার কথা তার কোনোটারই কমতি নেই আমাদের, কিন্তু প্রকাশ করার পরিবেশ নেই। করোনার মধ্যেও মানুষের কাছাকাছি গিয়ে ঈদ করেছি। একজন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি, কিন্তু আগের মতো মানুষকে স্পর্শ করে, কাছে ডেকে কথা বলতে পারিনি। তবুও বেঁচে যে আছি এটা কম কিসের! পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারাটাও তো কর্তব্য পালনের মধ্যে পড়ে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ঈদে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে কোলাকুলি করতাম, বড়দের সালাম করতাম, ছোটদের সালাম পেতাম। এবারের ঈদসহ চার ঈদে তো কোলাকুলিও করতে পারছি না। তিনি বলেন, আগে সকাল থেকে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত অসংখ্য নেতাকর্মী, বন্ধু, স্বজনের সঙ্গে দেখা হতো, আড্ডা হতো। নিজের বাড়িতে মনে হতো মেলা। এখন বাড়ি মনে হয় শ্মশান। আগে ঈদ ছিল উৎসব ও আনন্দের। গত চারটি ঈদ ছিল কেবল ধর্ম পালনের। তিনি জানান, তার নিজ এলাকা জয়পুরহাটে ঈদ উদযাপন করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষের মধ্যে খাদ্যসমগ্রী ও সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছেন।

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যে বার্তা দিয়েছেন তা তৃণমূলের নেতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশ পালনে অনেক নেতাকর্মীই সক্রিয় ছিল। প্রধানমন্ত্রীর উপহার ও দলীয় উপহার সুষ্ঠু বণ্টনেও তারা কাজ করেছে।

আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ঈদের আগে থেকেই তার নির্বাচনী এলাকায় (নেত্রকোনা-৩) ছিলেন। দলের পাশাপাশি তিনি এবং তার স্ত্রী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল দম্পতির উদ্যোগেও এলাকাবাসীকে ঈদ উপহার দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি অতীতের মতোই এলাকায় জনসাধারণের সঙ্গে সস্ত্রীক ঈদ করেছি। এখনো মানুষের সঙ্গেই আছি। মতবিনিময় করছি। দেখেছি, মানুষ ঠিকই নতুন জামা পরেছে, কোরবানি দিয়েছে, কোরবানি গোস্ত বিতরণ করেছে। তবুও অতীতের ঈদের তুলনায় তো একটা পার্থক্য থেকেই যায়।

সূত্র: আমাদের সময়
এম ইউ/২৪ জুলাই ২০২১

Back to top button