ইসলাম

জুমআর দিন যে আমল করতে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বনবি

সপ্তাহের সেরা দিন জুমআ। এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর ইবাদত-বন্দেগির জন্য নির্ধারিত দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ একটি আমলের কথা বলেছেন। কী সেই আমল?

জুমআর দিনের বিশেষ আমলটি হলো- তাঁর প্রতি বেশি বেশি দরূদ শরিফ পড়া। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত আউস ইবনে আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের সর্বোত্তম দিনগুলোর একটি হলো জুমআর দিন; এ দিন হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিন তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিন শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে। আর এ দিনই (শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়ার ফলে) সবাই অচেতন হয়ে পড়বে।

সুতরাং এ দিন তোমরা বেশি করে আমার জন্য দরূদ পাঠ কর। কারন, তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হবে।

সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করন, (মৃত্যুর পর) আপনার দেহ শেষ হয়ে যাবে? তখন কীভাবে আমাদের দরূদ পাঠ আপনার কাছে পেশ করা হবে?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘নবিদের দেহ ভক্ষণ করা আল্লাহ তাআলা মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দরুদ শরিফ পাঠ করে আল্লাহ তাআলা তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করবেন।’ (মুসলিম, তিরমিজি)

মনে রাখতে হবে

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ শরিফ পড়ার মর্যাদা এতো বেশি যে, স্বয়ং আল্লাহ তাআলা মানুষকে দরূদ শরিফ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

‘আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবির প্রতি দরূদ (রহমত) পাঠান। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠাও।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৬)

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জুমআর দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ জিবরিল আলাইহিস সালাম এইমাত্র আল্লাহ তাআলার বাণী নিয়ে হাজির হলেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

‘পৃথিবীতে যখন কোনো মুসলমান আপনার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে আমি তার ওপর দশবার রহমত নাজিল করি এবং আমার সব ফেরেশতা তার জন্য দশবার ইস্তেগফার করে।’ (তারগিব)

সুতরাং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরূদ শরিফ পাঠ করা প্রতিটি মুমিন মুসলমানের জন্য আবশ্যক। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণায় এ আমলটি সবার জন্য খুবই জরুরি। হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় বিষয়টি এভাবে ওঠে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার ওপর দরুদ পাঠ করা পুলসিরাত পার হওয়ার সময় আলো হবে। যে ব্যক্তি জুমআর দিন ৮০ বার দরুদ পড়ে তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’

অন্য রেওয়াতে নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমআর দিন আসরের নামাজের পর নিজ স্থান থেকে ওঠার আগে ৮০ বার এই দরুদ শরিফ পাঠ করে-

اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ وَعَلَى آلِهِ وَسَلِّم تَسْلِيْمَا

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আ’লা আলিহি ওয়া সাল্লিমু তাসলিমা।’

তার ৮০ বছরের গোনাহ্ মাফ হবে এবং ৮০ বছর ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে। সুবহানাল্লাহ! (আফজালুস সালাওয়াত)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমআর এ পবিত্র ও ফজিলতপূর্ণ দিনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরূদ পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করে ঘোষিত ফজিলত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এন এইচ, ২৩ জুলাই

Back to top button