মধ্যপ্রাচ্য

তালেবানদের দখলদারিত্বের আন্দোলন থামানোর জন্য আহ্বান জানালেন এরদোগান

আঙ্কারা, ১৯ জুলাই – আফগানিস্তানের তালেবানদের উদ্দেশে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান বলেছেন, দখলদারিত্বের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া তালেবানদের জন্য সঠিক পন্থা নয়। আমরা তুরস্ক থেকে তালেবানদের আহ্বান জানাচ্ছি তাদের এই দখলদারিত্বের আন্দোলন অবশ্যই থামানো উচিত।

তিনি বলেন, বিশ্বকে (তালেবানদের) দেখাতে হবে যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আফগানিস্তানের ভিত্তিতে দেশটিতে শান্তি প্রাধান্য পেয়েছে।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এরদোগান।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, এক মুসলমানের ‍ওপর আরেক মুসলমান যেমন আচরণ করা উচিত তালেবানরা তা মানছে না। নিজেদের ভাইদের জমি জোর করে দখল করা উচিত নয়।

মার্কিন ও ন্যাটো সেনারা আফগানিস্তান থেকে চলে যাওয়ার পর কাবুল বিমানবন্দর পরিচালনা করতে তুরস্ক যে প্রস্তাব দিয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে তালেবান। আফগানিস্তানের ক্ষমতার কাছাকাছি যাওয়া তালেবানরা চায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো তুরস্কও আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাক।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পর তুরস্কের পক্ষ থেকে কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সম্ভাব্য সব দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে এক তুর্কি কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

রয়টার্সের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তালেবানের মতামত জানতে চাইলে দোহাভিত্তিক একজন মুখপাত্র সুহেল শাহীন জানান, ২০ বছর ধরে তুরস্ক ন্যাটোর অংশ ছিল। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে তুরস্কের সেনাদের আফগানিস্তান ছাড়তে হবে।

তিনি আরও বলেন, তুরস্ক একটি ইসলামী দেশ। তুরস্কের সঙ্গে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ভবিষ্যতে যখন আমরা নতুন ইসলামী সরকার গঠন করব তখন তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও ভালো সম্পর্কের প্রত্যাশা করি।

তুরস্ক কি তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে?

এ ব্যাপারে মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ও আনাদোলু নিউজের এশিয়া প্যাসিফিকের প্রধান সরোয়ার আলম বলেন, তুরস্ক তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না। তালেবানও তুরস্কের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না। কারণ তুরস্ক ন্যাটোর অংশ হিসেবে গত বিশ বছর ধরে আফগানিস্তানে আছে। ৫০০ সৈন্য এখনও কাবুলে আছে। তালেবান এই ২০ বছরে একবারও তুরস্কের সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করেনি। আর তুরস্কও একবারও তালেবানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেনি।

ন্যাটো আফগানিস্তানে থাকাকালীনই যে তুরস্ক তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায়নি সেই তুরস্ক এখন একা একা তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াবে কোন যুক্তিতে? আর তালেবানও তুরস্কের বিরুদ্ধে সরাসরি হুমকি দেওয়ার পরিবর্তে পরোক্ষভাবে হুমকি দিয়েছে কারণ তুরস্কের ওখানে অবস্থান ন্যাটোর সদস্য হিসেবে। এমনকি তালেবান কিন্তু তুরস্ককে ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম রাষ্ট্র’ হিসেবে বিবেচনা করে আঙ্কারার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার আগ্রহও প্রকাশ করেছে।

তালেবানের সঙ্গে সমঝোতা চায় আঙ্কারা

তুরস্ক তালেবানের সঙ্গে ব্যাকচ্যানেল বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে।এ বিষয়ে তালেবানের সঙ্গেও সমঝোতায় পৌঁছতে চায় আঙ্কারা। কিন্তু তালেবান এখন বিজয় উল্লাসে মাতোয়ারা। ২০ বছর পরে আবারো ক্ষমতায় বসার স্বপ্নপূরণ হতে চলছে। তাই কারও সঙ্গেই লিয়াজোঁ করতে চাইছে না। এমনকি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও রাখঢাক না করে কাল বলে দিলেন, তালেবান এখন বিজয় উল্লাসে এতোটাই মাতোয়ারা যে পাকিস্তানের সঙ্গেও তালেবানের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কেমন হবে তিনি নিশ্চিত না। তিনি ভবিষ্যতে আফগানিস্তানে একটি গৃহযুদ্ধের আশংকাকেও নাকচ করেননি।

মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক সরোয়ার আলম আরও বলেন, আমার ধারণা, তুরস্ক ও তালেবান একটা সমঝোতায় আসবে। তবে সময় লাগবে। আর যদি সমঝোতায় না আসে তাহলে তুরস্ক কি ওখানে থাকার জন্য তালেবানের বিরুদ্ধে গিয়ে অবস্থান নেবে? এখনই বলা মুশকিল। তবে ওখানে আফগানিস্তানের উত্তর অঞ্চলে তুর্কি বংশোদ্ভূত তাজিক, তুর্কমেন, এবং ওযবেক জনগণ আছে যাদের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক ভালো।

তথ্যসূত্র: যুগান্তর
এস সি/ ১৯ জুলাই

Back to top button