জাতীয়

কামারপল্লিতে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা

নাজমুল ইসলাম ফারুক

ঢাকা, ১৯ জুলাই – চারদিকে টুংটাং শব্দ, দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন, পোড়ানো হচ্ছে লোহার খণ্ড, কেউবা আগুনে পোড়ানো লাল টুকটুকে লোহার খণ্ড হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে। আবার কেউ কয়লা টেনে দিচ্ছে আগুনের ওপর, কেউ হাপর টানছে। কেউবা আবার পুরাতন দা, বটির মরিচা ছাড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত।

একদিন পর কোরবানির ঈদ, আর এই ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত কামারপাড়া। রাজধানীর কামারপাড়ায় যেন কোনো ফুরসত নেই।

রাজধানীর শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, সায়েদাবাদ এলাকার কামারপাড়ায় ঘুরে এ চিত্রই দেখা গেছে।

কামারদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানায়, সারা বছরের মধ্যে একবার এই ঈদে পুরোপুরি ব্যবসার মৌসুম। ঈদের ২/১ মাস আগেই পুরোপুরি প্রস্তুতি শুরু হয় কামারপাড়ায়। তবে এবার প্রস্তুতি থাকলেও বাধ সাধে করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউনের কঠোর বিধি নিষেধ। এ কারণে ১৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছে। তাতে অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো। তবে শেষ মুহূর্তে ব্যবসা খোলা রাখতে পেরে কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন।

শনির আখড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কামারপাড়ায় ১০/১২টি কামারের দোকান। জুয়েল কর্মকার প্রায় ৫ বছর আগে এখানে দোকান দিয়েছেন। এখানে তিনি দা, বটি, ছুরি ও অন্যান্য জিনিসপত্র তৈরি করেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৪ জন কর্মচারী। তিনি ঈদকে সামনে রেখে দুই মাস আগেই দা, বটি, ছুরি তৈরির কাঁচামাল হিসেবে লোহা, কয়লা, ইস্পাতের টুকরা ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি মিলিয়ে দুই থেকে ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের কঠোর লকডাউনে তার দোকান বন্ধ ছিল। তখন হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু ঈদের আগে লকডাউন শিথিল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন বলে জানান।

তিনি বলেন, যদি কাজ না করতে পারতাম, প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতো তাহলে শুধু আমি নই আমার দোকানে যেসব কর্মচারী আছে তাদের জন্য বেশি কষ্ট হতো। তবে এখন চেষ্টা করছি কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে।

এ কথা বলেই তিনি লাল টুকটুকে লোহার খণ্ডটি জ্বলন্ত কয়লা থেকে তুলে প্রক্রিয়াজাত করতে লাগলেন। একটু কাজ শেষ করেই বলতে শুরু করলেন, আমাদের বেশিভাগ মালামাল কাওরান বাজার, কাপ্তান বাজার এলাকায় সরবরাহ করে থাকি। তবে স্থানীয় কেউ দা, ছুড়ি, বটি তৈরি করতে চাইলে অর্ডার নেই।

সায়েদাবাদ-গেন্ডারিয়া রেললাইনের পাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু কামারশালা। এখানের একাধিক কামার আলাপকালে জানান, মঙ্গলবারে তাদের তৈরী পন্যের চাপ কম থাকবে। ওইদিন শুধু স্থানীয়দের কাজ করা হয়।

অর্জুন কর্মকার বলেন, আমাদের এখানে ঈদের আগের দিন কোনো চাপ থাকে না। কারণ, আমরা কয়েকটি বাজারে আমাদের দা, ছুরি, বটি ও অন্যান্য মালামাল আগেই সরবরাহ করি। সোমবার সব এলাকায় মালামাল সরবরাহ করতে হবে। আর ঈদের আগের দিন স্থানীয় লোকজনের কাজ করবো। তাই ব্যস্ততায় আলাপ সংক্ষিপ্ত করেন বলে জানান তিনি।

শিপন কর্মকার বলেন, ঈদের আগে লকডাউন শিথিল করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। লকডাউন শিথিল না হলে আমাদের অনেক ক্ষতি হতো।

সূত্র: রাইজিংবিডি
এম ইউ/১৯ জুলাই ২০২১

 

Back to top button