ঢাবির ৮৭.৪% শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী
ঢাকা, ১৯ জুলাই – করোনার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র অবস্থান রয়েছে। অনলাইন পরীক্ষার পক্ষে ৫২.৭ শতাংশ মত দিলেও ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী তাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮৭.৪ শতাংশ অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী। এসব তথ্য উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সংসদের সোশ্যাল সায়েন্স টিমের এক জরিপে। রোববার জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
চলতি বছরের ৩০ মে থেকে অনলাইনে এই জরিপ চালানো হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব অনুষদ ও ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন বিভাগ থেকে তিন হাজার ৭৩০ শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাদের মধ্যে ৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ ছাত্র, ৪৩ দশমিক ৪ ছাত্রী এবং ১ দশমিক ১ শতাংশ ছাত্র না ছাত্রী, সেটি উল্লেখ করেননি। জরিপে অংশ নেওয়া মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ২৬ দশমিক ৯ ও কলা অনুষদের ২৬ শতাংশ।
জরিপে উঠে এসেছে, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ গ্রাম, ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ ছোট শহর, ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ শহর এবং ২০ দশমিক ৩ শতাংশ মহানগর এলাকায় অবস্থান করছে।
জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহী করতে ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ, অনাগ্রহী ৪৫ শতাংশ এবং বাকিরা সিদ্ধান্ত জানাননি। আর ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী। এ ছাড়া ওপেন বুক (২১.১%), এমসিকিউ (১৯.৭%), সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (১৯.৪%), বড় প্রশ্নোত্তর (৫.৪%) পদ্ধতি এবং লাইভ ভিডিও ((৪.২%) পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
অনলাইন পরীক্ষায় অনিচ্ছার কারণ ইন্টারনেটের দুর্বল নেটওয়ার্ক সংযোগ :চূড়ান্ত পরীক্ষা অনলাইনে দিতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ ভালো নেটওয়ার্কে যুক্ত নেই, ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ বিদ্যুতের সমস্যায় রয়েছে, বাড়িতে পরীক্ষা দেওয়ার পরিবেশ নেই ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশের, প্রয়োজনীয় ডিভাইস নেই ২২ দশমিক ২ শতাংশের, ডিভাইস বা ডাটা কেনার সামর্থ্য নেই ১৬ দশমিক ৬ শতাংশের, পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশের, অনলাইন পরীক্ষার অভিজ্ঞতা নেই ৪০ দশমিক ৬ শতাংশের এবং প্রস্তুতি নেই ২৭ দশমিক ৪ শতাংশের।
অনলাইন ক্লাসে অসন্তুষ্ট ৪৬.৪% শিক্ষার্থী :জরিপের ফল অনুযায়ী, অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী অসন্তুষ্ট ও ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী খুব বেশি অসন্তুষ্ট। অন্যদিকে, ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী মোটামুটি সন্তুষ্ট এবং মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী সন্তুষ্ট।\হজরিপে উঠে এসেছে, অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে সিলেবাস শেষ হয়েছে ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর এবং শেষ হয়নি ৫৩ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর।
অনলাইন পরীক্ষার দক্ষতা ২১% শিক্ষার্থীর :জরিপে আরও উঠে এসেছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইনে পরীক্ষায় বসার পর্যাপ্ত দক্ষতা আছে ১২ দশমিক ৭ শতাংশের, ২৯ দশমিক ৮ শতাংশের মোটামুটি, ২৪ শতাংশের কিছুটা, ১২ দশমিক ৪ শতাংশ তাদের দক্ষতার ব্যাপারে সন্দিহান এবং ২১ শতাংশ শিক্ষার্থীর দক্ষতাই নেই। এর আগে অনলাইনে অনুষ্ঠিত মিড-টার্ম বা সমমান পরীক্ষায় বিভাগ ও ইনস্টিটিউট থেকে ৬২ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী সঠিক দিকনির্দেশনা পেয়েছেন, ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ কোনোরকম দিকনির্দেশনা পাননি এবং বাকি ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী এ ব্যাপারে কিছু জানেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মঞ্জুরুল করিম এবং কমিউনিকেশন ডিসঅর্ডারস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন তাওহিদা জাহান জরিপ কার্যক্রম তত্ত্বাবধায়ন করেন। এটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সংসদের সোশ্যাল সায়েন্স টিমের টিম ম্যানেজার মো. তানবীরুল ইসলাম, কো-অর্ডিনেটর সুমাইয়া ইমতিয়াজ, মো. আতিকুজ্জামান, জাওয়াদ সামস, রাগীব আনজুম, মো. ওমর ফারুক ও সুমাইয়া আহমেদ। জরিপটি বিশ্নেষণ ও পুনর্বিন্যাসে সহযোগিতা করেছেন সংগঠনের নাসরিন জেবিন, সাইফুল্লাহ সাদেক, শাহরিন ফারাহ খান ও ইসতিয়াক উদ্দিন।
সূত্র : সমকাল
এন এইচ, ১৯ জুলাই