দর্শনার্থীদের কাছে বিশ্বজুড়ে সবচাইতে জনপ্রিয় ৭ চিড়িয়াখানা
ছুটির দিনে বা কোন অবসরে একঘেয়ে, বিরক্তিকর সময় কাটানোর চেয়ে পৃথিবীর বুকে অন্য প্রাণীর জীবন বৈচিত্র্য দেখতে যাওয়া মন্দ কিছু নয়। পৃথিবীর বড় শহরগুলোর দিকে তাকালে প্রায় সবকটিতেই চিড়িয়াখানার সন্ধান পাওয়া যাবে। চিড়িয়াখানায় সাধারণত বন্য পশু-পাখিদের খাঁচায় আটকে রাখা হয়। তবে বর্তমানে এমন অনেক চিড়িয়াখানা চালু রয়েছে যেখানে পশুর খাঁচায় আটকে না রেখে বেশ বড় একটা সীমানার মধ্যে তাদের রাখা হয়। বনের পশুকে বন থেকে তুলে এনে চিড়িয়াখানায় রাখা নিয়ে বিতর্কও রয়েছে বহু। যাই হোক, আসুন জেনে নিই পৃথিবীর দর্শনার্থীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় সাতটি চিড়িয়াখানা সম্পর্কে।
সান দিয়েগো চিড়িয়াখানা
পৃথিবীর সর্বোবৃহৎ এবং দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রিয় এই চিড়িয়াখানাটি আমেরিকার কালেফর্নিয়ায় অবস্থিত। সান দিয়েগো চিড়িয়াখানার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে চারদিক দিয়ে এটি ঘেরা এবং সুরক্ষিত। আয়তন প্রায় ১০০ একর এর মতো। এই চিড়িয়াখানায় ৩৭০০ এর অধিক বিরল প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণী আছে এবং ৬৫০ প্রজাতির বিপন্ন প্রাণী আছে। চিড়িয়াখানার পাশাপাশি একটি পান্ডা প্রজনন কেন্দ্রও আছে এখানে। এই চিড়িয়াখানার পাশেই ১৮০০ একর এলাকা জুড়ে একটি সাফারী পার্ক আছে। সেখানে বিশ্বব্যাপি বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য সান দিয়েগো ইনিস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সান দিয়েগো চিড়িয়াখানাটি ১৯১১ সালে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়।
সিঙ্গাপুর চিড়িয়াখানাঃ
চিড়িয়াখানাটির আদি নাম সিঙ্গাপুর জুলজিক্যাল গার্ডেন হলেও সিঙ্গাপুরবাসীদের কাছে ‘মান্দাই জু’ নামে পরিচিত। ৬৯ একর এলাকাজুড়ে অবস্থিত চিড়িয়াখানাটি সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বন্য এলাকা ‘সেন্ট্রাল ক্যাচমেন্ট এরিয়া’তে পড়েছে। সরকারের অনুমতিক্রমে ৯ মিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজেটে নির্মিত এ চিড়িয়াখানাটি ১৯৭৩ সালের ২৭ জুন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।চিড়িয়াখানার পাশাপাশি এখানে প্রাণীদের জন্য প্রজনন খামারও আছে।
চেস্টার চিড়িয়াখানাঃ
১৯০৩ সালের পূর্ব পর্যন্ত এই চিড়িয়াখানাটি শিশু পার্ক ছিলো।১৯৩১ সালে জর্জ মার্টাশেড এই শিশু পার্কটিকে চিড়িয়াখানায় পরিণত করেন এবং চিড়িয়াখানাটি সকলের জন্য উন্মুত্ত করে দেন।এই চিড়িয়াখানার আয়তন ১১০ একর এবং এই চিড়িয়াখানায় প্রায় ৮০০০ এরও বেশি প্রাণী আছে।
আরও পড়ুন: মেয়েদের একা বেড়ানোয় রোমাঞ্চের খোঁজ দিচ্ছে অনলাইন পর্যটন সংস্থা
টারঙ্গা চিড়িয়াখানাঃ
অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে প্রাণী সমৃদ্ধ এবং জনপ্রিয় চিড়িয়াখানা হচ্ছে এই টারঙ্গয়া চিড়িয়াখানা। এই চিড়িয়াখানায় প্রায় ২৬০০ এর অধিক প্রাণী এবং ৩৪০ টিরও বেশি প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণ করা হয়। ১৯১৬ সালে ৫২ একর জমির উপর এই চিড়িয়াখানাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে অবস্থিত। ২০০০ সালে প্রথম পাচটি এশিয়ান হাতির প্রজনন দিয়ে এখানে প্রজনন কেন্দ্রের সুচনা হয়।
জাতীয় চিড়িয়াখানা দক্ষিণ আফ্রিকাঃ
আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় চিড়িয়াখানা হচ্ছে এই জাতীয় চিড়িয়াখানাটি। ২১০ একর জমির উপর এই চিড়িয়াখানাটি অবস্থিত। ১৮৯৯ সালে ২০৯ প্রজাতির ৩১১৭ টি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ২০২ প্রজাতির ১৩৫৮ টি পাখি,১৯০ প্রজাতির ৩৮৭১ মাছ, ৪ প্রজাতির ৩৮৮ টি অমেরুদন্ডী প্রাণী, ৯৩ প্রজাতির ৩০৯ টি সরিসৃপ এবং ৭ প্রজাতির ৪৪ টি উভয়চর প্রাণী নিয়ে এই চিড়িয়াখানাটি চালু হয়।” ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন” নামের প্রতিষ্ঠানটি প্রাণীগুলোকে সংরক্ষণ করে।
ব্রঙ্কস চিড়িয়াখানা
আমেরিকার জনপ্রিয় চিড়িয়াখানার মধ্যে ব্রঙ্কস চিড়িয়াখানাও অন্যতম। ১৮৯৯ সালে আমেরিকার নিউ ইয়ার্ক সিটিতে এই চিড়িয়াখানাটি চালু হয়। ২৬৫ একর জমি নিয়ে এই চিড়িয়াখানাটি অবস্থিত। এইখানে প্রায় ৪ হাজারেরও বেশি প্রাণী সংরক্ষিত আছে। বণ্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য এখানে চারটি সংগঠন আছে।
বার্লিন গার্ডেন
বার্লিন জুলজিক্যাল গার্ডেন ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় চিড়িয়াখানা। এটি বার্লিন শহরে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় ও সেরা জুলজিক্যাল গার্ডেনের একটি। ১৮৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের প্রাচীনতম এ চিড়িয়াখানাটি শহরের টিয়ার গার্ডেনে প্রায় ৮৪ একর জমির ওপর অবস্থিত। এখানে দেড় হাজার প্রজাতির প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার প্রাণী রয়েছে। সারা বিশ্বে পরিচিত প্রাণীদের মধ্যে এখানে সংগৃহীত বিরাট আকৃতির পাণ্ডা, পোলার ভাল্লুক, বাও বাও উল্লেখযোগ্য। চিড়িয়াখানাটিতে ১৯১৩ সালে একটি অ্যাকুরিয়াম চালু করা হয়। এই অ্যাকুরিয়ামটি তৎকালীন সময়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই চিড়িয়াখানায় স্তন্যপায়ী ১৭১ প্রজাতির ১০৫৯টি, ৩০৬ প্রজাতির ১৯৪৬টি এবং ৫৭৩ প্রজাতির ৮৪৫৪টি মাছ রয়েছে। যা পৃথিবীর মধ্যে প্রাণী সংগ্রহের তালিকায় উল্লেখযোগ্য।
এন এইচ, ২২ অক্টোবর