ব্যক্তিত্ব

মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষরা যে ১৩টি কাজ করেন না

আপনার মানসিক শক্তি প্রায়ই আপনি কী করেন তার মধ্য দিয়ে নয় বরং আপনি কী করেন না তার মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয়। মানসিক শক্তি অর্জনের তিনটি দিক রয়েছে- নিজের চিন্তা, আচরণ এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণ।

মানসিকভাবে শক্তিশালী এই ১৩টি কাজ করেন না :

১. নিজের জন্য দুঃখবোধ করে সময়ের অপচয় করেন না
এটা আত্মবিনাশী। এতে জীবনটাকে পুরোপুরি উপভোগ করা সম্ভব হয় না। সময়ের অপচয় হয়। নেতিবাচক আবেগ সৃষ্টি করে এবং সম্পর্কে সমস্যা তৈরি করে।

এ থেকে মুক্তির চাবিকাঠি হলো, দুনিয়ার ভালো দিকগুলো খোঁজা। এতে আপনি নিজের যা কিছু আছে তার মূল্যায়ন করতে শিখবেন। এর লক্ষ্যটি হলো নিজের দুর্দশার জন্য দুঃখবোধকে কৃতজ্ঞতা বোধের দ্বারা বিতাড়িত করা।

২. নিজের হাল ছেড়ে দেন না
লোকে সাধারণত তখনই নিজের হাল ছেড়ে দেন যখন তারা শারীরিক ও আবেগগতভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন। সুতরাং আপনার নিজেকেই নিজের জন্য উঠে দাঁড়াতে হবে এবং নিজের জন্য একটা সীমা টেনে দিতে হবে। যদি আপনার তৎপরতাগুলোর নিয়ন্ত্রণ থাকে অন্য কারো হাতে তাহলে তারাই আপনার সাফল্য-ব্যর্থতাও নির্ধারণ করে দেবে।

৩. তারা পরিবর্তনে লজ্জা পান না
পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পাঁচটি ধাপ আছে। প্রাক-চিন্তা, চিন্তা, প্রস্তুতি, তৎপরতা এবং তা বজায় রাখা। প্রতিটি ধাপই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবর্তন অনেক সময় আতঙ্কের কারণ হতে পারে। কিন্তু পরিবর্তনের অনাগ্রহের ফলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন। যতই দেরি করবেন ততই তা কঠিন হয়ে পড়বে। এবং অন্যরা আপনাকে ছাড়িয়ে যাবে।

৪. নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না এমন কোনো বিষয়ে তারা মনোযোগ দেন না
সবকিছু নিয়ন্ত্রণে থাকলে খুবই নিরাপদ বোধ হয়। কিন্তু আমরা চাইলেই সব সময় যেকোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারব এমনটা ভাবা সমস্যাই বটে। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা উদ্বেগের প্রতি সংবেদনশীলতার লক্ষণ।

এর চেয়ে বরং নিজের উদ্বেগ সামলানোয় মনোযোগ দিন এবং নিজের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করাই ভালো। এতে সুখ বাড়বে, মানসিক চাপ কমবে, সম্পর্কে উন্নতি হবে, নতুন সুযোগ তৈরি হবে এবং বেশি সাফল্য অর্জিত হবে।

৫. তারা সকলকেই খুশি করতে চান না
আমরা প্রায়ই অন্যরা আমাদের ব্যাপারে কী ভাবেন তার ওপর ভিত্তি করেই নিজেদের মূল্যায়ন করে থাকি। যা মূলত মানসিক দুর্বলতারই লক্ষণ। কিন্তু অনবরত অন্যদেরকে খুশি করার মধ্যে চারটি দিক রয়েছে। এটা সময়ের অপচয়। যারা অন্যের মতামতকে বেশি গুরুত্ব দেন তাদেরকে সহজেই নষ্ট করা যায়। অন্যের জন্য রাগ বা হতাশ বোধ করাতে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু আপনি সকলকে খুশি করতে পারবেন না।

অন্যকে খুশি করার মানসিকতা ত্যাগ করতে পারলে আপনি মানসিকভাবে আরো শক্তিশালী এবং আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী হবেন।

৬. তারা হিসেব-নিকেশ করে ঝুঁকি নিতে ভয় পান না
লোকে সাধারণত জ্ঞানের অভাবে ঝুঁকি নিতে ভয় পান। ঝুঁকির পরিমাণ পরিমাপ করার জ্ঞানের অভাবেই লোকের ভয় বেড়ে যায়। কোনো বিষয়ের ঝুঁকি বিশ্লেষণে নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করুন :

– এই ঝুঁকির সম্ভাব্য ক্ষতি কী?
– সম্ভাব্য উপকারিতা কী?
– নিজের লক্ষ্য অর্জনে এটা কীভাবে আমাকে সহায়তা করবে?
– এর বিকল্পগুলো কী?
– ভালো হলে তা কতটা ভালো ফল বয়ে আনতে পারে?
– সবচেয়ে বাজে পরিণতি কী হতে পারে, এবং কীভাবে তা মোকাবিলা করা যায়?
– খারাপ হলে তা কতটা খারাপ ফল হতে পারে?
– আগামী পাঁচ বছরে এই সিদ্ধান্ত কী ফল বয়ে আনতে পারে?

৭. তারা অতীতে বাস করেন না
অতীতে যা ঘটে গেছে তা কখনোই বদলানো সম্ভব নয়। অতীতে বাস করাটাও আত্মবিনাশী। যা আপনাকে বর্তমানকে উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত করবে এবং ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পনা করায় বাধা দেবে। এতে কোনো সমস্যারই সমাধান হবে না এবং আপনি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হবেন।

৮. একই ভুল বারবার করেন না
মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা নিজেদের ভুলগুলোর দায় গ্রহণ করেন। আর ভবিষ্যতে সে ধরনের ভুল এড়িয়ে চলার জন্য একটি সুচিন্তিত, লিখিত পরিকল্পনা তৈরি করেন।

৯. অন্যদের সাফল্য দেখে ক্ষুব্ধ হন না
অন্যদের সাফল্য দেখে ক্ষুব্ধ হলে তা আপনার সাফল্যের জন্য সহায়ক না হয়ে বরং নিজের লক্ষ্যগুলো অর্জনে আপনার মনোযোগ নষ্ট করবে।

এমনকি আপনি যদি সফলও হন তাতেও আপনি সুখী হতে পারবেন না। যদি আপনি সব সময় অন্যদের নিয়ে মাথা ঘামান। এতে এমনকি আপনি নিজের সম্ভাবনাটুকুও দেখতে পাবেন না। নিজের মূল্যবোধ এবং সম্পর্কগুলোও হারাবেন।

১০. প্রথমবার ব্যর্থ হলেই হাল ছেড়ে দেন না
সাফল্য এত সহজেই ধরা দেয় না। আর ব্যর্থতা অতিক্রম করেই আপনাকে সব সময় সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ব্যর্থতাকে অগ্রহণযোগ্য ভাবা এবং ব্যর্থ হলেই নিজেকে অযোগ্য ভাবাটা মানসিক দুর্বলতার লক্ষণ। এমনকি একবার ব্যর্থ হওয়ার পুনরায় ফিরে দাঁড়ালে আপনি বরং আরো শক্তিশালী হবেন।

১১. তারা একাকী থাকতে ভয় পান না
নিজের চিন্তা নিয়ে একাকী পড়ে থাকলে আপনার কোনো শক্তিশালী অভিজ্ঞতা হতে পারে এবং লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হতে পারে। মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হলে প্রতিদিনের ব্যস্ততার বাইরেও নিজের জন্য একাকী সময় বের করে নিতে হবে এবং উন্নতিতে মনোযোগ দিতে হবে।

একাকিত্বের উপকারিতাগুলো হলো :
– অফিসে একাকিত্ব উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।
– এটা আপনার সহানুভূতি বাড়াবে।
– একাকিত্ব সৃজনশীলতা উস্কে দেয়।
– মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।
– এর মাধ্যমে মানসিক শক্তি পুনরুদ্ধার হয়।

১২. তারা মনে করেন না যে দুনিয়াটা তাদের কাছে ঋণী
নিজের ব্যর্থতা বা স্বল্প সাফল্যের কারণে রাগান্বিত হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু সত্যটা হলো আপনাতেই কোনো সাফল্য ধরা দেয় না। তা অর্জন করতে হয়।

আন্যরা আপনার চেয়ে বেশি সফল হলে এমনটা ভাববেন না যে আপনার সঙ্গে অবিচার করা হচ্ছে। জীবনে সাফল্যের চাবিকাঠি হলো, নিজের প্রচেষ্টাগুলোতে মনোযোগ নিবদ্ধ করা, সমালোচনা গ্রহণ করা, নিজের ভুলগুলো স্বীকার করা। আর কখনোই অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করবেন না; এতে শুধু আপনার হতাশাই বাড়বে।

১৩. তারা তাৎক্ষণিক ফল আশা করেন না
আপনি যদি নিজের সম্ভাবনার চুঁড়ায় পৌঁছাতে চান তাহলে বাস্তবোচিত প্রত্যাশা করুন। আর মনে রাখবেন সাফল্য রাতারাতি ধরা দেয় না।

মানসিকভাবে দুর্বল লোকরা প্রায়ই অধৈর্য হয়ে পড়েন। তারা প্রায়ই নিজেদের সক্ষমতা সম্পর্কে অতিমূল্যায়ন করে বসেন। এবং কোনো টেকসই পরিবর্তন ঘটতে যে দীর্ঘ সময় লাগে তা বুঝতে পারেন না। ফলে তারা তাৎক্ষণিক ফল লাভের আশা করেন।

সুতরাং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনে বিরামহীনভাবে কাজ করে যেতে হবে। পথ চলতে গিয়ে ব্যর্থতা আসবেই। কিন্তু চূড়ান্তভাবে সাফল্য অর্জন করতে চাইলে ব্যর্থতায় ভেঙে পড়লে চলবে না।

এম এন / ২২ অক্টোবর

Back to top button