জানা-অজানা

যেসব কারণে আত্মহত্যার ভয়াবহ পথ বেছে নেয় একজন মানুষ

সুখ-দুঃখের মিশেলেই মানুষের জীবন। প্রতিনিয়ত আমরা যুদ্ধ করে চলেছি পরিবেশের সাথে, পরিস্থিতির সাথে। এভাবে বেঁচে থাকাটার মাঝেই রয়েছে সুখ। বারবার হার মানলেও মানুষ বারবারই উঠে দাঁড়ায়, কারণ জীবনে যে অমূল্য! অথচ কখনো কখনো দেখা যায়, অমূল্য এই জীবনটাকেই বিসর্জন দিয়ে ফেলে মানুষ। আত্মহত্যা করে ফেলা এসব মানুষের চিন্তাভাবনা কেমন হয়? কি সেই পরিস্থিতি যার ফলে তারা নিজের জীবন শেষ করে দিতে পারেন?

ডাক্তার অ্যালেক্স লিকারম্যানের মতে, যারা আত্মহত্যা করে, তারা আসলে মৃত্যু চায় না, তারা চায় জীবনযাপন বন্ধ করে দিতে। এমন যদি উপায় থাকতো, যে জীবনযাপন করতে হবে না আবার মৃত্যুও হবে না, তবে সেসব মানুষ নিঃসন্দেহে এই মধ্যম পথটি বেছে নিতেন। যাদের প্রিয় কোনো মানুষ আত্মহত্যা করেছেন, তাদের মনে এই ক্ষত রয়ে যায় দিনের পর দিন। তাদের মনে একটাই প্রশ্ন থাকে, “কেন?”! এই কেন’র উত্তর আসলে তেমন জটিল নয়। আত্মহত্যা করার পেছনে মূলত থাকে ৬ টি ভয়ংকর কারণ। এর যে কোনো একটি বা বেশ কয়েকটি কারণ একত্র হয়ে একজন মানুষকে আত্মহননের পথে ঠেলে দিতে সক্ষম।

১) তারা বিমর্ষ
মাঝে মাঝে আমাদের সবার মাঝেই প্রচন্ড বিষণ্ণতা ভর করে। মনে হয় আমাদের জীবন শূন্য। এ কারনেই মূলত সবচাইতে বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। জীবনের কোনো এক কারণে তারা হতাশ এবং বিষণ্ণ। বেঁচে থাকার দায়ভার তারা আর বহন করতে পারে না, ফলে বেছে নেয় আত্মহননের পথ। তাদের মাথায় প্রায়ই এমন ভাবনা আসে, “সবাই আমাকে ছাড়াই সুখী হবে”, “আমার জন্যেই সে সুখি হতে পারছে না”, “আমি সবার জন্য বোঝা”। অথচ তাদের এমনটা ভাবার কোনো কারণই নেই। বিষণ্ণতা অনেক সময়ে সারিয়ে তোলা সম্ভব হয় না। এ কারণে কাছের মানুষদের মাঝে এর লক্ষণ আমাদের চিনে রাখতে হবে এবং তাদের ওপরে রাখতে হবে বিশেষ নজর।

২) তাদের কোনো মানসিক সমস্যা আছে
সিজোফ্রেনিয়া জাতীয় মানসিক সমস্যা থাকলে অনেক সময়ে আত্মহনন করতে ইচ্ছে করে মানুষের। তাদের মনে হয় কেউ তাদেরকে আত্মহত্যা করতে বলছে, কেউ তাকে অত্যাচার করে চলেছে সর্বক্ষণ। মাথার ভেতরে অন্য কারও কথা এভাবে শুনতে থাকলে তার আত্মহত্যা করার ইচ্ছে আসতে পারে। আর সাধারণত এসব কথার অমান্য করার উপায় থাকে না এসব মানুষের। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সিজোফ্রেনিয়ার রোগীরা হয়ে থাকেন খুব সাধারণ ধাঁচের, জীবনে সফলতার পেছনে ছুটতে থাকা মানুষেরা যারা অনেক সময়ে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের মাথার ভেতরে শুনতে পাওয়া এসব কথার ক্ষমতা কমে না আসা পর্যন্ত তাদের আত্মহননের সম্ভাবনা থেকে যায়।

৩) তারা অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ
অনেক সময়ে মাদক গ্রহণের ফলে খুব বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ফেলে মানুষ। কিন্তু ঘোর কেটে গেলে এবং শান্ত হয়ে এলে তারা নিজেদের এই কাজে লজ্জিত হন। তবে এর পরেও তারা আবার আত্মহত্যার চেষ্টা করবেন কি করবেন না, তা নিশ্চিত হয়ে বলা যায় না। এর পর আবার তারা মাদক নিলে আবারও আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারেন। অথবা জীবনেও আর চেষ্টা না করতে পারেন। এ কারণে সবার আগে প্রয়োজন তাদের মাদকাসক্তি দূর করা।

৪) তাদের সাহায্য দরকার কিন্তু তারা তা পাচ্ছে না
তাদের জীবনে রয়েছে খুব বড় একটা সমস্যা, কিন্তু এই সমস্যার সমাধান তারা একা করতে পারছে না। অন্য কারও কাছে সাহায্য চাইবার ভাষাও তাদের জানা নেই। এমন অবস্থায় মৃত্যু না চাইলেও আত্মহত্যা করতে চান অনেকে।

আরও পড়ুন:  যেভাবে শুরু হয়েছিলো ভালোবাসা দিবস

তারা সাধারণত এমন কোনো উপায় মৃত্যু বেছে নেন যাতে মৃত্যু না হবারও সম্ভাবনা আছে। সাধারণত তাদেরকে কষ্ট দিয়েছে এমন কোনো মানুষকে ভয় পাওয়ানোর জন্য এই কাজ করা হয়। এর খুব স্বাভাবিক উদাহরন হলো একটা টিনেজার মেয়ে তার প্রেমিকের ওপরে রাগ করে এক বোতল ওষুধ খেয়ে ফেলেছে। সে আসলে অন্যদেরকে ভয় দেখানোর জন্য কাজটা করেছে কিন্তু এতে যে তার জীবন শেষ হয়ে যাবে তা সে নিজেও আশা করেনি।

৫) তারা দার্শনিক কোনো কারণে মরতে চায়
একজন মানুষ যদি জানে তার এমন কোনো অসুস্থতা আছে যার ফলে সে অনেক কষ্ট পেয়ে মারা যাবে শীঘ্রই, তবে সে ঠাণ্ডা মাথাতেই আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে। তাদের কোনো মানসিক বা আবেগজনিত সমস্যা নেই। তারা নিজের জীবনটাকে প্রলম্বিত করতে অনিচ্ছুক মাত্র। এক্ষেত্রে যা করা যায় তা হলো, তাদের এই ছোট জীবনটাকেও আনন্দে পরিপূর্ণ করে রাখার চেষ্টা করতে পারেন তার প্রিয়জনেরা। তাহলে তার আত্মহত্যার ইচ্ছে কমে যেতে পারে।

৬) তারা কোনো একটা ভুল করে ফেলেছে
জীবনে মানুষ অনেক ভুল করে থাকে, বিশেষ করে কাঁচা বয়সে। এ সময়ে ভুলের মাশুল গুনতে অনেকেরই জীবনের ওপর বিতৃষ্ণা এসে পড়ে এবং তারা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। এর একমাত্র সমাধান হলো জীবনের ব্যাপারে পিতামাতার দেওয়া শিক্ষা।

Back to top button