সিলেট

অক্টোবরে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে ৬ষ্ট বিশ্ব সিলেট সম্মেলন

সিলেট, ১৬ জুলাই-  করোনার আতংক আর চিকিৎসার জন্য হাহাকারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সময়। আসছে ঈদও। আনন্দ-বেদনার দ্বৈরথে চলে যাচ্ছে জীবন। এরই মধ্যে আপনাদের জানাচ্ছি, পৃথিবীর নানাপ্রান্তের সিলেটিদের আবেগ ও ভালোবাসা জড়ানো ‘বিশ্ব সিলেট সম্মেলন’-এর ৬ষ্ঠ আসর বসতে যাচ্ছে আগামী অক্টোবর মাসে।

গত ১১ জুলাই ‘দেশে বিদেশে’ টিভির আয়োজনে ৬ষ্ঠ বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের প্রস্তুতি পর্বের এক আলোচনায় আয়োজকরা এ তথ্য জানান।

সম্মেলনের এবারের আহ্বায়ক ড. আহমেদ মুশতাক রাজা চৌধুরী এবং সদস্য সচিব প্রফেসর ডা. জিয়া উদ্দিন আহমদ জানান, ভার্চুয়াল এ আয়োজন অক্টোবর মাসের প্রতি শনিবার (২,৯,১৬ ও ২৩ তারিখ) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সিলেটে আরেকটি পর্ব আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তারা।
সম্মেলনের বিভিন্ন পর্ব এবং বিস্তারিত কর্মসূচি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন। প্রতিটি কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক অংশগ্রহণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে সিলেট সম্মেলনের টিম কাজ করে যাচ্ছে বলে ‘ঠিকানা’কে জানিয়েছেন তারা। প্রফেসর ডা. জিয়া উদ্দিন জানান, সিলেট সম্মেলন কোনো প্রথাগত গোষ্ঠীভিত্তিক আয়োজন নয়। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সিলেটকে নিয়ে অনেক সংগঠন নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করছেন। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সবাইকে নিয়ে একসাথে বৃহত্তর সিলেটের উন্নয়নে কাজ করা।

ড. আহমেদ মুশতাক রাজা চৌধুরী বলেন, সিলেট সম্মেলনের চূড়ান্ত পর্বটি সাজানো হবে সবার মতামতের ভিত্তিতে। সিলেট সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেমন- মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস চর্চা, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্য, নগর উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়গুলোকে সামনে রেখে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
প্রস্তুতি সম্পর্কে অবগত করতে এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশ্ব সিলেট সম্মেলন আয়োজনের অন্যতম সংগঠক সিএম তোফায়েল সামী, রাশেদা কে চৌধুরী, ড. আহমেদ মুশতাকুর রাজা চৌধুরী, কর্নেল (অব.) আব্দুস সালাম (বীর প্রতীক), রুহুল হক চৌধুরী, নজরুল ইসলাম বাসন, ডা. দীপ্তা দে চৌধুরী এবং দেবব্রত দে তমাল।
সিএম তোফায়েল সামী সিলেট এবং সিলেটিদের নাড়ির টান সম্পর্কে আলোকপাত করে বলেন, সিলেট সম্মেলন আমাদেরকে শেকড়ে ফেরার তাগিদ দেয়। সিলেটের জন্য কিছু করার তাড়না দেয়। তিনি করিমগঞ্জ-হাইলাকান্দিতে নিজের জীবনের নানা স্মৃতিচারণ করে বলেন, এরা সবাই সিলেটেরই অংশ। আমাদের উচিত হবে, আগামীতে ঐসব এলাকার জন্য কিছু করার চেষ্টা করা।
ডা. দীপ্তা দে চৌধুরী বলেন, আমরা কলকাতা থেকে গোটা ভারতে সিলেটের সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। অনেকেই, বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্ম, সিলেটের সংস্কৃতির মধুরতম রেশ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের হৃদয়ে সিলেটের সুর ও সংগীত এমনভাবে গেঁথে রয়েছে যে, তা কখনো ভুলে যাওয়ার মতো নয়। আমরা তাই ভারতের বিভিন্ন শহরে শ্রীহট্ট সম্মিলনীর মাধ্যমে সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি।
কর্নেল (অব.) আব্দুস সালাম বলেন, সিলেটিদের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করতে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সিলেটের বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত স্থানে সিলেট সম্মেলনের আয়োজন করার চিন্তাভাবনা এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সেটা পুরোপুরি নির্ভর করবে করোনা পরিস্থিতির ওপর। তিনি সিলেট সম্মেলনের তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ এবং সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য একটি ইন্সটিটিউট স্থাপনের পরামর্শ দেন।
এছাড়াও এমএ সালাম সম্মেলনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া যোগাযোগকে সুদৃঢ় করতে একটি সাংগঠনিক অবকাঠামো এবং কার্যালয় স্থাপনের বিষয়টি তুলে ধরেন।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সিলেট সম্মেলন আমার কাছে একটি নেশার মতো হয়ে গেছে। মনে হয় এটাকেই নাড়ির টান বলে। আমাদের এই যোগসূত্রতা ধরে রাখতে হবে।
বিপ্লবী লীলা নাগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরো বলেন, আমরা সিলেট সম্মেলন থেকে এ ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তিতে তারা লীলা নাগের উপর একটি আলোচনার আয়োজন করবে।
নজরুল ইসলাম বাসন জানান, এবারের বিশ্ব সিলেট সম্মেলনকে ফলপ্রসু করে তুলতে ইংল্যান্ডে বসবাসরত প্রতিষ্ঠিত এবং প্রতিভাবান সিলেটিদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। ব্রিটেনের সফল ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যে একমত পোষণ করে সিলেটের উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন।
তিনি আরো জানান, সিলেটের তাঁত ও মণিপুরী হস্তশিল্পের প্রসারে সিলেট সম্মেলন ভূমিকা রাখতে পারে।
বাসন আরো বলেন, সিলেটের শহর এবং গ্রামে মেয়েদের একটি বড় অংশ লেখাপড়া শেষ করে কেউ চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে, আবার কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি দেয়ার অপেক্ষায় আছে। এসব প্রতিভাবান মেয়েদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ এবং এদের নিয়ে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা সিলেট সম্মেলন করতে পারে। দেবব্রত দে তমাল কানাডায় বিশ্ব সিলেট সম্মেলন আয়োজনের নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, আত্মার ডাকে সিলেটিরা অভিন্ন। পদ-পদবী কিংবা লাভ-ক্ষতির চিন্তা না করে ‘আমরা সিলেটি’ এই পরিচয়কে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। রুহুল হক চৌধুরী অস্ট্রেলিয়ায় সিলেটি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ করার কথা জানিয়ে বলেন, এখানেও সিলেটকে নিয়ে কাজ করার উদ্যেগী ভূমিকা নিতে হবে। কারণ অস্ট্রেলিয়াতেও অনেক প্রতিভাবান ও প্রতিষ্ঠিত সিলেটি আছেন। তাদের একটি প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে হবে।
পাঠক, আপাতত এ-ই ‘ষষ্ঠ বিশ্ব সিলেট সম্মেলন’-এর অগ্রগতি। আপনারা সাথে থাকুন, সিলেটকে হৃদয়ে রাখুন। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবেÑ এ সংক্রান্ত সব খবর যথাসময়ে আপনাদের জানানো।

সূত্রঃ ঠিকানা

আর আই

Back to top button