টাঙ্গাইল

কঠোর লকডাউনের ১৩ দিনে টাঙ্গাইলে ১১৮ জনের মৃত্যু

টাঙ্গাইল, ১৪ জুলাই – কঠোর লকডাউনেও টাঙ্গাইল জেলায় করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের ১৩ দিনের মধ্যে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে মোট ১১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬৫ জন ও উপসর্গ নিয়ে ৫৩ জন মারা যান। একই সময়ে ৭ হাজার ৭৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় তিন হাজার ২০৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের গড় হার ৪১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল থেকে দেয়া প্রতিদিনের তালিকা থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬ জন ও উপসর্গ নিয়ে ৩ জন মারা গেছেন। এদিন জেলায় নতুন করে ৫৯২টি নমুনা পরীক্ষায় ২০৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

সূত্রমতে, ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের ১৩তম দিনে ৭৯১ জনের নমুনার মধ্যে ২৭২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এদিন করোনা ও উপসর্গে ৯ জনের মৃত্যু হয়।

১২তম দিনে ৫৩১ নমুনা পরীক্ষায় ২০৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার শতকরা ২৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। এদিন করোনা ও উপসর্গে ৯ জন মারা যান।

১১তম দিনে ৫২১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৭৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। করোনা ও উপসর্গে ৬ জনের মৃত্যু হয়।

১০ম দিনে ৪৪৩ নমুনা পরীক্ষায় ১৮৬ জনের করোনা পজেটিভ হয়। শনাক্তের হার শতকরা ৪২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এদিন করোনা ও উপসর্গে ৭ জন মারা যান।

৯ম দিনে ৭১৭ নমুনায় ২৯০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এদিন ৪ জনের মৃত্যু হয়।

৮ম দিনে ৬৪৬ নমুনায় ২৫৪ জনের করোনা পজেটিভ আসে। শনাক্তের হার শতকরা ৩৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। এদিন করোনা ও উপসর্গে ১১ জনের মৃত্যু হয়।

৭ম দিনে ৫৪২টি নমুনা পরীক্ষায় ২৭৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৫১ দশমিক ১০ শতাংশ। এদিন করোনা ও উপসর্গে ৬ জনের মৃত্যু হয়।

৬ষ্ঠ দিনে ৭১৩ নমুনায় ৪১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৫৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। এদিন করোনা ও উপসর্গে ৭ জনের মৃত্যু হয়।

পঞ্চম দিনে ৫৮১ নমুনায় ২২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এদিন করোনা ও উপসর্গে ৭ জনের মৃত্যু হয়।

চতুর্থ দিনে ৪৮১ নমুনা পরীক্ষায় ১৯৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এদিন করোনা ও উপসর্গে ১১ জন মারা যান।

তৃতীয় দিনে ৩২ নমুনা পরীক্ষায় ১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ। এদিন করোনা ও উপসর্গে ৯ জনের মৃত্যু হয়।

দ্বিতীয় দিনে ৫২৬ নমুনায় ২৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার শতকরা ৪৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এদিন করোনা ও উপসর্গে মারা যান ৭ জন।

এছাড়া কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন ৬২৮ নমুনা পরীক্ষায় ২৫৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ৯২ শতাংশ। এদিন করোনা ও উপসর্গে ১৬ জনের মৃত্যু হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজ নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, শিক্ষক, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও এনজিওকর্মীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। তাদের স্বতঃস্ফূর্ত সচেতনতায় জনসাধারণের মাঝে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা নিশ্চিত করা হলে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সাদিকুর রহমান জানান, করোনা ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের নাম-ঠিকানা পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসকরা জানতে পেরেছেন, করোনা আক্রান্তদের অধিকাংশই গ্রাম থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। এছাড়া কঠোর লকডাউনের আগে জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি কুমুদিনী হাসপাতালে করোনা রোগী ছিল না বললেই চলে। কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি কুমুদিনী হাসপাতালেও রেকর্ড সংখ্যক করোনা রোগী ভর্তি রয়েছে।

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান জানান, কঠোর লকডাউনেও টাঙ্গাইলে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। লকডাউন বাস্তবায়নে বৃহত্তর স্বার্থে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষ মাস্ক না পড়ে, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অবাধে চলাচল করছে। ফলে গ্রামের মানুষ বেশি সংখ্যায় করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। গ্রাম এলাকার মানুষ এখনই সচেতন না হলে আগামি দিনে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এম এউ, ১৪ জুলাই

Back to top button