কুলসুম আমাকে ভাইয়া ডাকতো: চঞ্চল চৌধুরী
ঢাকা, ১৪ জুলাই – রক্তের সম্পর্কের কেউ না হয়েও কিছু মানুষ আপনের চেয়েও যেন আপন হয়ে রয়। কুলসুম নামের এক গৃহপরিচারিকার মৃত্যুতে জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর হৃদয় ভারী হয়ে উঠেছে। সেই দুঃখ কিছুটা প্রকাশ করলেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে।
চঞ্চল চৌধুরী বলেন, কুলসুম জানতো, আমি গরম গরম পরোটা আর ডিম ভাজি পছন্দ করি, কুলসুম জানতো আমি চায়ে কতটুকু চিনি খাই, কুলসুম জানতো আমার পানির গ্লাসে কতটুকু ঠাণ্ডা পানি মেশাতে হবে…..
কুলসুম আমাকে ভাইয়া ডাকতো…..
অসম্ভব মায়া আর ভালোবাসা ছিলো আমার প্রতি।
কুলসুম আমার আপন কেউ ছিলো না…কিন্তু সে ছিলো আপনের চেয়ে আপন।
কুলসুম,অভিনেত্রী শাহনাজ খুশীর বাসায় দীর্ঘদিন ওর কাজের সাহায্যকারী হিসেবে ছিল।
খুশী কুলসুমকে নিজের বোনের মতই আদর করতো….
একটু স্বচ্ছল জীবন যাপনের আশায় কয়েক বছর সৌদি আরবে কাজ করে দুই সপ্তাহ আগেই দেশে ফিরেছিল।
যে কয় বছর কুলসুম সৌদিতে ছিল,নিয়মিত খুশীর সাথে যোগাযোগ রাখতো,আমার পরিবারের খোঁজও নিত খুশীর কাছ থেকে।
কতটা দ্বায়িত্বশীল,সহজ সরল ভালো মানুষ হলে, এরকম প্রিয় মানুষ গুলোকে মনে রাখা যায়,কুলসুম তার প্রমাণ।
বেশ কয়েক বছর আগে,দেশে থাকতে, কুলসুম অসুস্থতার কারণে খুশীর বাসায় কয়েকদিন আসতে পারেনি।
খুশীর সাথে আমিও ওর বাসায় ওকে দেখতে গিয়েছিলাম।
কুলসুম তখন বিশ্বাস করতে পারেনি যে,আমি ওকে দেখতে ওর বাসায় যাবো…
দেশে ফিরে আসার পরও সে খুশীর বাসায় দেখা করতে এসেছিল সবার সাথে….সামনের মাস থেকে আবার খুশীর বাসায় কাজ শুরু করবে এমনটাই কথা ছিল….
কিন্তু আজ সকালে খুশী আমাকে ফোন করে জানালো,
কুলসুম নেই……
আমাদের কাউকে না জানিয়েই একটা ছোট্ট অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল কুলসুম।অপারেশনের পর আর জ্ঞান ফেরেনি কুলসুমের…
আজ সকালে সে পরপারে চলে গেল।
অনেক আপনজনের মৃত্যুও আমাকে এতটা ব্যথিত করেনি।
সংবাদটা শোনার পর শুটিং এর কাজে বের হয়ে পড়ি…
গাড়িতে বসে বার বার কুলসুম এর মুখখানা ভেসে উঠছিল চোখের সামনে,কানে বাঁজছিল ওর মুখের ‘ভাইয়া’ ডাক।
মনের অজান্তেই বার বার চোখ ভিঁজে যাচ্ছে…..
লাইট…ক্যামেরা… এ্যাকশান…কোনো কিছুই আমাকে কুলসুমের মুখটা ভুলতে দিচ্ছে না…
কুলসুমের জন্য আমরা কিছুই করতে পারলাম না…
খুব গোপনে, ভয়ে কুলসুম আমাদের কাছ থেকে পালিয়ে গেল চিরতরে।
আমি শুটিং সেটে বসে স্পস্ট দেখতে পাচ্ছি দিব্য, সৌম্য,বৃন্দাবনদা আর খুশীর চোখের জল…..
তাহলে কী কুলসুমকে আমরা বেশি ভালোবাসতাম, নাকি কুলসুম আমাদেরকে????
ক্ষমা চাই কুলসুম….
তোমাদেরকে আমরা কখনোই এতটা ভালোবাসতে পারি না…!!
যতটা তোমরা আমাদের বাসো…..!!
এবার তুমি শান্তিতে ঘুমাও কুলসুম।
এন এইচ, ১৪ জুলাই