ঈদে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল হচ্ছে, আজ প্রজ্ঞাপন
ঢাকা, ১৩ জুলাই – ঈদ উপলক্ষে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ ৮ দিনের জন্য শিথিল হচ্ছে। খুলে দেওয়া হচ্ছে দোকানপাট ও শপিং মল। চলবে গণপরিবহনও। আজ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। চলমান লকডাউন ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে। আর ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত শিথিল হচ্ছে বিধিবিষেধ।
তবে ২৩ জুলাই থেকে আবারও কঠোর লকডাউন দেওয়া হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১৪ জুলাই শেষ হচ্ছে দুই সপ্তাহের চলমান বিধিনিষেধ। ঈদ সামনে রেখে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় বিধিনিষেধের শর্ত শিথিল করা হচ্ছে। ১৫ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ২২ জুলাই মধ্য রাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিলের আদেশ কার্যকর থাকবে। ঈদের পর আবারও দুই সপ্তাহের লকডাউনে যাবে গোটা দেশ। ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ সামাল দিয়ে এবং যাত্রা নির্বিঘ্ন করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সরকারের একজন কর্মকর্তা জানান, এরইমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুরহাট বসানো, শপিংমল খুলে দেওয়া এবং সিটি করপোরেশন ও জেলার ভেতর বাস চলার অনুমতিও দেওয়া হতে পারে। দূরপাল্লার বাস ও যাত্রীবাহী লঞ্চ-ট্রেন বন্ধ রাখা হবে কিনা সেটা আলোচনা হচ্ছে। তবে, প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পরই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। আর ঈদের ছুটিতে কর্মস্থল ত্যাগ না করতে নির্দেশনা দেওয়া হবে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে পরিস্থিতির উপর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঈদের আগে কী কী বিধিনিষেধ শিথিল হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্দেশনার আলোকে প্রজ্ঞাপন জারি করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কাজ করছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির পশুর হাট বসানো, স্বল্প পরিসরে গণপরিবহন চালু এবং ঈদের জন্য দোকানপাট ও মার্কেট খোলার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে জনসাধারণের চলাচলে কিছু বিধিনিষেধ থাকবে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সামনে ঈদুল আজহা। তাই বসবে পশুর হাট। মানুষ কোরবানির পশু কিনতে বাজারে যাবে। কোন কৌশলে মানুষকে লকডাউনের মধ্যে কোরবানির ঈদ উদযাপন করানো যায় এবং কমসংখ্যক মানুষকে দিয়ে কোরবানির পশু কেনানো যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের তৃতীয় সপ্তাহ খুবই জরুরি। গত দুই সপ্তাহের লকডাউনের অর্জন নির্ভর করছে তৃতীয় সপ্তাহের কার্যক্রমের ওপর। সব দিক দিয়েই ১৪ তারিখের পর থেকে পরবর্তী সাত দিন অর্থাৎ ২১ জুলাই ঈদের দিন পর্যন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকার এবার কঠিন বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে ভেবেচিন্তে পরবর্তী সিদ্ধান্ত দিতে চায় বলে রবিবার জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মন্ত্রণালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গ্রামের গরিব মানুষরা সারা বছরে পশু পালন করে কোরবানির এ সময়টার জন্য। সেদিকটি বিবেচনায় নিয়ে চলমান লকডাউন শিথিল করার কথা ভাবতে পারে। এদিকে লকডাউনের মেয়াদ যে ১৪ জুলাইয়ের পরও বাড়ছে তার ইঙ্গিত দিয়ে বন্ধ ঘোষণা করা সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত ভার্চুয়ালি পদ্ধতিতে পরিচালনার নির্দেশনা দিয়ে রবিবার ১১ জুলাই দুপুরে আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত ৫ এপ্রিল থেকে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। ধাপে ধাপে এর মেয়াদ বাড়িয়ে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। করোনার সংক্রমণ বাড়লে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় লকডাউন দেওয়া হয়। ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এর পরও সংক্রমণ না কমায় ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন কার্যকর করছে সরকার। ১৪ জুলাই সেই লকডাউনের মেয়াদ শেষ হবে।
দোকান খোলার বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ঈদের আগে দোকানপাট খোলা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি। ফলে আমরা সরকারি প্রজ্ঞাপনের জন্য অপেক্ষা করছি। প্রজ্ঞাপনে যে নির্দেশনা দেওয়া হবে, আমরা সেভাবে চলব।’
হেলাল উদ্দিন জানান, অনেক দোকানমালিকই ঈদে আর দোকান খুলতে চাচ্ছেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দোকান খুললেই কর্মচারীদের ঈদ বোনাস দিতে হবে, বকেয়া দোকান ভাড়াও পরিশোধ করতে হবে।
এদিকে, ঈদের সময় নৌযান চালু রাখতে সরকারের কাছে আবেদন করেছে লঞ্চমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন। এই সংগঠনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ‘গত ঈদে মানুষের ঘরে ফেরা কোনোভাবেই আটকাতে পারেনি সরকার। তাই সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুন্দরভাবে বাড়ি ফিরতে পারে, সেজন্য আমরা লঞ্চ চালুর দাবি জানিয়েছি।’
সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ
এম এউ, ১৩ জুলাই