জাতীয়

পাটকল শ্রমিকদের পাওনা পুরোপুরি পরিশোধ নভেম্বরে: পাটমন্ত্রী

ঢাকা, ২১ অক্টোবর- বন্ধ করে দেওয়া রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলোর শ্রমিকদের পাওনা নভেম্বরের মধ্যে পরিশোধ হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।

অর্থ মন্ত্রণালয় বন্ধ ২৬টি পাটকলের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৮টি পাটকলের শ্রমিকদের পাওনা ১৭৯০ কোটি ৫২ লাখ টাকা ছাড় করেছে বলেও তিনি জানান।

বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দস্তগীর গাজী বলেন, এই টাকা শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর ও সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে।

“আশা করা যাচ্ছে, এ প্রক্রিয়ায় আগামী মাসের (নভেম্বর) মধ্যে সকল মিলের শ্রমিকদের পাওনা সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ করা সম্ভব হবে।”

ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। এসব পাটকলের প্রায় ২৫ হাজার কর্মচারীর চাকরি ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে অবসায়নের সিদ্ধান্ত সরকারের তরফ থেকে জানানো হয় তার আগেই।

এসব পাটকলের ২৪ হাজার ৬০৯ জন স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা বাবদ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৩ সালের পর থেকে অবসরে যাওয়া ১০ হাজার ১০৭ জন শ্রমিকের গ্রাচ্যুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ছুটি নগদায়ন বাবদ পাওনা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকাসহ মোট প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যায়ক্রমে তিন অর্থবছরে পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়েছিল শুরুতে।

শ্রমিকদের ভবিষ্যত আর্থিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকের পাওনার ৫০ শতাংশ নগদে এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করার নির্দেশনা ও প্রদান করেন।

আরও পড়ুন: পাঁচ বছরে ২৬ হাজার ৯০২টি সড়ক দুর্ঘটনা, ৩৭ হাজার ১৭০ জন নিহত

গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার করিম জুট মিলসের ১ হাজার ৭৫৯ জন শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ কার্যক্রম শুরু করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

শ্রম আইন, ২০০৬ এর বিধান অনুযায়ী ৬০ দিনের নোটিশের পরিবর্তে কাজ করা ছাড়াই পাটকল শ্রমিকদের জুলাই এবং অগাস্ট মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন-বিজেএমসি।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা এককালীন পরিশোধের নিমিত্ত যাবতীয় পাওনাদির হিসাব চূড়ান্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিজেএমসি। অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নিরীক্ষা করে ধাপে ধাপে বিভিন্ন মিলের শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে প্রয়োজনীয় অর্থছাড় করছে।

পাটমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের হাফিজ জুট মিল ও খুলনার ইস্টার্ন জুট মিলের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হবে।

বন্ধঘোষিত পাটকলসমূহের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের পাশাপাশি সার্বিকভাবে পাটখাতকে পুনরুজ্জীবিত ও পাটকলগুলোকে উপযুক্ত মডেলে আধুনিকায়ন ও পুনরায় চালু করতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি কমিটি হয়েছে।

গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, কমিটি দুটির সুপারিশের আলোকে বন্ধঘোষিত পাটকলগুলো নতুন আঙ্গিকে আবার চালু হলে আগে অভিজ্ঞ শ্রমিকরা আবার কাজ করার সুযোগ পাবেন বলে আশা করা যায়।

পলিথিন ও প্লাস্টিকের অপরিণামদর্শী ব্যবহারের কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান সচেতনতার দরুন প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে পাটের কদর ও চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় বলছে, বিজেএমসির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করা এবং করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সত্ত্বেও পাট ও পাটজাত পণ্য হতে রপ্তানি আয়ে গত অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি (৮ দশমিক ১০ শতাংশ) অর্জিত হয়েছে।

পাট খাত ৮৮২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্হানে ওঠে এসেছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে পূর্ববর্তী অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে অর্জিত প্রবৃদ্ধির হার ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।

এ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য হতে রফতানি আয়ের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, চলতি পাট মৌসুমে কাঁচা পাটের গড় দর ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি।

সূত্র : বিডিনিউজ
এন এইচ, ২১ অক্টোবর

Back to top button