জাতীয়

’মেগা প্রজেক্ট থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের ছোট প্রজেক্ট-সবজায়গায় দুর্নীতি চলছে’: সালেহ প্রিন্স

ঢাকা, ১০ জুলাই- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ‘একটি প্রবাদ আছে- ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দিব কোথা’। বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, দলীয়করণ, আত্মীয়করণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এই প্রবাদটি বর্তমানে বাংলাদেশের বেলায় অতি প্রযোজ্য। মেগা প্রজেক্ট থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের ছোট প্রজেক্ট-সবজায়গায় দুর্নীতি চলছে।

তিনি বলেন, ‘এ যেন লুটপাটের স্বর্গরাজ্য। এমনকি ভূমিহীন গরিব মানুষের জন্য নির্মিত ঘর যা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, সেই ঘর নিয়েও যে সীমাহীন দুর্নীতি ও দলীয়করণ হয়েছে তা গণমাধ্যমের কল্যাণে জাতি জানতে পেরেছে। সেই ঘরগুলো হস্তান্তরের আগেই বা হস্তান্তরের দু’তিন মাস যেতে না যেতেই যেভাবে ধসে পড়তে দেখা গেল তাতেই প্রমাণিত হয়-দেশে উন্নয়নের নামে হরিলুট চলছে।’

শনিবার (১০ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রিন্স বলেন, ‘গরিব মানুষের জন্য রাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বরাদ্দ, যেমন-কাবিখা, কাবিটা, কর্মসৃজন প্রকল্প, বিধবা-দুস্থ-বয়স্ক-প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়েও সরকারি দলের লোকেরা লুটপাট ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। যারা গরিব মানুষের হক নিয়ে দুর্নীতি করে তাদের দ্বারা আর যাই হোক জনকল্যাণ হতে পারে না। ভূমিহীন গরিব-অসহায় মানুষকে ঘর প্রদান নিয়ে যদি দুর্নীতি, লুটপাটের এই চিত্র হয়, তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে কী ধরনের দুর্নীতি ও লুটপাট চলছে তা সহজেই অনুমেয়। সরকারের আপাদমস্তক এখন দুর্নীতিগ্রস্ত।’

তিনি বলেন, সরকারঘোষিত ‘মুজিব বর্ষে’ প্রধানমন্ত্রীর উপহার উল্লেখ করে গৃহহীন, ভূমিহীন, গরিব ও অসহায় মানুষকে দেয়ার জন্য যে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, তা শুরু থেকেই অনিয়ম ও দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ ছিল। গরিব মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বরাদ্দ তালিকায় নাম ওঠানো হয়েছে। জায়গা-জমি-বাড়ি-ঘরের মালিক এমনকি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের নাম অর্থের বিনিময়ে বরাদ্দের তালিকায় তোলা হয়েছে।

অনেক গরিব মানুষ মাথা গোজার একটু ঠাঁই পাওয়ার আশায় পালিত গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, আসবাবপত্রসহ শেষ সম্বল বিক্রি করে সেই অর্থ ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হাতে তুলে দেয়ার সংবাদও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি আওয়ামী সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার, আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের উপজেলা-ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কোটা নির্ধারণ রেখে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সরকারি বরাদ্দের পুরো টাকা কাজে ব্যয় না করে আত্মসাতের মাধ্যমে প্রয়োজন মতো রড, সিমেন্ট না দিয়ে বালি-মাটি এবং পুরনো ইট দিয়ে ঘর নির্মাণ করার ফলে হস্তান্তরের আগেই সেগুলো ধসে পড়ছে। স্থানীয় প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের অনুগত এবং বরাদ্দ কমিটি, ঠিকাদার, সাপ্লাইয়ার সকলেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী। তাই ভূমিহীন ও গরিবের ঘর নিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট, জালিয়াতি ও প্রতারণা তারাই করেছে।

প্রিন্স বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি গরিব ও ভূমিহীন মানুষের ঘর নিয়ে যারা মহাদুর্নীতি, লুটপাট ও চাঁদাবাজি করেছে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত গরিব ও ভূমিহীনদের ঘর পুনঃনির্মাণ করে পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অর্ধ শতাধিক শ্রমিক নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহতের ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। রূপগঞ্জে যেন লাশের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডে অঙ্গার হওয়া নিরীহ শ্রমিকদের এই করুণ পরিণতিতে সমগ্র জাতি হতবাক ও বিমূঢ় হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, গতকাল জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এর নেতৃত্বে শ্রমিক দলের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খোঁজ-খবর নেন এবং সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এই অগ্নিকাণ্ডের পর সেজান জুস ফ্যাক্টরির মালিক-কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক ভূমিকায় বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ফ্যাক্টরির মালিক মো. আবুল হাসেম আওয়ামী লীগ নেতা বলেই কী প্রশাসন এখন পর্যন্ত মালিক-কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, অবহেলা ও উদাসীনতাকে আমলে নিচ্ছে না? কিংবা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হচ্ছে না। এই অবহেলা ও উদাসীনতার জন্য দায়ী মালিক-কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে বিচার এবং নিহত ও আহতদের পরিবারকে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানান বিএনপির এই নেতা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যসূত্র: জাগো নিউজ
এস সি/ ১০ জুলাই

Back to top button