যে কারণে মেসির সঙ্গে নতুন চুক্তিতে যাচ্ছে না বার্সা
যে কোনোভাবেই হোক লিওনেল মেসিকে ছাড়তে রাজি নয় বার্সেলোনা। মেসিও অভিমান ভুলে প্রিয় ক্লাবের ছায়াতেই থাকতে সম্মত। সম্প্রতি স্প্যানিশ গণমাধ্যম এল ট্রানজিস্টরকে এমনটাই জানিয়েছেন বার্সা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা।
এরপরও নতুন চুক্তিতে যেতে পারছে না দুই পক্ষ। চুক্তির মেয়াদ শেষে মেসি ফ্রি এজেন্ড হয়ে গেছেন সেই কবে! এখনও নতুন চুক্তির বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
যদিও বার্সা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা এর জন্য চলমান কোপা আমেরিকার ওপর দায় চাপিয়েছেন। সবাইকে রিল্যাক্স থাকতে বলেছেন।
তবে জানা গেছে, এই চুক্তির দেরি হওয়ার কারণ ভিন্ন কিছু। ব্রাজিলে না হয়ে মেসির বর্তমান অবস্থান কাতালানে থাকলেও চুক্তিতে যেত না বার্সা।
তবে কেন এই নাটক? কেন এই গড়িমসি?
জানা গেছে, এর জন্য দায়ী ক্লাবটির সাবেক সভাপতি জোসেফ মারিয়া বার্তোমেউ, যার কারণে বার্সেলোনা ছাড়তে চেয়েছিলেন মেসি।
বিভিন্ন ঝামেলা পাকিয়ে আর ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বার্সেলোনাকে বিশাল অংকের ঋণের সাগরে ডুবিয়ে গেছেন তিনি।
তাই চাইলেও মেসির সঙ্গে নতুন চুক্তিতে যেতে পারছে না বার্সা। একই কারণে মেম্ফিস ডিপাই, সের্হিও আগুয়েরো, এরিক গার্সিয়া ও এমারসনকে দলে টানার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েও এখন লা লিগায় নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে নিতে পারছে না বার্সা।
ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের নিয়মানুযায়ী, একটি ক্লাবের আয়ের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতনের পেছনে ব্যয় করা সম্ভব। সে অনুযায়ী বার্সেলোনা এ মৌসুমে খেলোয়াড় ও ক্লাবের স্টাফদের পেছনে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ইউরো ব্যয় করতে পারবে।
আর মেসির সঙ্গে নতুনভাবে চুক্তিবদ্ধ হলে এই অংক অনেকগুণ বেড়ে যাবে। কিন্তু এই করোনায় অতো আয় এখন নেই বার্সার।
গত মৌসুমের চুক্তি অনুযায়ী, মেসির জন্য বছরে ১০ কোটি বা ১০০ মিলিয়নের বেশি ব্যয় করত বার্সেলোনা। মেসিকে এখন নতুন চুক্তিতে নিতে গেলে তার বেতনের চার গুণ আয়ের পথ খুঁজে নিতে হবে বার্সেলোনাকে। কিন্তু বার্সার যে আর্থিক দৈন্যদশা চলছে তাতে সেই আয় করা কল্পনাতীত।
স্প্যানিশ গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, মেম্ফিস, আগুয়েরো, গার্সিয়া ও এমারসনকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে নিজেদের বর্তমান বেতনের হিসাব থেকে ২০ কোটি ইউরো কমিয়ে আনতে হবে। সেটাই পারছে না বার্সা। আর মেসির বেলায় তো মাথায় হাত।
তাহলে এমন শাখের করাতে পড়ে কোথায় যাবে কাতালান ক্লাবটি! কি পরিকল্পনা নেবেন লাপোর্তা!
সে প্রশ্নে জানা গেছে, বর্তমানে দলটিতে বেশি বেতনে যে কজন আছেন তাদের অন্য ক্লাবে বিক্রি করে দিতে চায় বার্সা। এ থেকে যে অর্থ বাঁচবে তা দিয়েই সমস্যা সমাধানে যাবে ক্লাবটি।
স্প্যানিশ গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতোমধ্যে এই পন্থা অবলম্বন করা শুরু করে দিয়েছে বার্সা। লেফটব্যাক জুনিয়র ফিরপোকে ১ কোটি ৫০ লাখ ইউরোতে লিডসের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে তারা। এমোর্টাইজেশন খরচ বাদ দিয়ে এ দলবদলে ৯.২ মিলিয়ন ইউরো আয় করছে তারা। কনরাড ডে লা ফুয়েন্তে ও তোদিবোকে যথাক্রমে মার্শেই ও নিসের কাছে বিক্রি করে ১১.৫ মিলিয়ন পেয়েছে ক্লাবটি। এ দুজনের বেতন বাবদ খরচ কমেছে আর ৭ লাখ ইউরো। ফ্রান্সিসকো ত্রিনকাওকে উলভারহ্যাম্পটনে ধারে পাঠিয়ে বেতন থেকে ৮ মিলিয়ন ইউরো বাঁচিয়েছে বার্সা।
তবে এতেও প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ হচ্ছে না বার্সার। যে কারণে এখন লাপোর্তার চোখ পড়েছে স্যামুয়েল উমতিতি, মিরালেম পিয়ানিচ ও ফিলিপ কুতিনহোর ওপর। এ তিনজনের পেছনে বার্সার মোট বার্ষিক খরচ ৬৪ মিলিয়ন ইউরো! তাদেরকে বিদায় করে দিতে পারলেই এখন বাঁচে বার্সা। অনেকবার সেই সুযোগ খোঁজা হয়েছে। তাদের এমনিতেই চলে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বার্সা। কিন্তু সে প্রস্তাবে রাজি হননি তারা।
এখন যে করেই হোক ক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু খেলোয়াড়কে বিক্রি না করতে পারলে মেসির সঙ্গে নতুন চুক্তিতে যেতে পারছে না বার্সেলোনা।
সূত্র : যুগান্তর
এন এইচ, ০৯ জুলাই