কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জে করোনা উপসর্গ ও আক্রান্তে মৃত্যু ৫, শনাক্ত ৫৫

কিশোরগঞ্জ, ০৯ জুলাই – কিশোরগঞ্জে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি বিপজ্জনক আকার ধারণ করছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যা। জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) রাতে প্রকাশিত রিপোর্টেও সংক্রমণের উর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। ফলে সংক্রমণ পরিস্থিতি দিন দিনই উদ্বেগজনক হয়ে ওঠছে।

সর্বশেষ রিপোর্টে কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমেছে। ফলে কমেছে শনাক্তের সংখ্যা। রিপোর্টে একদিনে ৫৫ জন নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর বিপরীতে করোনাভাইরাস মুক্ত হয়ে জেলায় এদিন সুস্থ হয়েছেন মোট ৩২ জন। এছাড়া জেলায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে দুইজন এবং সন্দেহজনক কোভিড-১৯ তিনজন মৃত্যুবরণ করেছেন।

সর্বশেষ করোনা পজেটিভ হয়ে মারা যাওয়া দুইজনই পুরুষ। তাদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার একজন (৫৫) ও কটিয়াদী উপজেলার একজন (৬০)। দুইজনই বুধবার (৭ জুলাই) কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ পরিস্থিতিতে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বর্তমান রোগীর সংখ্যা আরো ২১ জন বেড়েছে।

আগের দিন বুধবার (৭ জুলাই) জেলায় করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা ছিল ১২৪১ জন। ফলে বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বর্তমান রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে মোট ১২৬২ জন। জেলায় নতুন করোনা শনাক্ত হওয়া মোট ৫৫ জনের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ৪০ জন শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া বাকি ১৫ জনের মধ্যে করিমগঞ্জ উপজেলায় ২ জন, তাড়াইল উপজেলায় ৩ জন, পাকুন্দিয়া উপজেলায় ৫ জন, কটিয়াদী উপজেলায় ২ জন, কুলিয়ারচর উপজেলায় ১ জন, ভৈরব উপজেলায় ১ জন এবং বাজিতপুর উপজেলায় ১ জন শনাক্ত হয়েছে।

ফলে শনাক্ত, সুস্থ ও মৃত্যু সব সূচকেই জেলার মধ্যে শীর্ষে থাকা কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় বর্তমান মোট রোগী ১২৬২ জনের মধ্যে ৭৬৯ জনই কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায়। আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ৭৬১ জন। এছাড়া জেলায় করোনায় মোট মারা যাওয়া ১০৪ জনের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৭ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এক উপজেলা বর্তমানে করোনাশূন্য থাকায় বাকি ১১ উপজেলা মিলিয়ে বর্তমান রোগীর সংখ্যা ৪৯৩ জন।

কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে হাসপাতালটির প্রি-আইসোলেশনে ভর্তিকৃত জরুরী রোগীসহ সোমবার (৫ জুলাই), মঙ্গলবার (৬ জুলাই), বুধবার (৭ জুলাই) ও বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সংগৃহীত মোট ৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪০ জনের কোভিড-১৯ পজেটিভ এসেছে। ল্যাবটিতে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার শতকরা প্রায় ৪৩ ভাগ। যা আগের দিন ছিল শতকরা প্রায় ৫৮ ভাগ।
এ রিপোর্টে মোট ২৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়েছে।

বাকি ১৫৪ জনের মধ্যে ৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে। সেখানে বুধবার (৭ জুলাই) এই ৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭ জনের কোভিড-১৯ পজেটিভ এসেছে। এছাড়া করিমগঞ্জ, তাড়াইল, পাকুন্দিয়া ও ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৫৮ জনের রেপিড এন্টিজেন টেস্টে ৮ জনের কোভিড-১৯ পজেটিভ এসেছে।

নতুন সুস্থ হওয়া ৩২ জনের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ৩০ জন রয়েছেন। বাকি ২ তাড়াইল উপজেলার। কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে বর্তমানে আক্রান্ত ও সন্দেহজনক মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৩৩ জন যাদের মধ্যে ১০ জন আইসিইউতে রয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন ৩০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং ২০ জন ছাড়পত্র পেয়েছেন।

হাসপাতালটিতে দুইজন কোভিড-১৯ পজেটিভ ছাড়াও তিনজন সন্দেহজনক কোভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন। এই সময় পর্যন্ত জেলায় মোট ৬৭৬৭ জন শনাক্ত, ৫৪০১ জন সুস্থ এবং ১০৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। বর্তমানে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ১২৬২ জন। তাদের মধ্যে ৮৬ জন হাসপাতাল ও ১১৭৬ জন হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। শনাক্ত, সুস্থ ও মৃত্যু সব সূচকেই জেলার মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা শীর্ষে রয়েছে। জেলার একমাত্র অষ্টগ্রাম উপজেলায় বর্তমানে করোনা আক্রান্ত কোন রোগী নেই।

বর্তমানে করোনা আক্রান্ত মোট ১২৬২ জনের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ৭৬৯ জন, হোসেনপুর উপজেলায় ২৫ জন, করিমগঞ্জ উপজেলায় ৩৯ জন, তাড়াইল উপজেলায় ৪০ জন, পাকুন্দিয়া উপজেলায় ৬৮ জন, কটিয়াদী উপজেলায় ৮৮ জন, কুলিয়ারচর উপজেলায় ২২ জন, ভৈরব উপজেলায় ১৪৮ জন, নিকলী উপজেলায় ১০ জন, বাজিতপুর উপজেলায় ২৮ জন, ইটনা উপজেলায় ২৩ জন এবং মিঠামইন উপজেলায় ২ জন রয়েছেন।

এদিকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর গত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৭৬ হাজার ৬৬৫ জন প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। এরপর গত ১৯ জুন থেকে সাইনোফার্ম ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়া শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ১৫৬৭ জন সাইনোফার্ম ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন।নগত ২৪ ঘন্টায় ৬৩ জন সাইনোফার্ম ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন।অন্যদিকে, গত ৮ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৫৯ হাজার ৩০৭ জন দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় কেউ দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেননি। কিশোরগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র : বিডি২৪লাইভ
এন এইচ, ০৯ জুলাই

Back to top button