করোনায় অসহায়দের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে ‘মেহমানখানা’
ঢাকা, ০৮ জুলাই- করোনার দুঃসময়ে রাজধানীর দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মুখে বিনামূল্যে দুমুঠো খাবার তুলে দিচ্ছে একদল তরুণ-তরুণী। ‘মেহমানখানা’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে অন্যরকম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা।
রাজধানীর লালমাটিয়ায় গতবছর রোজায় যাত্রা শুরু হওয়া ‘মেহমানখানা’র নিয়মিত মেহমান এখন প্রায় ১৫শ থেকে ১৬শ। তাদের অধিকাংশই সমাজের খেটে খাওয়া দরিদ্র ও অসহায় মানুষ। এদের মধ্যে রয়েছে রিকশাচালক, দিনমজুর, ফল বিক্রেতা, ফুটপাতের ছিন্নমূল, নৈশপ্রহরী। তবে এখানে আসার পর তাদের সবার একটাই পরিচয় ‘মেহমানখানা’র অতিথি।
সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে একে একে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মেহমানদের কাছে সুশৃঙ্খলভাবে পৌঁছে দেয় রান্না করা খাবার। এখানে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়মিত শ্রম দেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্কুল শিক্ষিকা। যারা স্কুল বন্ধ থাকায় এই সময়টা এখানে মানুষের সেবা করছেন। আবার এমন স্বেছাসেবকও রয়েছেন যিনি ঢাকায় রাইড শেয়ার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
এ কাজের অন্যতম উদ্যোক্তা আসমা আক্তার বলেন, লকডাউনে সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হলেও ফুটপাতে জীবনযাপন করা মানুষদের নেই কোনো ঘর অথবা দুবেলা খাবার উপায়। তখন আমরা চিন্তা করি যারা পথের মানুষ তারা কি করবে, কোথায় যাবে, কি খাবে? সেই ভাবনা থেকে আমরা প্রথমে আশপাশের নিরাপত্তা প্রহরী, পথশিশু ও রিকশওয়ালাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করি। মানুষ এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই আমাদের ‘মেহমানখানার’ যাত্রা শুরু।
যারা সংকোচের কারণে খাবার নিয়ে যেতে চান তাদেরও চাহিদামতো খাবার সরবরাহ করা হয়। খাবার নিয়ে যাওয়ার বিষয়েও নেই কোনো বিধিনিষেধ। কেউ পরিবারে থাকা অন্য কারও জন্য খাবার চাইলেও স্বেচ্ছাসেবকরা খাবার দেন।
স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক সময় যে পরিমাণ খাবারের আয়োজন করা হয় তার থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ চলে আসে। এতে সংকুলান না হলে মেহমানরা নিজেরাই নিজেদের খাবার হাসিমুখেই কয়েকজন ভাগ করে খেয়ে নেন।
অবিনাশ চন্দ্র নামে এক রিকশাচালক বলেন, আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য এক বেলার খাবার অনেককিছু। এমন আয়োজনে আমরা খুশি। ভগবান যেন তাদের আরও মানুষদের সেবা করার সুযোগ দেয়, এই আশীর্বাদ করি।
জাহালম নামের আরেকজন বলেন, আমার পরিবারে আর কেউ নেই। আমার মতো অসহায়দের যারা খাওয়াচ্ছে তাদের জন্য মন থেকে দোয়া করি।
আয়োজনের অর্থের জোগান কীভাবে হয় জানতে চাইলে আসমা বলেন, প্রথমে আমরা ব্যক্তি উদ্যোগে টাকা দিয়ে মেহমানখানা চালু করি। এরপর এটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছালে অনেক বন্ধু-বান্ধব, বেশকিছু শুভাকাঙ্ক্ষী আমাদের বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করেন। এ ধরনের সাহায্য সহায়তা দিয়েই আমাদের মেহমানখানার কার্যক্রম চলছে।
সূত্রঃ যুগান্তর
আর আই