জাতীয়

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করছে সরকার: মোশাররফ

ঢাকা, ০৮ জুলাই – সরকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, `সরকার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং স্বাধীনতার ৫০ বছরের ইতিহাসকে বিকৃত করে জনগণ ও এই প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে।’

বুধবার বিকালে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের তাদের ত্যাগ, তাদের সাহসিকতাকে আমরা বার বার শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে চাই। তাদের সেই প্রেরণা নিয়ে আমরা একটি সুখী সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক, স্বনির্ভর, স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়তে চাই- এটাই হোক আমাদের শপথ।’

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা যখন প্রকৃত ইতিহাসের কথা বলি তখন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে বিরুপ প্রতিক্রিয়া আসে। কারণ তাদের গায়ে জ্বালা ধরে যায়। যদি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্ম জানে, যদি ৫০ বছরের স্বাধীনতার ইতিহাস জানে আওয়ামী লীগের এদেশে রাজনীতি করার কোনো ক্ষেত্র থাকবে না। আওয়ামী লীগের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। সেজন্য তারা মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসকে বিকৃত করছে।’

‘বিএনপি যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের ঘোষকের দল, মুক্তিযোদ্ধাদের দল, যেহেতু গণতন্ত্রের পক্ষে দল, যেহেতু আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। সেজন্য বিএনপির এটা দায়িত্ব প্রকৃত ইতিহাসকে সামনে তুলে এনে নতুন ভবিষ্যত সৃষ্টি করার জন্য আজকের প্রজন্মকে পথ দেখানো।’

জেডফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমানসহ এই বিগ্রেডের সকল সেনা কর্মকর্তা, সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান তিনি।

জেড ফোর্সের অন্যান্য সেনা কর্মকর্তা অলি আহমেদ, সাদেক হোসেন, আবদুল হালিম, হুমায়ুন হাই, মইনুল হোসেন চৌধুরী, জিয়াউদ্দিন, সাফায়েত জামিল, আবু জাফর মো. আমিনুল হক, বজলুল গনি পাটোয়ারি, মাহবুবুর রহমান, হাফিজ উদ্দিন, আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, শমসের মবিন চৌধুরী, মহসিন উদ্দিন আহমেদ, আশরাফুল আলম, আনোয়ার হোসেন, আকবর হোসেন, মহসিন উদ্দিন, এসআইএম নুরুন্নবী খান, খালিকুজ্জামান চৌধুরী, মোদাচ্ছের হোসেন খান, মাহবুবুল আলম, ওয়াকার হাসান প্রমূখের নামও স্মরণ করেন খন্দকার মোশাররফ।

তিনি ক্ষমতাসীন দলের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আজকে যারা ক্ষমতায় গায়ের জোরে আছেন, ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালাচ্ছেন আরো ক্ষমতায় থাকার জন্য ইতিহাসকে বিকৃত করছেন। জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের চর বলছেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না বলেছেন। যদি তাই হয় এই জেড ফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমানের অধীনে যারা বিভিন্ন পদকে ভুষিত হয়েছিলেন, তারাও কি পাকিস্তানের চর ছিলো কিনা তা এই সরকারকে জনগনের কাছে পরিস্কারভাবে বলতে হবে।’

‘এই ব্যক্তিরাসহ জেড ফোর্স, এস ফোর্স, কে ফোর্সে যারা সাহসিকতার সাথে ভুমিকা রেখে দেশকে মুক্ত করেছেন এবং পরবর্তিকালে বিভিন্ন সন্মানে ভুষিত হয়েছেন তারা কি কেউ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। যদি তাই হয় তাহলে আমরা বলব, যারা আজকে জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযোদ্ধা মানতে রাজি নন, স্বাধীনতার ঘোষক মানতে রাজি নন, প্রথম রি-বোল্টকারী হিসেবে মানতে রাজি নন, জেড ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে মানতে রাজি নন তারা এই সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্বীকার করছেন, মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করছেন। এটা যতই চেষ্টা করা হোক না কেনো ইতিহাস কোনো মেনে নেবে না। হয়ত সরকারে থেকে রচনা লেখা যায় কিন্তু ইতিহাস লেখা যাবে না।’

বিএনপির স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মাননা কমিটির উদ্যোগে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্স গঠন উপলক্ষে এই আলোচনা হয়। ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই মুক্তিবাহিনীর প্রথম সামরিক বিগ্রেড জেড ফোর্স গঠন করা হয়। এই পদাতিক বিগ্রেডের নেতৃত্বে দেন এক নাম্বার সেক্টার কমান্ডার জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। জিয়াকে বিগ্রেড কমান্ডারের দায়িত্ব প্রদানের সাথে সাথে তাকে লে. কর্ণেল পদে পদোন্নতি দিয়ে ১১ সেক্টারেরও অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়।

জেড ফোর্সের অন্যতম সেনা কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে আমরা সবাই একজন মহান রাষ্ট্রপতি রুপে জানি, তিনি যে কত কৌশলী সমরনায়ক ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সামরিক অঙ্গনে তিনি যে একজন তেজদীপ্ত একজন কমান্ডার ছিলেন।’

‘জেড ফোর্স ছিলো মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিগ্রেড। কিন্তু এটি ছিলো একটি পূর্ণাঙ্গ বিগ্রেড। অন্য দুইটি যে বিগ্রেড ছিলো কে ফোর্স এবং এস ফোর্স সেখানে দুইটি করে পদাতিক ব্যাটেলিয়ান ছিলো। কিন্তু জেড ফোর্সে তিনটি পদাতিক ব্যাটেলিয়ান ছিলো। এই জেড ফোর্স ছিলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শক্তিশালী একটি বিগ্রেড যারা রনাঙ্গনে অনেক গৌরব দীপ্ত ভুমিকা রেখেছে। জেড ফোর্স স্বাধীনতা যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সাহসীকতা পদক অর্জন করেছে এই ফোর্স এবং আত্মদানে ও শহীদের সংখ্যাও সবচাইতে বেশি এই জেড ফোর্সে।’

ময়মনসিংহ, জামালপুর, সিলেট অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর জেড ফোর্সের বিভিন্ন অভিযানের ঘটনা তুলে ধরেন এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথম, তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল ও অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের ব্যাটেলিয়ানকে নিয়ে ১৯৭১ সালের জুন মাসে নির্দেশ দেয়া হয় বাংলাদেশ সশ্বস্ত্র বাহিনীর প্রথম বিগ্রেড জেড ফোর্স গঠন করার জন্য। এই তিনটি ব্যাটেলিয়ানে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত রিক্রুট ছাত্ররা রয়েছে যাদের কোনো সামরিক ট্রেনিং নাই। এদেরকে ট্রেনিং দেয়ার জন্য নিয়ে আসা হলো মেঘালয়ের তুরাগ থেকে ২০ মাইল উত্তরে তেলঢালা নামক জায়গায়। তেলঢালা ছিলো একটি ঘন বনাঞ্চল উঁচু পাহাড়ে ঘেরা। এখানে জেড ফোর্সের গোড়াপত্তন করা হয়। জুলাই মাসের শেষ দিকে এসে যোগদান জেড ফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমান। তিনি এসে দেখতে পান আমরা নতুনদের ট্রেনিং দিচ্ছি। তিনি এই ট্রেনিংয়ের তত্বাবধায়ন করেন।’

‘দুঃখের বিষয় আমরা যারা বিএনপি করি আমরা নিজেরাই জানি না। সিলেটে কোথায় যুদ্ধ হয়েছে আমি সিলেটের নেতৃবৃন্দকে জিজ্ঞাসা করেছি তারাও বলতে পারেনি। এই হলো বাস্তবতা। যখন আমরা ক্ষমতায় থাকি তখন আমরা জীবিত নেতাদের তোষামদে ব্যস্ত থাকি। যখন ক্ষমতায় থাকি তখন জেড ফোর্সে নামও শুনা যায় না। এখন কিছুটা শুনতে পারছি সেজন্য দলের স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটিতে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’

হাফিজ বলেন, ‘জেড ফোর্সে সময়নায়কদের মধ্যে, সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে চার জন বিএনপিতে ছিলেন। একজন কর্ণেল আকবর হোসেন তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন, অন্য দুই জন কর্ণেল অলি আহমেদ ও মেজর শমসের মবিন চৌধুরী-তারা অন্য দলে চলে গিয়েছেন। আমি একমাত্র কোনো ক্রমে অনেক অস্বস্তি নিয়ে এখনো টিকে আছি।’

সূত্র : ঢাকাটাইমস
এন এইচ, ০৮ জুলাই

Back to top button