বলিউড

কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমারের মৃত্যু ও সামাজিক মাধ্যমে ঘৃণার প্রচার

মুম্বাই, ০৭ জুলাই – অভিনেতা দিলীপ কুমারের মৃত্যুর পর ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেল ঘৃণার প্রচার। আজ বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কার্যত হয়ে উঠল হিন্দু-মুসলিম ও ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের রণক্ষেত্র। একদিকে যখন তাঁর প্রতি ভালোবাসায় উদ্বেল হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা, সমাজের বিশিষ্টজনেরা, তেমনিই আবার অশ্রাব্য ভাষায় কুৎসা করা হয়েছে দিলীপ কুমারের নামে। বারবার বলা হয়েছে, তিনি ‘শত্রুদেশ পাকিস্তানের এজেন্ট (চর)’। অবশ্য ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইন নিয়ে কাজ করেন এমন আইনজীবীরা বলছেন, এই ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে পোস্ট করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

দিলীপ কুমার সম্পর্কে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, ‘আবেগনিয়ন্ত্রিত অভিনয়ে (মেথড অ্যাক্টিং) তিনি সর্বোচ্চ।’ কিন্তু দিলীপ কুমারের জন্ম পাকিস্তানের পেশোয়ারে, জন্মের সময়ে তাঁর নাম ছিল মোহাম্মদ ইউসুফ খান আর সেই কারণেই মৃত্যুর পরে এই ধারাবাহিক আক্রমণ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অবশ্য তাঁকে একজন ‘কিংবদন্তি’ বলে বর্ণনা করে দিলীপ কুমারের কাজের প্রশংসা করেছেন। তাতে ৯৮ বছরের অভিনেতার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্রমণ থামছে না।

টুইটারে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছেন, ‘দিলীপ কুমারকে কবর দেওয়ার কারণ কী? উনি তো হিন্দু বলেই পরিচিত।’ সর্বাধিক প্রচারিত টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকার ইন্টারনেট সংস্করণে মন্তব্যের অংশে এক পাঠক বলেছেন, দিলীপ কুমার ‘মুসলিম নামের একজন পাকিস্তানি অভিনেতা। তিনি বলিউডে জায়গা পেতে নাম পরিবর্তন করেছিলেন। কিন্তু ইসলাম ত্যাগ করেননি। এইভাবে ধর্মনিরপেক্ষ জেহাদিরা হিন্দুদের বোকা বানায়।’

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান লিখেছেন, তাঁর ক্যানসার হাসপাতালের জন্য টাকা তুলতে সাহায্য করেছিলেন দিলীপ কুমার। ‘আমি কখনোই ওনার সেই দরাজ মনের কথা ভুলতে পারব না…হাসপাতালের প্রথম ১০ শতাংশ অর্থ এসেছিল ওনার পাকিস্তান ও লন্ডনের অনুষ্ঠান থেকে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ইমরান খান। এর ফলে অবশ্য ইমরান খানকে আবার ট্রল করা হয়েছে পাকিস্তানে। অনেকেই লিখেছেন, ‘আপনি পুরো দুনিয়ার কথা ভাবছেন, কিন্তু পাকিস্তানের ছাত্ররা যে আত্মহত্যা করছে, নিয়মিত মারা যাচ্ছে, সেদিকে আপনার নজর নেই।’

ভারতে, বিশেষ করে টুইটারে, ওই পাকিস্তানের প্রসঙ্গ টেনেই মূলত আক্রমণ করা হয়েছে দিলীপ কুমারকে। সিধুসাহেব বলে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘দিলীপ কুমার, অজিত, মধুবালা, মীনা কুমারী, বর্তমানের খানেরাসহ অন্যান্য যেসব মুসলিম অভিনেতা আছেন, তাঁদের পাকিস্তান বা বাংলাদেশে চলে যাওয়া উচিত ছিল। অনেক প্রতিভাশালী সংগীত পরিচালককেও এই তালিকায় রাখা যেতে পারে।’ জোরালো ভাষায় বিভিন্ন সম্প্রদায় পরস্পরকে আক্রমণ করেছে আর এসবই ঘটেছে দিলীপ কুমারের মৃত্যুকে ঘিরে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে বেশির ভাগ পোস্টই যে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে করা, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইন নিয়ে কাজ করেন, কলকাতার এক আইনজীবী তথাগত মজুমদার। তিনি বললেন, এই ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে পোস্ট করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

‘গত সপ্তাহে তাঁর গায়ের রং কালো বলে বাংলা সিনেমার এক অভিনেত্রীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেনস্তা করা হলে তিনি পুলিশ-প্রশাসনের সাইবার সেলে অভিযোগ করেন। মামলা করা হয়। দিলীপ কুমারকে অপমান করে যে পোস্ট করা হচ্ছে, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তির নতুন নিয়মে (২০২১) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিচালনাকারী সংস্থার কাছে এই ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য জানতে চাইতে পারে সরকার,’ বলেন তথাগত।

এম এউ, ০৭ জুলাই

Back to top button