জাতীয়

মামলা-জরিমানার পরও ঘরে থাকছে না মানুষ, বাড়ছে চলাচল

ঢাকা, ০৭ জুলাই-  গ্রেপ্তার ও জরিমানা করেও ঘরে রাখা যাচ্ছে না মানুষকে। কঠোর লকডাউন শুরুর পর প্রতিদিনই কয়েকশ মানুষকে গ্রেপ্তার-জরিমানা করা হচ্ছে। জরিমানার মুখে পড়ছে অসংখ্য গাড়িও। গতকাল মঙ্গলবার লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গ্রেপ্তার করে ৪৬৭ জনকে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩০৫ জনকে দুই লাখ ২৭ হাজার ৪৮০ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ এক হাজার ৮৭ গাড়িকে ২৫ লাখ ২৯ হাজার ২৫ টাকা জরিমানা করে। অর্থাৎ গতকাল একদিনেই বিধিনিষেধ অমান্যকারী মানুষ ও যানবাহন থেকে ২৭ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে গতকাল রাজধানীতে মানুষ ও যানবাহনের ব্যাপক চলাচল দেখা যায়। গতকাল সড়কের মোড়ে মোড়ে জটলা দেখা গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশাও বেশি দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকলেও নানা অজুহাতে রাস্তায় বের হচ্ছেন মানুষ। অনেকেই শাস্তির মুখে পড়ছেন। অনেকে জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে চলে যেতে সক্ষম হচ্ছেন।

রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজার, সাতরাস্তা ও মহাখালীসহ বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে গতকালের চিত্র কিছুটা ভিন্ন পাওয়া গেছে। এ চিত্রকে যানজট বলা না গেলেও গাড়ির জটলা যে ছিল তা স্পষ্ট। করোনা মহামারীর ঊর্ধ্বগতির মধ্যে গত কয়েক দিন মানুষ ঘরবন্দি থাকলেও এখন নানা প্রয়োজনে বের হতে শুরু করেছেন। ব্যাংক ও শেয়ারবাজারসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় মানুষের চলাচল বেড়েছে। অনেকেই মনে করেন, গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই লকডাউনে প্রথম দিকে বেশ কড়াকড়ি দেখা গেলেও ক্রমেই তা শিথিল হতে শুরু করেছে। চলতি সপ্তাহ কোনোভাবে পার করা গেলেও আগামী সপ্তাহ থেকে মানুষকে ঘরবন্দি করে রাখা কঠিন হবে।

সকালে কাকরাইল মোড়ে যানবাহনের বেশ জটলা দেখা যায়। সেখানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক দিনেই যানজট দেখা যাবে। ডিএমপি ট্রাফিকের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার এসএম বজলুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, তার এলাকায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অফিস সময়ের শুরুতে সকালের দিকে এ এলাকায় গাড়ির অল্প চাপ ছিল। অপ্রয়োজনে কেউ বের হলে চালক ও গাড়ির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ট্রাফিক রামপুরা জোনের সহকারী কমিশনার তানভির রহমান বলেন, তার এলাকায় যানবাহনের তেমন চাপ নেই। সড়কে রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনের উপস্থিতি গত কয়েক দিনের মতোই। হাতিরঝিল ও সংলগ্ন এলাকাগুলোয় যানবাহনের চাপ রয়েছে বলে জানান এ এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা কাজী মিজানুর রহমান।

গতকাল শান্তিনগর মোড়ে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। গাড়ির মালিক জানান, তিনি বাজার করতে এসেছেন। করোনার এই সময়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া অন্য যানে চলেন না। তাই গাড়ি নিয়ে বাজারে এসেছেন। গাড়ি নিয়ে বাজার করতে আসা মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়।

এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা থাকলেও অলিগলিতে সেলুন, মোবাইল এক্সেসরিজ, পোশাকসহ বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান খোলা শুরু হয়েছে। সরকারি বিধিনিষেধে এগুলো বন্ধ থাকার কথা। রাস্তার ধারে চায়ের দোকান, ছোট ছোট ফাস্টফুডের দোকানসহ বিভিন্ন সামগ্রীর যে দোকান গত কদিন বন্ধ ছিল, সেগুলোও খুলছে এখন। এর সঙ্গে বাড়ছে অলিগলিতে মানুষের ভিড়। গ্রেপ্তার বা জরিমানার ভয়ে অনেকে প্রধান সড়কে না গেলেও গলিতে ঘোরাঘুরি কিংবা আড্ডায় মেতে উঠছেন তারা।

শান্তিনগরের এক সেলুন মালিক বলেন, করোনার কারণে গত বছরের ক্ষতির রেশ কাটেনি। এখন আবার লকডাউন। কয়েক দিন সেলুন বন্ধ রেখেছি। সামনে ঈদ। কর্মীরা বাজার করতে পারছে না। তাই খোলা রাখছি, পরিচিত কোনো কাস্টমার ফোন করে এলে কাজ করে দিই। তবে পুলিশের ভয়ও কাজ করে। পুরান ঢাকার আজিমপুর, লালবাগ, কেল্লার মোড়, বকশীবাজার ও পলাশীর অলিগলিতে আগের দিনগুলোর চিত্রই দেখা গেছে।

সূত্রঃ আমাদের সময়

আর আই

Back to top button