জাতীয়

সোয়াজিল্যান্ডে শতাধিক বাংলাদেশি নিঃস্ব, বিপাকে হাজারো

ঢাকা, ০৭ জুলাই – সোয়াজিল্যান্ড নামে পরিচিত আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের ছোট দেশ এসওয়াতিনির রাজনৈতিক সংঘাতে বিপাকে পড়েছেন হাজার দেড়েক বাংলাদেশি। জুনের শেষ সপ্তাহে গণতন্ত্রের দাবিতে স্থানীয় লোকজন প্রথমবারে মতো ছোট ওই রাজতন্ত্রে বিক্ষোভ শুরু করে। সরকার গণতন্ত্রকামীদের ওপর চড়াও হলে সহিংসতা ও লুটপাট শুরু হয়। আর ওই সহিংসতা ও লুটপাটের শিকার হওয়া বাংলাদেশের লোকজন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

মঙ্গলবার সোয়াজিল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিক্ষোভকারীদের রোষে পড়ে নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটতরাজের ঘটনায় তাঁরা উদ্বিগ্ন। সহিংসতা ও লুটপাটের শিকার হয়ে শ খানেক বাংলাদেশি প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে অন্তত ৫০০ বাংলাদেশিদের আপাতত কিছু দিনের জন্য হলেও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সরকারের কাছে ‘সেফ এক্সিটের’ ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। তা না হলে সোয়াজিল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশের নাগরিকেরা যাতে দক্ষিণ আফ্রিকার ভিসা পেতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

আফ্রিকার শেষ রাজতন্ত্র সোয়াজিল্যান্ডের গণতন্ত্রকামীদের দমনের জন্য সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে রাজতন্ত্রবিরোধী অন্তত ২০ জন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।

ঐতিহাসিকভাবে শান্ত ও ছোট ওই দেশটির সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে ১৬ দেশের জোট আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন সম্প্রদায় এসএডিসি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সোয়াজিল্যান্ডে তথ্যানুসন্ধান মিশন পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। এসএডিসির চেয়ারপারসন ও বোতসোয়ানার প্রেসিডেন্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও বোতসোয়ানার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ওই তথ্যানুসন্ধান মিশনে যাবেন। আর ওই মিশনের নেতৃত্ব দেবেন লেমোগ্যাঙ্গা ওয়াপে।

সোয়াজিল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশের লোকজন জানিয়েছেন, বিদেশি সম্প্রদায় বলতে বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও পাকিস্তানের লোকজন দেশটিতে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া লোকজন মূলত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, সুপারস্টোর, ফিলিং স্টেশন ও রেস্তোরাঁ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সোয়াজিল্যান্ডে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করেন বাংলাদেশিরাই।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সোয়াজিল্যান্ডের নাগরিক আশরাফুল আলম চৌধুরী ১৯৯৮ সাল থেকে ব্যবসা করছেন। বাংলাদেশিদের মধ্যে তাঁর বাবাই ১৯৮৬ সালে প্রথম আফ্রিকার দেশটিতে যান। আশরাফুল আলম চৌধুরী বলেন, আফ্রিকার সবচেয়ে শান্ত দেশ হিসেবে পরিচিত সোয়াজিল্যান্ডে গত সপ্তাহে যে সহিংসতা হয়েছে, তা কল্পনাই করা যায় না। বাংলাদেশিসহ বেশির ভাগ এশিয়ান দোকান ও সম্পদে অগ্নিসংযোগ বা লুটতরাজের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীরা হয়তো ভেবেছিল, আন্তর্জাতিকভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করতে এটাই সহজ উপায়। তাদের হামলায় অন্তত ৯৫ শতাংশ বাংলাদেশির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতির শিকার হয়েছে। অনেক বাংলাদেশি এখন সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব। তাঁদের পরনে যে জামাকাপড়, শুধু সেটিই আছে। এমনকি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট পর্যন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, তবে গত দুই দিনে সোয়াজিল্যান্ডের পরিস্থিতি গত সপ্তাহের তুলনায় শান্ত হয়ে এসেছে। সকাল আটটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত দোকান খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো সান্ধ্য আইন জারি আছে।

বাংলাদেশি তরুণ বদরুজ্জামান চৌধুরী ২০১৬ সাল থেকে সোয়াজিল্যান্ডে থাকছেন। তিনি জানান, সোয়াজিল্যান্ডে তাঁদের চারটি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এগুলো সহিংসতার সময় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁরা নিজেদের চেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। যেভাবে ভাঙচুর ও লুটতরাজ হয়েছে, তাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পরিবার–পরিজন নিয়ে তাঁরা সোয়াজিল্যান্ডের প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে চান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিটোরিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার নুর-ই হেলাল সাইফুর রহমান বলেন, সোয়াজিল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশের লোকজন যাতে দক্ষিণ আফ্রিকার ভিসা পেতে পারেন, সে জন্য দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে শেষ খবর অনুযায়ী দুই দিন ধরে সেখানকার পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো।

তিনি বলেন, সোয়াজিল্যান্ডের সংকট রাজনৈতিক হওয়ায় সে দেশ থেকে বাংলাদেশের লোকজনকে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভিসা ছাড়া আসতে দেবে বলে মনে হয় না।

সূত্র : প্রথম আলো
এন এইচ, ০৭ জুলাই

Back to top button