জাতীয়

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ২১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান

জামাল উদ্দিন ও শাহেদ শফিক

ঢাকা, ০৬ জুলাই – ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) ২১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দায়িত্ব পালনে দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও রাজস্ব আদায়ে অনিয়ম, সিন্ডিকেট ও বদলি বাণিজ্য, মার্কেটে দোকান বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগসহ নানা কারণে অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের নথি তলব করা হয়েছে। পাশাপাশি দুই সংস্থার ১০টি ফাইলপত্রের সত্যায়িত কপি চাওয়া হয়েছে। ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৩০ জুনের মধ্যে নথিগুলো পাঠাতে বলা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের সই করা চিঠিতে এই তথ্যগুলো চাওয়া হয়েছে।

দুদকের চিঠিতে বলা হয়, ‘নিম্নলিখিত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নিম্ন স্বাক্ষরকারীকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণীতে বলা হয়েছে— সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী সরদার, রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজাহান আলী, কর কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) আলীম আল রাজি, সাবেক প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান, সাবেক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম (মৃত), কর কর্মকর্তা শেখ আব্দুল কুদ্দুস (অঞ্চল-২), কর কর্মকর্তা আবুল খায়ের (বর্তমানে রাজস্ব কর্মকর্তা, বাজার সার্কেল), উপ-কর কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন (অঞ্চল-৪ এর কর কর্মকর্তা), রেন্ট অ্যাসিসট্যান্ট আজমত উল্ল্যাহ শরীফ (অবসরপ্রাপ্ত), ক্যাশিয়ার আবদুস সালাম (অবসরপ্রাপ্ত), সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. আবু তৈয়ব রোকন, প্রোগ্রামার নুর আলম, মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার সুভাশীষ ভৌমিক (আইসিটি সেল), উপ কর কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন (অঞ্চল-২) ও উপকর কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান (বাজার শাখা-১ ও বিবিধ শাখা)। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রেভিনিউ সুপারভাইজার আব্দুল খালেক (আবসর প্রাপ্ত), করকর্মকর্তা লিয়াকত আলী (অঞ্চল-১), উপ করকর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন (বর্তমানে রাজস্ব কর্মকর্তা), উপকর কর্মকর্তা আলী আকবর (অবসরপ্রাপ্ত), উপ কর কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান (বর্তমানে অঞ্চল-৪ এর কর কর্মকর্তা), রেভিনিউ সুপারভাইজার মো. মাসুদুর রহমান। এদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ, প্রকল্পে বাস্তবায়ন ও রাজস্ব আদায়ে অনিয়ম, সিন্ডিকেট ও বদলী বাণিজ্য, মার্কেটে দোকান বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বর্ণিত ব্যক্তিদের রেকর্ডপত্র বা তথ্যাদি সংগ্রহ করে পর্যালোচনা একান্ত প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, বর্ণিত চাহিত রেকর্ডপত্র বা তথ্যাদির সত্যায়িত ফটোকপি অনুসন্ধান কর্মকর্তার কাছে ৩০ জুনের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এই ২১ জনের বর্তমান কর্মস্থল, পদবি, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার তথ্যসহ তাদের চাকরির ব্যক্তিগত নথির সত্যায়িত ফটোকপিও চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া অনুসন্ধানের স্বার্থে ১০টি নথি চাওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে— ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশেনের অধীনে বিভিন্ন মার্কেট যেমন- ফুলবাড়িয়া-১, ফুলবাড়িয়া-২ (এবিসিব্লক), ঢাকা টেড সেন্টার, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার, বঙ্গ বাজার কমপ্লেক্স, আহসান মঞ্জিল সুপার মার্কেট, যাত্রাবাড়ি কাঁচাবাজার, কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স (১, ২, ৩), চানখারপুল মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটগুলোর নকশা বা ডিজাইন, অনুমোদিত প্রস্তাবিত দোকানের সংখ্যা, বাস্তবিক অর্থে বর্তমান দোকানের সংখ্যা, স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বরাদ্দপ্রাপ্ত দোকান মালিকদের পূর্ণাঙ্গ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানাসহ আলাদাভাবে প্রস্তুতকৃত তালিকা, বর্ণিত মার্কেটের জন্য ব্যবহৃত নথির মূল নোটশিট। প্রতিটি মার্কেটের জন্য পৃথকভাবে ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি।’

‘বর্ণিত মার্কেটগুলোর মূল নকশা বা ডিজাইন পরিবর্তন করে বা না করে দোকানের সংখ্যা হ্রাস বৃদ্ধি করা হয়ে থাকলে, সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য বা রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। ডিএসসিসির মালিকানাধীন মার্কেটগুলোর বর্তমান ও বিগত ৫ বছরের দোকান মালিক সমিতির কমিটিগুলোর মার্কেট ওয়াইজ নাম, পদবি, পূর্ণাঙ্গ স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানাসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ড সত্য সাত্যায়িত ফটোকপি।’

‘মার্কেটগুলোর তদারকি ও ব্যবস্থাপনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের মার্কেটভিত্তিক নাম, পদবি ও সংশিষ্ট তথ্য। গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারসংশ্লিষ্ট সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নম্বর ৫৮৭১/২০১০ সংক্রান্ত আদেশ বা রায়ের কপি এবং আপিল বিভাগের লিভ টু আপিল ২৬৯৩/২০১২ সংক্রান্ত আদেশের কপি। করপোরশনের গত ২০১৯ সালের ২০ জুন অনুষ্ঠিত অষ্টাদশ সভার কার্যবিবরণী ও সভায় উপস্থিতির তালিকার সত্যায়িত ফটোকপি। ওই সভার কার্যবিবরণীতে সইকারী ও সভায় উপস্থিত সকলের নাম, পদবি বর্তমান কর্মস্থলসহ বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা। করপোরেশনের মালিকানাধীন ফুলবাড়িয়া এ বি ও সি ব্লক মার্কেটের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ প্রকল্প সংক্রান্ত নথির সত্যায়িত ফটোকপি।’

‘ফুলবাড়িয়া মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলুকে দোকান বিক্রয়, নামজারি, হস্তান্তর ও ব্যাংক ঋণ গ্রহণ সংক্রান্ত কাজে প্রত্যয়ন প্রদানের কোনও ক্ষমতা বা এখতিয়ার ডিএসসিসি কর্তৃক বোর্ড মিটিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল কিনা, হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।’

‘নীলক্ষেত রোড সাইড মার্কেট সংক্রান্ত নথির সত্যায়িত ফটোকপি। অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়ন ও পৌরকর গ্রহণ প্রকল্প সংক্রান্ত নথির সত্যায়িত ফটোকপি। ২০১৬ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন মার্কেটগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে, সে সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র, মার্কেট ওয়াইজ তালিকা তৈরি সংক্রান্ত কমিটি ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটো কপি।’

এ বিষয়ে দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) আরিফ সাদিক বলেন, ‘দুদকের নিয়োগ করা কর্মকর্তারা প্রথমিকভাবে যাদের বিরুদ্ধে সন্দেহ বা অভিযোগ জমা পড়ে, তাদের ফাইল বা নথিপত্র সংগ্রহ করে থাকেন। পরবর্তীতে ফাইলপত্র যাচাইবাছাই করে অসঙ্গতি পাওয়া গেলে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন আহাম্মদ বালেন, ‘দুদক থেকে এখনও পর্যন্ত আমরা ২০ থেকে ২১টি চিঠি পেয়েছি। চিঠিগুলো পাওয়ার পর জবাব রেডি করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছি। চাহিদা অনুযায়ী, এরই মধ্যে ৬টির মতো তথ্য আমরা দুদককে পাঠিয়েছি। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন।’

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
এম এউ, ০৬ জুলাই

Back to top button