সহস্রাধিক চিকিৎসককে বদলি: ‘ভুল’ শুধরে নতুন আদেশ
ঢাকা, ০৬ জুলাই – সহস্রাধিক চিকিৎসককে একসঙ্গে বদলি করার আদেশ বাস্তবায়নে ‘জটিলতা’ থাকার কথা তুলে ধরে সমালোচনার মুখে তা সংশোধন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বদলির আদেশ দেওয়ার একদিন পরই যেসব চিকিৎসকের ‘বদলি আদেশ বাস্তবায়নে সমস্যা হবে’ তা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বৃহস্পতিবার আদেশ হয়েছে।
তবে এসব চিকিৎসকের বদলির আদেশ স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা বিভাগের প্রধানকে।
মঙ্গলবার রাতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক আদেশে বলা হয়েছে, “সংযুক্তি আদেশ বাস্তবায়নে জটিলতা থাকলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসদের বাস্তবায়ন আদেশ স্থগিত রেখে আগামী ৮ জুলাইয়ের মধ্যে সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করে তাদের তালিকা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মেইলে পাঠাতে হবে।“
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব আবু রায়হান মিয়া স্বাক্ষরিত আদেশে আরও বলা হয়েছে, “স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ৪ এবং ৫ জুলাইয়ের প্রজ্ঞাপনে কোভিড রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক পদের চিকিৎসকদের বিভিন্ন হাসপাতালে সংযুক্তিতে পদায়ন করা হয়।
“এতে তথ্যগত অপ্রতুলতার কারণে আরটিপিসিআর ল্যাবসহ অন্যান্য ল্যাবে কর্মরত চিকিৎসক, কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক এবং মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত একমাত্র চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়ে থাকতে পারে।“
এছাড়া চিকিৎসকের বর্তমান কর্মস্থলের বিষয়ে ‘তথ্যগত ভুল থাকায়’ কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদেশ ‘ত্রুটিপূর্ণ’ হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।
এসব কারণেই আগের আদেশে পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে নতুন আদেশে।
করোনাভাইরাস মহামারী ভয়াবহ আকার ধারণ করায় ‘চাপ সামলাতে’গত ৪ ও ৫ জুলাই স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অন্তত ৪৮টি আদেশে ১ হাজার ২৩৯ জন চিকিৎসককে বুধবারের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। সেখানে তারা কোভিড ইউনিটে দায়িত্ব পালন করবেন।
এই আদেশে এমন কিছু চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে যারা পিসিআর ল্যাবের দায়িত্ব আছেন।
আবার এই তালিকায় অন্তত তিনজন চিকিৎসকের নাম রয়েছে যারা বছরখানেক আগেই মারা গেছেন। দুজন চিকিৎসকের খোঁজ পাওয়া গেছে যারা চাকরি থেকে অবসরে গেছেন।
হঠাৎ এই বদলি আদেশ নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে দিনভর আলোচনার মধ্যে মৃত ও চাকরি ছেড়ে যাওয়া চিকিৎসকদের তালিকায় নাম থাকাকে কেউ কেউ ‘অদ্ভুত’ বলে মন্তব্য করেছেন।
এটা কীভাবে সম্ভব হল তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তুলেছেন, তেমনি এমন আদেশকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ উল্লেখ করে চিকিৎসকরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
উপসচিব জাকিয়া পারভিনের স্বাক্ষরে এসব প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ অতিমারী মোকাবিলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্তাদের ‘সংযুক্তিতে পদায়ন’ করা হল।
যেসব চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মেডিকেল কলেজ থেকে একই মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে, একই জেলার জেনারেল হাসপাতাল বা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিংবা পাশের কোনো জেলায় তাদের পাঠানো হয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাসের এই জটিল পরিস্থিতি আর লকডাউনের মধ্যে গণবদলির কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মঙ্গলবার বলেন, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত চিকিৎসকদের বিভিন্ন হাসপাতালে পদায়ন করা হয়েছে।
“হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসকরা এই চাপ সামাল দিতে পারছেন না। ফলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেই তরুণ চিকিৎসকদের বদলি করা হয়েছে।
“তারা একটু কম প্রেশারে আছে। আমাদের অন্যান্য হাসপাতালে অন্যান্য ডাক্তাররা খুব প্রেশারে পড়ে গেছে রোগীর চাপে। তারা সামলাতে পারছেন না। তাদের সহায়তা করতেই মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসকদের ডেকে আনা হয়েছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য।”
“এটা কারও ব্যক্তিগত বিষয় না। ওই জায়গায়ই আছে, সেখানে অ্যাটাচমেন্ট করে দেওয়া হয়েছে।”
সবচেয়ে বেশি ১৫৬ জন চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে চট্গ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে। খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতাল, ফেনী জেলা হাসপাতাল, দাগনভূঁইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও পাঠানো হয়েছে তাদের কাউকে কাউকে।
সূত্র : বিডিনিউজ
এম এউ, ০৬ জুলাই