চট্টগ্রাম

ঢামেকের ওয়ার্ড বয় থেকে ‘স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ’ চিকিৎসক, ভিজিট ৫০০

চট্টগ্রাম, ০৬ জুলাই – একসময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অস্থায়ী ভিত্তিতে ‘ওয়ার্ড বয়’ হিসেবে চাকরি করতেন খোরশেদ আলম। পরে চাকরি ছেড়ে কুমিল্লায় চেম্বার দিয়ে বসেন। পরিচয় দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোমেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক! কুমিল্লায় অবশ্য ধরা পড়ে যান। পরে চলে যান মাগুরায়। সেখানে চেম্বার খুলে চিকিৎসার নামে প্রতারণা শুরু করেন। বেশি দিন পরিচয় গোপন রাখতে পারেননি সেখানেও। ধরা পড়লে এবার ডাক্তার সেজে প্রতারণার জন্য বেছে নেন চট্টগ্রামকে। ‘স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ’ সেজে চেম্বার খোলেন। সেই চেম্বারে রোগীর ভিড়, ভিজিট ৫০০ টাকা!

‘পেশাদার’ এই প্রতারক ধরা পড়েছেন চট্টগ্রামেও। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দুপুরে নগরীর আকবর শাহ থানার কর্নেল জোন্স সড়কের হাজী ইব্রাহিম ম্যানশনে কাট্টলী মেডিকেল হল থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে খোরশেদ আলমকে।

পুলিশ জানিয়েছে, ৪২ বছর বয়সী মুহাম্মদ খোরশেদ আলমের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায়। বাসা নগরীর সরাইপাড়া এলাকায়। গ্রেফতারের সময় তার কথিত চেম্বার থেকে পুলিশ চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন সরঞ্জাম, নামফলক, ভিজিটিং কার্ড, সিলমোহর, প্যাড উদ্ধার করেছে। প্রেসক্রিপশন প্যাডে খোরশেদ আলমের পদবী লেখা আছে— এমবিবিএস (ডিএমসি), এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (নিউরোলজি)। নামফলকে নিউরোমেডিসিন, স্নায়ুরোগ, ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ উল্লেখ আছে। প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা হারে ভিজিট নিতেন।

 

আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির হোসেন বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি, খোরশেদ একজন ভুয়া চিকিৎসক। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারি, তিনি মাত্র অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ২০১৩ সালের আগে ঢামেক হাসপাতালে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ওয়ার্ড বয় হিসেবে চাকরি করতেন। পরে নিজেই ডাক্তার সেজে বসেন। কুমিল্লা ও মাগুরায় দু’বার তাকে গ্রেফতার করে সাজা দিয়েছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মাগুরায় একবছর এবং কুমিল্লায় তার ছয় মাসের সাজা হয়েছিল। তবে তিনি জানিয়েছেন, কিছুদিন সাজা খেটে পরে জরিমানা দিয়ে মুক্ত হন। এরপর চট্টগ্রামে এসে ডাক্তারির নামে লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে।’

এর আগে, ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা শহরে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে খোরশেদ আলমকে আটক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
আবার ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল মাগুরা সদর হাসপাতালের পাশে গ্রামীণ ল্যাব মেডিকেল সার্ভিসেস নামের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেখানে খোরশেদ নিজেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোমেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দিতেন। নামের পাশে এমবিবিএস (ডিএমসি), বিসিএস (স্বাস্থ্য), এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (নিউরোলজি) ও এফআরসিপি (লন্ডন) ডিগ্রি লেখা ছিল। সপ্তাহে প্রতি বুধবার ঢাকা থেকে মাগুরায় গিয়ে রোগী দেখার নামে প্রতারণা করতেন। প্রতারণা ধরা পড়ার পর তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ওসি জহির হোসেন বলেন, ‘মাগুরায় দণ্ডিত হয়ে জেলে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকেন। পরে গত একবছর ধরে চট্টগ্রামে এসে প্রতারণা করে যাচ্ছিলেন।’

সূত্র: সারাবাংলা
এম ইউ/ ০৬ জুলাই ২০২১

Back to top button