জাতীয়

করোনাকালে ত্রাণ পেতে ৩৩৩ নম্বরে ফোন বাড়ছে

মামুনুর রশীদ

ঢাকা, ০৬ জুলাই – করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে খাবার ও ত্রাণ সহায়তার জন্য গত ১১ দিনে ১৯ লাখেরও বেশি কল এসেছে জাতীয় তথ্য সেবার ‘৩৩৩’ নম্বরে। এদের মধ্যে ৫৯ হাজার ১৬৪টি পরিবারকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের সূত্রে এ কথা জানা গেছে।

চলমান বিধিনিষেধে দরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের সহায়তা দিতে জরুরি হটলাইন ‘৩৩৩’ (সরকারি তথ্য ও সেবা) নম্বরটি কাজে লাগাচ্ছে সরকার। এটুআই কর্মসূচির অধীনে চলা এই হটলাইনের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে এসব সহায়তা দিচ্ছে।

এটুআই প্রকল্পের কমিউনিকেশনস অ্যান্ড মিডিয়া আউচরিচ কনসালট্যান্ট আদনান ফয়সল আজ মঙ্গলবার জানান, ২৫ জুন থেকে গতকাল ৫ জুলাই পর্যন্ত ৩৩৩ নম্বরে খাদ্য সহায়তা চেয়ে মোট ১৯ লাখ ৯ হাজার ২১৪টি কল আসে। কল সেন্টারের এজেন্টরা প্রাথমিকভাবে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৪৪৯ জনকে বাছাই করেন। পরে অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এর মধ্য থেকে ১ লাখ ৫১ হাজার ৪৬০ জন সাহায্যপ্রার্থীর তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কাছে পাঠানো হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন বলেন, ‘২৫ জুন থেকে গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত ইউএনওদের কাছে পাঠানো তালিকা থেকে মোট ৫৯ হাজার ১৬৪টি পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’

সাহায্য চেয়ে মোট কল এবং সহায়তা পাওয়া মানুষের সংখ্যায় বিশাল ফারাক সম্পর্কে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘কলের তথ্যটা আমার কাছে নেই। এটুআই এটা যাচাই-বাচাই করে পাঠায়। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে গিয়ে অনেক সময় দেখা যায়, এক বাড়ি থেকেই চারটি কল এসেছে। কিংবা যারা কল করেছেন, তাদের চেয়ে পাশের বাড়ির মানুষের অবস্থা বেশি খারাপ। যদিও এই প্রবণতা এখন অনেক কমেছে।’

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ৩৩৩ নম্বরে মানবিক সহায়তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাহায্যপ্রার্থীদের ৫০০ টাকা সমমূল্যের চাল, ডাল, লবণ, তেল ও আলু দেওয়া হচ্ছে।

১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী শুরু হওয়া কঠোর লকডাউন শুরুর আগে গত ২৭ জুন দরিদ্র, দুস্থ, অসচ্ছল ও কর্মহীন জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা দিতে ৬৪ জেলার অনুকূলে ২৩ কোটি ছয় লাখ ৭৫ হাজার টাকা ছাড় করে ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

আবার গতকাল মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান বিধিনিষেধসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মানবিক সহায়তা দিতে সারা দেশে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং ২৩ হাজার ৬৩০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হবে।

বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন শ্রমিকসহ কর্মহীন মানুষ ও দুস্থ পরিবারগুলো এই চাল ও নগদ সহায়তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। আরও বলা হয়, জেলা পর্যায়ে বিদ্যমান বিতরণ ব্যবস্থার মাধ্যমেই এই অর্থ ও চাল দেবে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ৩৩৩ নম্বরের মাধ্যমেও এ বরাদ্দ দেওয়া হবে।

ওই বিজ্ঞপ্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ত্রাণ সচিব মো. মোহসীন মোট বরাদ্দ ও বিদ্যমান বিতরণ ব্যবস্থা নিয়েও নিজের সন্তুষ্টির কথা জানান। তিনি বলেন, ‘বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট তো বটেই। গতকালও মন্ত্রী মহোদয়ের (ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান) উপস্থিতিতে আমরা নয়টি জেলার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, সবকিছু সুষ্ঠুভাবেই চলছে।’

এদিকে দরিদ্র মানুষের জন্যে খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত না করেই দেশব্যাপী ‘কঠোর লকডাউন’ দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আসছেন বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা ছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষকে ঘরে আটকে রাখা সম্ভব হবে না।

বিষয়টি নিয়ে গত ১ জুলাই ‘লকডাউনে গরিব মানুষ খাবে কী’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মানবিক সহায়তার জন্য ৬৪ জেলার অনুকূলে মাত্র ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়টিকে ‘তামাশা’ হিসেবে অভিহিত করেন।

ওই প্রতিবেদনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ কাজ করে। যারা সরাসরি আক্রান্ত। এর বাইরে আমরা যদি দোকান কর্মচারী কিংবা পরিবহন খাতের লোকজনদের ধরি, তারাও একটা বড় অংশ। অথচ লকডাউন আরোপের ক্ষেত্রে এদের বিষয়টি ধর্তব্যের মধ্যেই আনা হয়নি।’

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) সাম্প্রতিক এক জরিপের ফলাফল বলছে, কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ।

অন্যদিকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার (আপার পোভার্টি রেট) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশে।

এর মধ্যে গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনের কারণে দরিদ্র কর্মজীবী মানুষের জীবিকা নির্বাহের সব পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, লকডাউনের বিধিনিষেধ ভেঙে গত কয়েক দিনে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই দরিদ্র, খেটে খাওয়া মানুষ।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

সূত্র: ডেইলি স্টার
এম ইউ/ ০৬ জুলাই ২০২১

Back to top button