রংপুর

রংপুরে করোনা উপসর্গ ঘরে ঘরে

রংপুর, ০৬ জুলাই- রংপুরে দিন দিন করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সঙ্গে দীর্ঘ  হচ্ছে মৃত্যুর সারিও। এছাড়া হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে জ্বর, সর্দি-কাঁশির প্রকোপ। হাসপাতালগুলোতে বেড়েই চলেছে রোগীর চাপ, সেই সঙ্গে বাড়ছে প্রয়োজনীয় ওষুধের চাহিদাও।

চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু করোনাভাইরাস নয়, ঋতু পরিবর্তনেরও প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ কারণে সবখানেই এখন জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দেন তাঁরা।

অন্যদিকে, ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাঁশির প্রভাব পড়েছে ওষুধপাড়ায়। চাহিদার কারণে নাপা, নাপা এক্সট্রা, এইচ প্লাস, নাপা সিরাপসহ প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে, বেড়েছে দামও। রংপুর অঞ্চলের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কঠোর বিধি-নিষেধের আওতামুক্ত ওষুধ সরবরাহকারী কম্পানি, প্রতিষ্ঠান ও ফার্মেসিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীদের দাবি, লকডাউনে ওষুধ কম্পানির প্রতিনিধিদের দেখা মিলছে না। তবে এটি কৃত্রিম সংকট নয়, বরং কম্পানি থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় সাময়িক এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংপুরসহ বিভাগের প্রায় প্রতিটি জেলা-উপজেলার ফার্মেসিগুলোয় সহজে মিলছে না জ্বর-সর্দি, কাশি-হাঁচির ওষুধ। চাহিদার অজুহাতে দামও বাড়িয়েছেন ফার্মেসির মালিকরা। বিশেষ করে পাড়া-মহল্লার ফার্মেসিগুলোতে বেশি দামে প্যারাসিটামল বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ মিলছে ফার্মেসি মালিকদের বিরুদ্ধে। ক্রেতাদের অভিযোগ, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় লাভের আশায় ফার্মেসি-মালিকরা এই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে  ফেলেছেন।

গতকাল সোমবার (৫ জুলাই) দুপুরে জ্বরের ওষুধ এইচ প্লাসের জন্য এক ফার্মেসি থেকে অন্য ফার্মেসি ঘুরছিলেন নগরীর দর্শনা এলাকার হাসান মিয়া। বেশ কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরে ওই ওষুধ খুঁজে পাননি তিনি। নগরীর মেডিক্যাল মোড় এলাকায় চাহিদাপত্র নিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরেও ওষুধ না পাওয়া রুমি বেগম বলেন, ‘সাত বছরের ছেলের জ্বরের জন্য ওষুধ নিতে এসেছিলাম। কিন্তু বড় বড় কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরেও পর্যাপ্ত ওষুধ মেলেনি।’

গঙ্গাচড়া বাজারে আল্পনা রিতু নামের একজন বলেন, ‘যদিও দু-একটি ফার্মেসিতে জ্বর-সর্দির ওষুধ মিলছে, কিন্তু চাহিদা থাকায় তারা বেশি দামে বিক্রি করছে। আসলে  কম্পানিগুলোতে ওষুধের সংকট রয়েছে কি না, তা প্রশাসনকে খতিয়ে দেখা উচিত।’

জাহাজ কম্পানি মোড়ে একটি ওষুধ কম্পানির স্বত্বাধিকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে জ্বর, সর্দি, কাশির প্রকোপ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় কম্পানিগুলো আমাদের ওষুধ সরবরাহ করতে পারছে না। বিশেষ করে নাপা ট্যাবলেট, নাপা সিরাপ, এইচ ট্যাবলেট ও এইচ সিরাপের চাহিদা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। কয়েক দিন ধরে প্রতি পাতা নাপা ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে যার দাম আট টাকা ছিল।

এছাড়া অন্যান্য প্যারাসিটামলের দাম বাড়েনি। নাপা এক্সটেন প্রতিপাতা ১৫ টাকা, জি-ম্যাক্স প্রতি পাতা ১১০, এইচ প্লাস ২৪ টাকা পাতা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে একটি ওষুধ কম্পানির রংপুর প্রতিনিধি জানান, বর্তমানে সবার ঘরে ঘরে জ্বর হওয়ায় উৎপাদনের তুলনায় ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহ কমেছে। চলতি মাসের মধ্যে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

রংপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, ওষুধ-সংকট সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে আইনি  ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট উদ্বেগজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে সরকারঘোষিত বিধি-নিষেধ ও স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলার বিকল্প নেই। ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।

সূত্রঃকালের কণ্ঠ

Back to top button