পাবনা জেনারেল হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটে ৪ জনের মৃত্যু
পাবনা, ০৫ জুলাই – করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পাবনায় অক্সিজেন সংকটে করোনা ইউনিটে ৪ জনের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার (৪ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে সোমবার (৫ জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত পাবনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এছাড়াও করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
মৃতরা হলেন- সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের মৃত আলহাজ দায়েন বিশ্বাসের স্ত্রী রাশিদা বেগম (৭০), ঈশ্বরদীর চরকুরুলিয়া গ্রামের মৃত কোরবান সরকারের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন (৭০), পাবনার শহর এলাকার নূরে আলম (৬৭), নাজমুল ইসলাম (৭২)।
অপর ৪ জন হলো- ঈশ্বরদী চরমিরকামারী মাথালপাড়া জয়েন উদ্দিন খানের ছেলে আমিরুল ইসলাম খান (৬৬)। ঈশ্বরদী শহরের শৈলপাড়া গ্রামের শাহীনের স্ত্রী রিমা খাতুন (৫৬), মুলাডুলি ইউনিয়নের চকনারিচা বাগাবাড়িয়া গ্রামের রিজু প্রামানিক। আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দায়িত্বে থাকা একজন সিনিয়র চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোববার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৪ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে অক্সিজেনের ঘাটতি থাকায় ঠিকমত অক্সিজেন সরবরাহ করতে না পারায় ৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে আরও ১ জনের মৃত্যু হয়।
নিহত রাশিদা বেগমের বড় ছেলে মো. আলমগীর হোসাইন বলেন, আমার আম্মাকে গতকাল দুপুরে ঠাণ্ডা জ্বর শ্বাসকষ্ট নিয়ে সদরের করোনা ইউনিটে ভর্তি করেছিলাম। শুরু থেকেই অক্সিজেন সংকট ছিল। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
তিনি বলেন, ১০ বার বলার পরও তারা আমার মায়ের জন্য একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়নি। পরিশেষে অক্সিজেন সংকট নিয়েই মায়ের মৃত্যু হলো।
তিনি জানান, এ সময় হাসপাতালের প্রতিটি রোগী প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছিল। অক্সিজেনের অভাবে তার সামনে তিনজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
করোন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর ভাই মামুন হোসেন জানান, এই হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। অনেক ভালো রোগীকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করে রেখেছে। আমার বোনকে ১২ দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। পরের দিন করোনা পরীক্ষার নমুনা দিলে আজ ১১ দিন অতিবাহিত হলেও কোনও ফলাফল পাচ্ছি না। যার কারণে আমাদের রোগী এখন সুস্থ হলেও এই ওয়ার্ডে ভর্তি করে রেখেছে। তিনি এই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নতি চান কর্তৃপক্ষের কাছে।
অক্সিজেন সংকটে মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডা. সালেহ মোহাম্মদ আলীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, অনেক রোগী করোনা আক্রান্ত হয়ে শেষ সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। শেষ সময়ে একজন করোনা রোগী হাসপাতালে আসলে কিছু করার থাকে না। সে যদি আক্রান্ত হওয়ার শুরুতে আসে তাহলে তাকে ভালো ভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। যারা মারা গেছে তাদের বেশিরভাগই করোনা আক্রান্ত হয়ে শেষ সময়ে হাসপাতালে এসেছিল।
তিনি জানান, জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন চালু না থাকায় অক্সিজেনের ব্যাপক সংকট দেখা দিচ্ছে। হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাও অকেজো হয়ে পরে আছে।
সম্প্রতি পাবনা সদর আসনের এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপির সঙ্গে একটি মিটিংয়ে হাসপাতালের করোনা রোগীদের জন্য আরও ৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি বলেও জানান তিনি।
পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কেএম আবু জাফর জানান, করোনা সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় এবং বিভিন্ন এলাকায় মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচলের ফলে পাবনাতেও করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেছে। প্রতিদিন অনেক রোগী করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। জনগণ সচেতন না হলে স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু করার থাকে না বলে জানান তিনি।
এদিকে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও পাবনা জেলায় এখনো করোনার চিকিৎসায় তেমন অগ্রগতি হয়নি। পিসিআর ল্যাবের অনুমোদন হলেও এখনো তা স্থাপন হয়নি। এছাড়াও করোনা চিকিৎসায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
সূত্র : সমকাল
এন এইচ, ০৫ জুলাই