ফুটবল

অবিশ্বাস্য মেসি, জাদুকর মেসি

ডেভিড ডেভান্ট; বিশ শতকের অন্যতম সেরা জাদুকর। ইংলিশদের কাছে তিনি একাধারে লিজেন্ড, মাস্টার এবং দ্য মিস্টিরিয়াস ম্যান। আঠারো শতকের পর লন্ডনে জন্ম নেওয়া ডেভান্ট তখন এই জগতের কিংবদন্তি। ৭৩ বছরের জীবনে জাদুবিদ্যাকে তিনি নিয়ে যান শিল্পে। কে জানে তার কাছে ফুটবলটা লাগত কেমন। তবে ফুটবল দিয়ে যে জাদুও হয় সেটা জানলে ডেভান্টও লুফে নিতেন সুযোগটা। ঠিক একবিংশ শতকে এসে লিওনেল মেসি যা করছেন, বলকে যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবেই নাচাচ্ছেন। কি বাঁ পা, কি ডান পা- দুই পায়েই সমভাবে চলছে আর্জেন্টাইন তারকার জাদু। প্রতিনিয়ত যা দেখে দর্শক হচ্ছেন মুগ্ধ।

সর্বশেষ রোববার কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে ইকুয়েডরের বিপক্ষে জাদুর বাক্স নিয়েই যেন হাজির হন মেসি। শুরুতে কিছুটা ভুল করলেও ক্রমেই হয়ে ওঠেন ভয়ংকর। সতীর্থদের দিয়ে করান দুই গোল, নিজে করেন আরেকটি। তাতে ইকুয়েডরকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। ৭ জুলাই ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে লিওনেল স্কালোনির শিষ্যদের প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া।

গোয়েনিয়ায় ম্যাচের ৪০তম মিনিটে বামপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠে আর্জেন্টিনা। বল পায়ে ক্ষুরধার গতিতে ইকুয়েডরের রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করেন গনজালেস। কিন্তু ডি বক্সে তার পথ আটকায় ইকুয়েডরের ডিফেন্ডাররা। পাশ থেকে বলটা মেসি বাড়িয়ে দেন ডি পলের উদ্দেশ্যে। ভুল করেননি আর্জেন্টিনার এই মিডফিল্ডার, ডান পায়ের শটে জাল কাঁপিয়ে দেন। এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ৮৪তম মিনিটে আবারও মেসির বল অ্যাসিস্ট, ডি বক্সের মাঝে পেয়ে এবার জোরালো শটে দলকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন লাওতারো মার্টিনেজ। ৭১তম মিনিটে সেলসোর বদলি হয়ে নামেন ডি মারিয়া। যোগ করা মিনিটে মাঝমাঠ দিয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠেন পিএসজির এই মিডফিল্ডার। ডি বক্সের কাছাকাছি পা দিতেই তাকে ফাউল করেন ইকুয়েডরের পিয়েরো। রেফারি নেন ভিএআরের সাহায্য। যেখানে পরিষ্কার দেখা যায় ডি মারিয়াকে ফেলে দেওয়ার দৃশ্য। আসে ফ্রিকিকের সিদ্ধান্ত। সেখান থেকে আরেকটা মাস্টারক্লাস শটে ইকুয়েডর গোলকিপারকে বোকা বনে পাঠান মেসি। দেশের হয়ে যেটা তার অষ্টম ফ্রিকিক গোল। আর ক্যারিয়ারের ৫৮তম। আর্জেন্টিনার হয়ে ফ্রিকিকে রেকর্ড ৬২ গোল রয়েছে কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার।

পুরো দলই মেসির রেখা বেয়ে চলেছিল। মাঝমাঠে ডি পল, রক্ষণে ওটামেন্ডি আর গোলপোস্টের নিচে ইমিলিয়ানো মার্টিনেজ ছিলেন স্বমহিমায়। আক্রমণভাগে তো মেসিই দিলেন নেতৃত্ব। ম্যাচের পর যেমনটা বললেন গোলদাতা লাওতারো মার্টিনেজও, ‘আমরা সবাই তার নেতৃত্বটা অনুসরণ করেছি। কীভাবে সে ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দেয়, সেটা আরেকবার দেখালাম। ম্যাচটা জেতা আসলেই সহজ ছিল না। এখন আমাদের টার্গেট কলম্বিয়া।’

ধারেভারে কলম্বিয়ার চেয়ে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। তবে লাতিন ফুটবলের এই মহামঞ্চে কার তরী কখন ডোবে, বলা যায় না। সেজন্য সেমিতে মেসিদের জন্য হয়তো কঠিন পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে।

সূত্র : সমকাল
এন এইচ, ০৫ জুলাই

Back to top button