খুলনায় লাগামহীন চালের বাজার
খুলনা, ০৫ জুলাই – করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের মাথার ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্যপণ্যের মূল্য। এর ওপর ভর করেছে চালের বাড়তি মূল্য। একইসঙ্গে সবজির বাড়তি দামে বেসামাল করে দিয়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের। কমছে না ভোজ্যতেল ও ব্রয়লার মুরগির দামও।
দেশব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন থেকে বাড়তে থাকে চালের মূল্য। কেজি প্রতি বেড়েছে অন্তত চার টাকা। দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। বাজার দর মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভোক্তারা।
নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে চালের দাম ২৫ কেজির বস্তা ১০০ টাকা এবং ৫০ কেজির বস্তা ২০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি কেজি স্বর্ণা মোটা চাল ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা, ২৮ বালাম ৫০ থেকে ৫২ টাকা, মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, বাসমতি ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা। অথচ পাঁচ দিন আগে স্বর্ণা মোটা চাল ৪০ থেকে ৪২ টাকা, ২৮ বালাম ৪৬ থেকে ৫০ টাকা, মিনিকেট ৫৪ থেকে ৬০ টাকা, বাসমতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া পাইকারি বাজারে স্বর্ণা মোটা চাল ৪২ টাকা, ২৮ বালাম ৪৮ টাকা, মিনিকেট ৫৬ থেকে ৫৭ টাকা, বাসমতি ৬২ থেকে ৬৪ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এদিকে, ঊর্ধ্বমুখী সব ধরনের সবজির দাম। নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৭০-৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা, ঝিঙে ৫০ টাকা, উস্তে ৮০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ৪৫-৫০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩৫-৪০ টাকা, কচুরমুখি ৪৫-৫০ টাকা ও কাঁচকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
অথচ চারদিন আগেও প্রতি কেজি বেগুন ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০ টাকা, ঝিঙে ৩০-৩৫ টাকা, উস্তে ৬০ টাকা, কাকরোল ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০ টাকা, কচুরমুখি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।
কমছে না ভোজ্যতেলের দামও। দুই মাস ধরে সয়াবিনের বাজার রয়েছে চড়া। যা নিম্ন ও মধ্য আয়ের ভোক্তাদের পক্ষে কেনা খুবই কষ্টকর। খুচরা বাজারে সয়াবিন বোতলজাত তীর (৫ লিটার) ৭০০ টাকা, রুপচাঁদা (৫ লিটার) ৭০০ টাকা, ফ্রেশ (৫ লিটার) ৬৮০ থেকে ৬৮৫ টাকা, পুষ্টি (৫ লিটার) ৬৮০ থেকে ৬৮৫ টাকা, লুজ সয়াবিন প্রতি লিটার ১৩৮-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুই মাস আগে বোতলজাত তীর (৫ লিটার) ৬৫০ টাকা, রুপচাঁদা (৫ লিটার) ৬৫০ টাকা, ফ্রেশ (৫ লিটার) ৬৩০ টাকা, পুষ্টি (৫ লিটার) ৬৩০ টাকা এবং লুজ সয়াবিন প্রতিলিটার ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
গরুর মাংসের দাম বেশি হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের অধিকাংশ মানুষ ব্রয়লার মুরগি খেয়ে থাকে। অথচ ব্রয়লারের বাজার বেসামাল। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে। প্রায় তিন মাস ধরে দাম রয়েছে স্থিতিশীল।
বৃদ্ধি পেয়েছে মসুর ডাল ও চিনির দামও। নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মসুর ডাল (সরু দানা) ১১৫ টাকা, মসুর ডাল (মোটা দানা) ৯০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ দুই মাস আগে প্রতি কেজি মসুর ডাল (সরু দানা) ১০০ টাকা, মসুর ডাল (মোটা দানা) ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, চিনি ৬০ থেকে ৬২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
নগরীর বড় বাজারের দিনাজপুর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. ফারুক বলেন, ‘লকডাউনের কারণে চালের বাজার বাড়তি। লকডাউনের কারণে পাইকারি ব্যবসায়ীদের দুর্দিন কাটছে। দোকানে ক্রেতা নেই বললেই চলে।’
একই ভাবে মেসার্স সাগর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুর রব বলেন, ‘লকডাউনে চালের আমদানি কম থাকায় চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কঠোর লকডাউনের প্রথমদিন থেকে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়ে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বাজারে ক্রেতা খুবই কম, ব্যবসায়ীদের দুর্দিন চলছে।’
মেসার্স রাজিব ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. বেলাল হোসেন শিকদার বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের দুর্দিন চলছে। লকডাউনে ব্যবসা-বাণিজ্য এক প্রকার থামকে গেছে। ক্রেতাদের উপস্থিতি খুবই কম। গত তিনদিনে ৪৭ বস্তা চাল বিক্রি করেছি।’
দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘কঠোর লকডাউনের কারণেই চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী।’
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী খায়রুল আলম খোকন বলেন, ‘চালের বাজার একটু বাড়তি। লকডাউনের কারণেই দাম বেড়েছে।’
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. সাহেব আলী বলেন, ‘লকডাউনের কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বস্তা প্রতি অন্তত চার টাকা বেড়েছে।’
সূত্র: জাগো নিউজ
এম ইউ/০৫ জুলাই ২০২১