অপরাধ

দুই বন্ধু প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে

ঢাকা, ০৫ জুলাই – ঢাকা কাস্টম হাউসের ইমেইল অ্যাড্রেসের অনুরূপ আইডি খুলে প্রতারণার সাম্রাজ্য গড়েছে দুই বন্ধু। কাস্টমসে চাকরি কিংবা অকশনের পণ্য কম দামে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগ্রহীদের জোগাড় করে এক বন্ধু। আরেক বন্ধু করে কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে চাকরিপ্রার্থী বা পণ্য কিনতে আগ্রহীদের সঙ্গে বৈঠক। এরপর ইমেইলে ভুয়া নিয়োগপত্র বা অকশনের মালামাল বিক্রির চিঠি পাঠিয়ে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। প্রায় চার বছরে দুই বন্ধুর প্রতারণার শিকার হয়েছে বহু মানুষ।

গতকাল রবিবার এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, এ ধরনের বহু প্রতারণা হচ্ছে। কখনো যদি কেউ টাকা চেয়ে তাকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স থেকে শুরু করে নিয়োগপত্র দিতে, সবকিছু যদি একজন ব্যক্তিই যোগাযোগ করে; তাহলে সন্দেহের অবকাশ তাকে। যত বেশি মামলা হবে এই প্রতারক চক্র দমে যাবে। তিনি জানান, বেশির ভাগ সময়ই ভুক্তভোগীরা মামলা না করার কারণে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে প্রতারকরা। তাই প্রতারিত হলেই মামলা করতে হবে।

পুলিশ জানায়, ২০১৭ সালে প্রতারণা শুরু করে দুই বন্ধু ইব্রাহিম হোসেন রবিন ও মেহেদী হাসান খোকন। মানুষ ঠকাতে সাজে কাস্টমস কর্মকর্তা। কাস্টমসে স্টোরকিপারের চাকরির কথা বলে কিংবা অকশনের পণ্য কম দামে পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভনে অথবা পণ্য খালাসের কথা বলে আগ্রহীদের জোগাড় করে খোকন। তারপর আগ্রহীদের সঙ্গে কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে কথা বলে রবিন। আবার রবিন লোক জোগাড় করলে কর্মকর্তা সাজে খোকন।

ভুয়া নিয়োগপত্র, অকশন পণ্যের কোটেশন ও পণ্য খালাসের চিঠি তৈরি করে ঢাকা কাস্টম হাউসের অনুরূপ ইমেইল আইডি থেকে মেইল করে তারা। তারপর দফায় দফায় একেকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে বন্ধ করে দেয় যোগাযোগ।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, কাস্টমসের সব ধরনের কাগজপত্রই হুবহু নকল করতে পারে রবিন ও খোকন। এজন্য তাদের প্রতারণা ধরা খুবই কঠিন।

এক ভক্তভোগী বলেন, আইএসপি সম্পর্কিত যেসব প্রডাক্ট আছে যেমন মোটরসাইকেল। এগুলো দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা নেয়।

আরো এক ভুক্তভোগী বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার চাচাত ভাই থেকে প্রথমে ৪৫ হাজার নিয়েছে। মোট ৯০ হাজার টাকা নিয়েছে।

আরো একজন বলেন, যখন মাল দেওয়ার সময় আসে ও অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার দেওয়ার সময় আসে; তখনই টালবাহানা করা শুরু করে চক্রটি। অনেক দিন হয়ে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পারি, প্রতারণার শিকার হয়েছি।

ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম) উপকমিশনার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, প্রথমে একটা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিত। পরে মেইলের মাধ্যমে চাকরিপ্রত্যাশীদের আবেদন গ্রহণ করত। রবিন নিজেই অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার তৈরি করে পাঠাত। বিকাশের মাধ্যমে এই চাকরির নামে টাকা আদায় করত।

সাধারণত ডটগভডটবিডি ডোমেইনে ওয়েবসাইট ও ইমেইল অ্যাড্রেস তৈরি করে থাকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু ঢাকা কাস্টমসের মেইল আইডি ইয়াহুতে। এ কারণেই প্রতিষ্ঠানটির মেইল আইডির অনুরূপ আরেকটি মেইল আইডি সহজেই খুলতে পেরেছে প্রতারকরা। ঢাকা কাস্টম হাউস সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।

সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ
এন এইচ, ০৫ জুলাই

Back to top button