ঝলমলে আলোকোজ্জ্বল করে তুলুন আপনার অন্ধকার গৃহ
শহরের বাসিন্দা মাত্রই জানেন, কিছু কিছু এলাকায় বাসা থাকলে এক টুকরো নীল আকাশের দেখা পাওয়া কতটা ভাগ্যের ব্যাপার। কংক্রিটের ঠাসবুনটে আঁটা শহরে ঘরের ভেতরে আলো কতটাই বা পৌঁছায়। দিব্যি রৌদ্রোজ্জ্বল দিনেও ঘরের মাঝে জমে থাকে আঁধার। কী করবেন তাহলে? এই আঁধার ঘরেই কাটিয়ে দেবেন জীবন? নাহ, বরং এই ঘরেই নিয়ে আসুন আলোর খেলা, সহজ কিছু কৌশলে।
১) উষ্ণ আলো
বাইরের আলো যথেষ্ট না হলে অবশ্যই ঘরের ভেতরে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এই আলো যদি সাধারণ টিউবলাইট বা এনার্জি সেভার বাল্বের মতো হয় তবে ঘরে একটা কৃত্রিম, শীতল ভাব দেখা দেবে। উষ্ণ, কোমল আভার হলদেটে আলো ব্যবহার করুন। এই আলো থাকতে পারে ল্যাম্প শেডের পেছনে, যাতে আলোটাকে বেশি প্রাকৃতিক মনে হয়, হঠাৎ করে ঘরে ঢুকলেই যেন আলোটা চোখে না লাগে।
২) আলোকিত মেঝে
অনেকের বাড়িতেও অন্ধকারটা থাকে মেঝের আশেপাশে। আপনি যদি ঘর সাজাতে চান একটু আধুনিক ধাঁচে, তাহলে মেঝের পাশের দেয়ালে স্কার্টিং বরাবর ব্যবহার করতে পারে এলইডি লাইটের স্ট্রিপ। এছাড়াও এগুলো ব্যবহার করতে পারেন অন্ধকার বাথরুমে সিংকের নিচে, বুকশেলফের আশেপাশে, কিচেন কাউন্টারের নিচে। আরেকটি কাজ করতে পারেন তা হলো মরিচ বাতি বা ফেইরি লাইটস ব্যবহার। এগুলো আটকে দিতে পারেন দরজা এবং জানালা ঘিরে, বিছানার পাশে। এতে পুরো ঘরেই চমৎকার শৈল্পিক একটা ভাব আসবে। ঘরে যদি এই দুই ধরণের আলো ব্যবহারের মতো যথেষ্ট জায়গা না থাকে তাহলে সিলিং থেকে ঝুলিয়ে দেবার মতো বাতিগুলো আপনার জন্য ভালো হতে পারে। এগুলো সবদিকে আলো ছড়ায় এবং অন্ধকার ঘরের জন্য ভালো।
৩) নিয়ম মেনে বাতি রাখুন
একটা ঘরের জন্য কতখানি আলো প্রয়োজন? এই নিয়মটি মেনে চলতে পারেন। একটি ঘরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ফুটে মেপে নিন। এই দুটোকে গুণ করে নিন। এবার এই গুণফলকে গুণ করুন ১.৫ দিয়ে। যে সংখ্যা পাবেন, তত ওয়াট আলো দরকার হবে পুরো ঘরে। এই পরিমাণ আলো পাওয়ার জন্য তিন ধরণের বাতি রাখতে পারেন ঘরটায়। এক হলো অ্যামবিয়েন্ট লাইট, যা প্রাকৃতিক আলোর মতো ঘরে সারাক্ষণ জ্বালানো থাকবে। আরেক ধরণের বাতি হলো টাস্ক লাইট, যেমন টেবিল ল্যাম্প যা শুধু কাজের সময়ে জ্বালানো হয়। আরেকটি ধরণের বাতি হলো অ্যাকসেন্ট লাইট, যা কিনা ঘরটাকে সুন্দর এবং মনোরম দেখাতে সাহায্য করে।
৪) প্রাকৃতিক আলো অবাধে ঘরে আসতে দিন
অন্ধকার ঘরে ভারি পর্দা ব্যবহার করবেন না। হালকা রং ও ফেব্রিকের পর্দা ব্যবহার করুন যা কিনা জানালা থেকে একেবারেই সরিয়ে দেওয়া যায়। জানালার বাইরে অনেকে টবে গাছ রাখেন। এগুলোকে এমনভাবে সরিয়ে রাখুন যাতে এগুলো আলো আটকে না দেয়। একই কারণে জানালার সামনে কোনো ফার্নিচার বা শো-পিস না রাখাই ভালো।
৫) দেয়ালের রং
দেয়ালে নিজের পছন্দের রং দিতে ইচ্ছে হতে পারে আপনার। কিন্তু এটা মনে রাখবেন যে ছোট এবং অন্ধকার ঘরের জন্য সাদা রংটাই সবচাইতে ভালো। তবে সাদা রঙ্গেরও কিছু ধরণ আছে। আপনি নিজের পছন্দের সাদা রংটি বেছে নিতে পারেন।
৬) ফার্নিচার রাখুন হালকা
ছোট এবং অন্ধকার ঘরে গাড় রঙের ফার্নিচার যেমন আলো শুষে নেবে, তেমনি ভারি ফার্নিচারটাও বেমানান লাগবে। এমন সব ফার্নিচার রাখুন যা হালকা উপাদানে তৈরি, ছোটখাটো এবং রংটাও হালকা। চেয়ার টেবিল, শেলফ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন ফার্নিচার বেছে নিন যাতে ফ্লোর দেখা যায়। এক ধাক্কায় ঘরটা অনেক আলোকিত মনে হবে। জবড়জং ডিজাইনে সাজানো ফার্নিচার, অতিরিক্ত ফার্নিচার বর্জন করুন।
৭) ঘর সাজান আয়না এবং মেটাল দিয়ে
আলোর প্রতিফলন ঘটায় এমন যে কোনো অনুষঙ্গ আপনার ঘরে আলো বাড়িয়ে দেবে। আয়না রাখলে ঘরটাকে এমনিতেই প্রশস্ত এবং বড় দেখাবে। আর ঘর সাজানোর উপকরণ যদি মেটালের হয় তাহলেও ঘরটাকে আলোকিত লাগবে।
৮) ঘরে ছড়িয়ে রাখুন রং
ঘরের এখানে সেখানে একটু একটু করে রঙের ছোঁয়া রাখুন। তা হতে পারে উজ্জ্বল রঙ্গিন একটা ফটো ফ্রেম, ডাইনিং টেবিলে বোলে সাজিয়ে রাখা কতোগুলো ফল, রঙ্গিন ক্রোকারিজ, ফুলদানিতে ফুল, রঙ্গিন শো পিস অথবা সোফার কুশন। এগুলো চট করে ঘরটাকে উজ্জ্বল দেখাতে কার্যকর। এছাড়াও ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট টবে বাহারি গাছ রাখতে পারেন।
এসব কৌশল তো কাজে লাগাতেই পারেন। তবে সবচাইতে সহজ কৌশলটি সবাই জানেন, কিন্তু ব্যবহার করেন না। তা হলো ঘরটাকে গুছিয়ে রাখা। অগোছালো ঘরটাকে ছোট এবং অন্ধকার লাগবেই। সুতরাং অন্য কোনো পরিবর্তন আনার আগে ঘরটাকে গুছিয়ে নিন সুন্দর করে।
এম ইউ