চীন

চীনে চমৎকার ঈদ আয়োজনে আমরা

সিচুয়ান, ১৮ জুন-চীনের সিচুয়ানের লুঝৌ ছোট শহর। এমনকি অনেক চীনারাও এই শহরের নাম জানে না।

ইয়াংজে ও থুও নদীর মিলনস্থলে গড়ে ওঠা সবুজ আর ছিমছাম এই শহরটি খুব সুন্দর। এই শহরের অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সাউথওয়েস্ট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি’। সদ্য ‘মেডিক্যাল কলেজ’ থেকে ‘মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি’ হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়টা অবশ্য খুব বেশি বিখ্যাত নয়।

ছোটখাটো শহরের এই ছোট বিশ্ববিদ্যালয়টিই আমাদের মতো কিছু বাংলাদেশিদের জন্য দেশ-বাড়িঘর থেকে অনেক দূরে ‘দ্বিতীয় বাড়ি’। এখানে গোটা চল্লিশেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আর একজন ফ্যাকাল্টি সদস্য মিলে চমৎকার এক বাংলাদেশি কমিউনিটি গড়ে উঠেছে, যারা কিনা নিজেদের সমাজ-সংস্কৃতির চর্চা নিয়মিত অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

পুরো রমজান মাস একসাথে ইফতার, সেহরি, নামাজ ইত্যাদি কখনোই আমাদের মনে হতে দেয়নি, আমরা দেশ থেকে অনেক দূরে আছি। প্রতিবেশী পাকিস্থানি, ভারতীয় এবং আফ্রিকান শিক্ষার্থীরাও অনেক সময়ে যোগ দিয়েছে। ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনন্য নিদর্শন।

এবারের ঈদুল ফিতরকে ঘিরে আমাদের ছিল চমৎকার আয়োজন। ঈদের পরদিন যেহেতু সাপ্তাহিক ছুটির দিন, ঈদ আয়োজনের পরিকল্পনা তাই বেশ সহজই ছিল।

শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত কিন্তু অতি-উৎসাহী পরিশ্রমের ফলে এই ঈদ আয়জনে ছিল একসাথে ঈদের নামাজ, রান্নাবান্না, সুন্দর এক প্রাকৃতিক উদ্যানে খোলা আকাশের নিচে খাওয়া-দাওয়া, তারপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এই অনুষ্ঠানের আকর্ষণ ছিল হামদ, নাদ, দেশের গান, পল্লীগীতি, আঞ্চলিক ভাষায় তর্ক, কৌতুকাভিনয়, রম্য-কবিতা ইত্যাদি। এছাড়াও ছিল দেশীয় খেলার আয়োজন, যেমন- ছেলেদের মোরগ লড়াই, মেয়েদের ভারসাম্য দৌড় এবং ‘বালিশ পাসিং’ (কেউ কেউ নাম দিয়েছে ‘সতিনের ছেলে কার কোলে’) খেলা।

শেষ আয়োজন ছিল মধ্যরাতে টান টান উত্তেজনাপূর্ণ বিশেষ ফুটবল ম্যাচ। বাংলাদেশ লাল দল এবং সবুজ দলের মধ্যে এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত সময়ের ১১০ মিনিটে ৩-৩ গোলে খেলা ড্র হয় এবং টাইব্রেকারে লাল দল জয়ী হয়।

নিজেদের পরিবার-পরিজনদের থেকে অনেক দূরে বিদেশ-বিভুঁইয়ে ঈদ তেমন আনন্দের হয় না সাধারণত। অথচ এই ছোট শহরের ছোট এক বাংলাদেশি পরিবারের একাত্ম হয়ে দেশীয় আবহে এই ঈদ উদযাপন নিজদের দেশ এবং সংস্কৃতির প্রতি সম্মান এবং ভালোবাসারই নিদর্শন।

সূত্র: বিডিনিউজ২৪

Back to top button