পশ্চিমবঙ্গ

ভোট–পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ভূমিকায় আদালতের অসন্তোষ

কলকাতা, ০৪ জুলাই – ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ যেভাবে ভোট-পরবর্তী হিংসা-হামলার ঘটনার তদন্ত করেছে, তা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করে পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, রাজ্য প্রশাসন হামলায় আক্রান্তদের আতঙ্ক দূর করার মতো পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। ভোট-পরবর্তী সহিংসতার সব ঘটনায় এফআইআর দায়ের করার জন্য শুক্রবার পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে বলেছে, যে-সব নাগরিক ওই সব হিংসার ঘটনার শিকার, আদালতে তাদের গোপন জবানবন্দিরও ব্যবস্থা করতে হবে।

রাজ্য সরকারের বক্তব্য, তারা এই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার অনুরোধ (রিভিউ পিটিশন) জানাবে হাই কোর্টে। কারণ, সরকার মনে করছে, এই মামলায় আদালতে নিজেদের বক্তব্য পেশ করার পর্যাপ্ত পরিসর মেলেনি। সহিংসতার ঘটনায় প্রশাসন কী কী পদক্ষেপ করেছে এবং কোথায় কোথায় অভিযোগের সত্যতা মেলেনি, তার নির্দিষ্ট তথ্য সরকারের কাছে রয়েছে এবং তারা সেই তথ্য ফের আদালতে তুলে ধরবে। কোনও একপেশে বক্তব্য আদালতে প্রতিষ্ঠিত হতে দিতে চায় না রাজ্য সরকার।

উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ, হামলায় আক্রান্তদের অনেকে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য সরকারকেই। আক্রান্তদের রেশন কার্ড যদি হারিয়ে যায়, তা হলেও তাদের রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভোটের পরে অভিজিৎ সরকার নামে কলকাতার এক বিজেপি কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তার ময়নাতদন্তের পরেও স্বজনদের অনুরোধ ছিল, দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত করতে হবে। এ দিন আদালত নির্দেশ দিয়েছে, দেহটির দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত করতে হবে আলিপুরের সেনা হাসপাতালে। অভিজিতের মৃতদেহ আরজি কর হাসপাতালে রাখা আছে।
রাজ্য পুলিশের অনেকের অভিমত, সাম্প্রতিককালে এমন নির্দেশ নজিরবিহীন। ওই দেহ মর্গেই রয়েছে। প্রথম বার ময়নাতদন্তের পরে দেহ ঠিকমতো সংরক্ষণ করা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে পুলিশের একাংশের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে। এ দিন আদালত নির্দেশ দিয়েছে, কমান্ড হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল গড়তে হবে। দেহটি ঠিকমতো সংরক্ষণ করা হয়েছিল কি না, সেই বিশেষজ্ঞ দলকে তাদের রিপোর্টে সেটা নির্দিষ্টভাবে জানাতে বলা হয়েছে।

ভোট-পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে কোর্টে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট জমা দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তদন্ত চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে কমিশনকে। তবে কমিশনের অন্তর্বর্তী রিপোর্ট এখন প্রকাশ্যে আনা হবে না বলে জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। ওই রিপোর্টের পাঁচটি সেট হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা থাকবে।

গত মঙ্গলবার কমিশনের এক কর্মকর্তা যাদবপুরে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের আক্রমণের মুখে পড়েন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন সেই ঘটনায় নিষ্ক্রিয় ছিল। এ দিন আদালত সেই ঘটনায় কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ সুবার্বন) রশিদ মুনির খানকে নোটিস পাঠিয়েছে। আদালতের নির্দেশ অবমাননায় কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তাকে তার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

রাজ্যে ভোটের ফল ঘোষণার পরে হামলার অভিযোগ করেন বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকেরা। বিজেপির অভিযোগ, তাদের কর্মীদের উপরে হামলা হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ ব্যাপারে একাধিক জনস্বার্থ মামলাকে একত্র করে শুনানি চলছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন গোড়া থেকে অভিযোগ না-পাওয়ার কথা বললেও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে বহু অভিযোগ জমা পড়েছে। আতঙ্কে অনেক অভিযোগকারী নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।

মানবাধিকার কমিশন এই তদন্তে যে-কমিটি গঠন করেছে, তাদের সঙ্গে সব রকমের সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে বলে এ দিন ফের রাজ্য সরকারকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট। নির্দেশে বলা হয়েছে, কোনও রকমের গাফিলতি হলে বিরূপ নির্দেশ দেওয়া হবে। কমিটির সঙ্গে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থাকেও। রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ২ মে-র পর থেকে রাজ্যের স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্ট এবং বিভিন্ন কন্ট্রোল রুমের কল-লগ জোগাড় করে কমিটিকে এবং কোর্টকে দিতে হবে। সহিংসতার ঘটনায় কারা গ্রেফতার হয়েছে, কারা জামিনে ছাড়া পেয়েছে, তাদের তালিকাও পুলিশকে নির্দিষ্টভাবে জমা দিতে হবে কোর্টে। পরবর্তী শুনানি হবে ১৩ জুলাই।

সূত্র: বিডি প্রতিদিন
এম ইউ/০৪ জুলাই ২০২১

Back to top button