চট্টগ্রাম

জট এড়াতে চট্টগ্রাম বন্দর জেটি থেকে কনটেইনার সরানোর নির্দেশ

চট্টগ্রাম, ০২ জুলাই – কঠোর বিধিনিষেধে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। সদ্যবিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্গো, কনটেইনার ও শিপ হ্যান্ডলিয়ে পড়েনি করোনার মহামারীর প্রভাব। উপরন্তু করোনার মহামারীতেও চট্টগ্রাম বন্দর ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার সুফল মিলেছে। আমদানি-রপ্তানির অধিকাংশ কাজ সমাপ্ত হওয়া এই বন্দরে ৪৯ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার রাখার ধারণক্ষমতা রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে।

তবে কঠোর লকডাউনের কারণে সীমিত পরিসরে জনবল নিয়ে চলছে বন্দরের কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে কন্টেইনার জটের আশঙ্কা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাই পরিস্থিতি ঠেকাতে আগাম প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। বন্দরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ইয়ার্ডে রাখা কন্টেইনার ডিপোতে সরাতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিশ পাঠাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকার বিএম কন্টেইনার ডিপোকে চিঠি পাঠিয়ে তিনদিনের মধ্যে কন্টেইনার সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক।

চিঠিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিপোতে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। বর্তমানে ডিপোগামী কন্টেইনার মজুদ আছে ২৯ হাজার ২২৪ টিইইউএস। এছাড়াও পাইপলাইনে ২ হাজার ৪৩৭ টিইইউএস কন্টেইনার ভর্তি জাহাজ ঘাটে বার্থিংয়ের জন্য অপেক্ষায় আছে। তাই বন্দরে কনটেইনার জট এড়াতে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোকে তাদের ২৫১ টিইইউএস আমদানিকৃত লোড কন্টেইনার সরিয়ে নিতে হবে আগামী তিনদিনের মধ্যে।

বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরে জট এড়াতে আমদানিকারকদের কন্টেইনার সরাতে চিঠি দেয়া হচ্ছে। বন্দরে অপারেশনাল কাজে গতিশীলতা আনতে কন্টেইনারগুলো সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন। জাহাজ হতে কন্টেইনার অবতরণের ৪ দিনের বিএল এর অন্তর্ভুক্ত সকল কন্টেইনার ডিপোতে নেয়া যায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে বন্দরের ভেসেল অপারেশন, ইয়ার্ড অপারেশনসহ আমদানি কন্টেইনার অপারেশন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় কন্টেইনারসমূহ ডিপোতে দ্রুত স্থানান্তর করা জরুরি।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার রাখার ধারণক্ষমতা রয়েছে ৪৯ হাজার টিইইউএস। ১ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৭ হাজার ৩২৮ টিইইউএস। এর মধ্যে আমদানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২ হাজার ৮৭১ ও রপ্তানি ৪ হাজার ৪৫৭ টিইইউএস। এছাড়া ডেলিভারি হয়েছে ৩ হাজার ৯৪৯ টিইইউএস কন্টেইনার। আর বন্দের কন্টেইনার রয়েছে ৩৪ হাজার ৩৮ টিইইউএস।

সদ্যবিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে অর্জিত প্রবৃদ্ধি করোনাকেও হার মানিয়েছে। গেল ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিয়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশে। এছাড়া কন্টেইনারে ৩ দশমিক ৯ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। দেশের অন্যতম প্রধান এই সমুদ্রবন্দরে সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে মোট কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১১ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৩ মেট্রিক টন পণ্য। কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৬ টিইইউস এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং হয় ৩ হাজার ৯২টি। এর মধ্যে বাংলাদেশে খোলা পণ্য আমদানি হয়েছে ১০ কোটি ৬২ লাখ ৩৫ হাজার ৩৪৪ মেট্রিক টন এবং রপ্তানি হয়েছে ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার ২৯ মেট্রিক টন। অন্যদিকে কন্টেইনার ভর্তি পণ্য আমদানি হয় ১৬ লাখ ৫৮ হাজার ৩৩০ টিইইউএস এবং রপ্তানি হয় ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৬ টিইইউএস।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন বন্দরে আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে ২৭ দফা নির্দেশনা দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. মমিনুর রশিদের সই করা নির্দেশনায় বলা হয়, জরুরি পরিষেবা বিবেচনায় বন্দরের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। পরিচালন কার্যক্রম স্বাভাবিক সময়ের মতো ২৪ ঘণ্টা সচল থাকবে।

কঠোর বিধিনিষেধের সময় বন্দর থেকে পণ্য খালাস নেয়ার কাজ দ্রুত করতে শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ যেসব ব্যবহারকারী রয়েছে, তাদের সহায়তা দিতে ব্যাংক, কাস্টমস, পরমাণু শক্তি কমিশন, উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট অফিসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারদের ন্যূনতম জনবল রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমদানি পণ্য চালানের ডিও বা সরবরাহ আদেশ ইস্যুর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এছাড়া আমদানিকারকেরা যাতে পণ্য খালাস করে বন্দর কার্যক্রম সচল রাখেন, সে কথাও নির্দেশনায় বলা হয়েছে।

বন্দর কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি ডিপো, শিপিং এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, বার্থ অপারেটর প্রতিষ্ঠানের যানবাহন চলাচলে এবং তাদের শ্রমিক, কর্মচারী-কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে যাতায়াতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া আমদানি–রপ্তানি পণ্যবাহী যানবাহন যাতে সড়কে ঝামেলামুক্ত থাকে, সেজন্য বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগকে গাড়িতে বিশেষ স্টিকার লাগানোর ব্যবস্থা করতে নির্দেশনায় বলা হয়।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
এম এউ, ০২ জুলাই

Back to top button