ঢাকা, ০২ জুলাই – ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা বিতর্কিত টিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম ঘন ঘন ‘অসুস্থ’ হন। আর এই কারণে কারাগারের চেয়ে বেশি সময় ধরে হাসপাতালেই থাকেন তিনি। অসুস্থতার কথা বলে দুই মাস ধরে শামীম বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন।
কারা সূত্রে জানা যায়, দুই মাস আগে ডান হাতের ব্যথা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আসেন শামীম। হাসপাতালে যাওয়ার পর তার করোনা হয়েছিল বলেও শোনা গেছে। তবে চিকিৎসার পর শামীম এখন সুস্থ। গ্রেপ্তারের পর টানা আট মাসও তার হাসপাতালে থাকার রেকর্ড আছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘জিকে শামীম বেশকিছু দিন ধরে হাসপাতালে। তার ডান হাতের সমস্যা ছিল। হাসপাতালে যাওয়ার পর তিনি করোনা আক্রান্ত বলে শুনেছিলাম। তবে এখন সুস্থ হয়েছেন।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি (শামীম) অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে আসেন। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তবে তার করোনা হয়েছি এমন খবর আমার জানা নেই।’
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মধ্যে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতনে শামীমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই, আটটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা বলা হয় র্যাবের পক্ষ থেকে।
জি কে শামীম গ্রেপ্তারের পর তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্সের হাতে থাকা সরকারি প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের কার্যাদেশ বাতিল হয়। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, অস্ত্র ও মাদক আইনে তিনটি মামলা হয়েছে। সবকটি মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে জমা হয়েছে। বর্তমানে মামলাগুলো বিচারাধীন রয়েছে। সাতজন সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করা জি কে শামীম কাকে কাকে নিয়মিত চাঁদা দিতেন জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিয়েছেন বলে তদন্ত সূত্রে জানা গেছে।
মাদক আইনে মামলা
মাদক আইনের মামলায় জি কে শামীমের বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
দুদকের মামলা
২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক সালাউদ্দিন বাদি হয়ে মামলটি করেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। সেখানে জি কে শামীমের ওইসব সম্পদ অর্জনের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া জি কে শামীমের বাসা থেকে পাওয়া নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও ৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রারও বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।
তদন্তে জি কে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের নামে ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর, মায়ের নামে আরও ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ব্যবসার অংশীদারিত্বের বৈধ কোনো উৎসও খুঁজে পায়নি দুদক।
এছাড়া জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানির শেয়ার, গাড়ি ও এফডিআর বাবদ ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। মামলাটি বর্তমানে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
অর্থপাচারের মামলা
র্যাব-১ এর নায়েব সুবেদার মিজানুর রহমান বাদি হয়ে গুলশান থানায় জিকে শামীম ও তার ৭ জন সহযোগীর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারি আইনে মামলাটি করেন। গত বছরের ৪ আগস্ট সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াড আবু সাঈদ মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০২০ সালের ১০ নভেম্বর জিকে শামীম ও তার দেহরক্ষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক হাফিজুর রহমানের আদালতে বিচারাধীন।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বলেন, জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলাগুলোর বিচার চলছে। একটি মামলায় স্বাক্ষী না আসায় নতুন দিন ধার্য করেছে আদালত। আর করোনার কারণে বাকি মামলাগুলোর খবর এখন বলতে পারছি না।
সূত্র : ঢাকাটাইমস
এন এইচ, ০২ জুলাই