ঢালিউড

১০০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: তারকাদের স্মৃতি

শাহ আলম সাজু

ঢাকা, ০২ জুলাই – বহু ইতিহাসের সাক্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই একটি ইতিহাস। দেশের অনেক গুণী মানুষের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এটি। অনেক তারকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এটি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার স্মৃতি নিয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন ড. ইনামুল হক, দিলারা জামান, চঞ্চল চৌধুরী ও ফেরদৌস।

আমার জীবনের সেরা সময় কাটিয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে: ড. ইনামুল হক

আমার জীবনের সোনালী সময় কাটিয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওটাকে আমি সত্যিকারের স্বর্ণযুগ মনে করি। আমার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে গেছে সেই সময়গুলো।

৬০ এর দশকটাই আসলে অন্যরকম ছিল। সেই দশকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। ১৯৬৪ সালে পাশ করে বের হই।

আমার বিষয় ছিল রসায়ন। নটরডেম কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করে আমরা কয়েক বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই।

প্রথম দিন যে স্যারের ক্লাস করেছিলাম তার নামটি মনে পড়ে না। কিন্তু এতো সুন্দরভাবে তিনি ক্লাস নিয়েছিলেন, তা আজও মনে গেঁথে আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার রোল ছিল এক। এ জন্য ক্লাসের সবাই একনামে আমাকে চিনত। স্যাররাও আমাকে স্নেহ করতেন।

আমি থাকতাম ফজলুল হক হলে। আমার রুম নম্বর ছিল ১২৩। হলের স্মৃতি বড়ই মধুর, কোনোদিন ভুলব না। হলে সিনিয়র হিসেবে পেয়েছিলাম ড. ওয়াজেদ মিয়াকে। তিনি আমাকে ভীষণ স্নেহ করতেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই নাটকের সঙ্গে জড়াতে থাকি। কঠিন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করেও আমি সাংস্কৃতিক মনা ছিলাম। ছাত্র রাজনীতিও করেছি। হল শাখার ছাত্র সংসদে আমি একটি পদে ছিলাম।

টিএসসিতে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতাম। মধুর ক্যান্টিনে অবশ্য কম যেতাম।

আমার প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একশ বছরে পা দিচ্ছে, এটা আমার জন্য বিশাল আনন্দের ব্যাপার। এক জীবনে কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে, কত মায়া জড়িয়ে আছে। সবার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে প্রাণের ক্যাম্পাসের কথা।

ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন: দিলারা জামান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম আমি। বিখ্যাত শিক্ষকদের আমি পেয়েছিলাম সে সময়ে। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। আরও অনেক বিখ্যাত মানুষকে পেয়েছি শিক্ষক হিসেবে। শহীদ মুনীর চৌধুরী, আনিসুজ্জামান, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, আরও কতজন।

তাদের কাছে যা শিখেছি, তা আজও চলার পথের পাথেয় হয়ে আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই নাটকে অভিনয় শুরু করি। তখন তো ছেলেরা মেয়ে সেজে অভিনয় করত। একবার এক নাটকে অভিনয় করতে হবে, কিন্তু কোনো মেয়ে সাহস পাচ্ছে না। মুনীর চৌধুরী স্যার আব্বাকে একটি চিঠি লিখলেন। তারপর আব্বা রাজী হয়েছিলেন।

মায়াবী প্রহর নামে ডাকসু থেকে একটি নাটকে সেই সময়ে অভিনয় করেছিলাম। আবদুল্লাহ আল মামুন সহ অনেকে অভিনয় করেছিলেন সেই নাটকে।

আমাদের সময় তো এখনকার মতো অবস্থা ছিল না। অনেক কিছু মেনে চলতে হতো। আমি ক্লাস করতাম বাসা থেকে, হলে থাকা হয়নি।

অনেক বিখ্যাত মানুষ আমার সহপাঠী ছিলেন। মতিয়া চৌধুরী অন্য বিভাগে থাকলেও আমার সহপাঠী ছিলেন। আরও অনেক রাজনীতিবিদ ছিলেন। আমি নিজেও তখন ছাত্র ইউনিয়ন করেছি।

আমি প্রায়ই নস্টালজিক হই। সেই দিনগুলোর কথা মনে পরে। অসাধারণ সময় কাটিয়েছি।

চারুকলার বকুলতলাকে ভীষণ মিস করি: চঞ্চল চৌধুরী

আমার জীবনের সেরা সময় কাটিয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এতো বর্ণীল জীবন বোধ হয় আর কখনও আসবে না।

চারুকলার বকুলতলাকে ভীষণ মিস করি। বকুলতলায় চৈত্রী সংক্রান্তি পালিত হতো। আরও কতো অনুষ্ঠানই করতাম ওখানে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় পাবলিক লাইব্রেরীতে প্রায়ই দুপুরের খাবার খেতাম। শাহবাগে কোহিনূরের দোকান থেকে চা খেতাম।

আমার রুম নম্বর ছিল ৬২। জগন্নাথ হলে থাকতাম। তবে নিয়মিত হলে থাকা হতো না। বড় ভাইয়ের বাসায় থাকতাম। পরীক্ষা এলেই হলে চলে যেতাম।

হলে থাকতে বহু চাঁদনি রাত হলের মাঠে বসে গান করে পার করে দিয়েছি। একদিকে আকাশ ভরা চাঁদ, আরেকদিকে গলা ভরা গান। তারপর ভোরবেলা গরম গরম পরোটা খেতে হাঁটা দিতাম চানখার পুলের দিকে।

টিএসসিতে দিনের পর দিন আড্ডা দিতাম। কত সুন্দর সময় কেটেছে।

আমি গর্ববোধ করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে। ক্যাম্পাসটাকে খুব মিস করি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে গর্ববোধ করি: ফেরদৌস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র ছিলাম আমি। এটা আমার জন্য আনন্দের ও গর্বের। আজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে গর্ববোধ করি।

আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছর পূর্তি, এটা ভাবতেই আনন্দে মনটা ভরে যায়। কত স্মৃতি এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। আর সব ভুলে গেলেও সেই স্মৃতি ভুলে যাওয়া সম্ভব না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে অনেক দিয়েছে, অনেক শিখেছি। আমার জীবনের সব ভালো অর্জনের মধ্যে ঢাবিতে পড়াটাও একটি। আজকের এই বিশেষ দিনে শিক্ষকদের ও ঢাবির বন্ধুদের খুব মিস করছি।

এন এইচ, ০২ জুলাই

Back to top button