রূপচর্চা

জেনে নিন আপনার ত্বকের ধরন এবং ত্বক বুঝে করুন যত্নআত্তি

ত্বকের যাবতীয় সমস্যার সুত্রপাত এর প্রতি অযত্ন থেকে। ত্বকের উপরিভাগে মরা কোষ, ঘাম, তেল ও ময়লা ঘিয়ে থাকে। এই অংশ নিয়মিত পরিষ্কার না করলে ত্বক হয়ে ওঠে অস্বাস্থ্যকর ও নির্জীব। ঠিকমতো পরিষ্কার না করলে এই সেবাম ত্বকের ছিদ্রের মুখে জমে এবং এর ফলে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে শুরু করে। এই অপরিচ্ছন্ন ছিদ্রতেই হোয়াইটহেডস এবং ব্ল্যাকহেডস হয়। মেকআপ ও অন্যান্য নোংরা পরিষ্কার করার জন্য বিশেষ যত্ন নিতে হবে।

ত্বকের ধরন
ত্বক তিন ধরনের হয় – শুষ্ক, স্বাভাবিক ও তৈলাক্ত। আপনার ত্বক কেমন তা জানার জন্য একটি ছোট আয়না মুখের ওপর চেপে ধরুন। কপাল, নাকের চারপাশ ও চিবুকের অংশ আয়নায় দেখলেই বুঝতে পারবেন ত্বকের ধরন। বেশি তেলতেলে হলে বুঝবেন তৈলাক্ত। আয়নায় তেল তেমন না জমলে তা স্বাভাবিক। শুষ্ক ত্বক হলে কাচে একেবারেই কোনো দাগ লাগবে না।

অনেকের অবশ্য এর মাঝামাঝি ত্বকও হয়। যেমন শুষ্ক থেকে স্বাভাবিক বা স্বাভাবিক থেকে তৈলাক্ত। এটা অবশ্য বেশি বোঝা যায় আপনার টি জোন থেকে, যা আপনার কপাল ও নাক নিয়ে গঠিত। এই অংশেই সেবাশাস গ্ল্যান্ড বেশি কার্যকর হয়, ফলে ত্বকের ওই অংশ তৈলাক্ত হয়ে ওঠে।

শুষ্ক ত্বক
শুষ্ক ত্বক তাদেরই হয় যাদের সেবাশাস গ্রন্থি থেকে কম সেবাম ক্ষরণ হয়। সংবেদনশীল এই ত্বকের ছিদ্র একেবারেই খোলা নয় এবং দেখতে হয় অত্যন্ত অনুজ্জ্বল। এই ধরনের ত্বকে বলিরেখা তাড়াতাড়ি পড়ে, বিশেষ করে চোখ ও মুখের চারধারে। খুব বেশি বাতাস, খুব ঠাণ্ডা বা গরম, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ত্বকের শুষ্কতা আরো বেড়ে যায়।

যত্ন করে পরিষ্কার, ত্বকের মরা কোষ ঝরানো, নিয়মিত ময়েশ্চারাইজ করা, লুব্রিকেশন – এগুলো শুষ্ক ত্বকের জন্য জরুরি। অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল ইত্যাদি ভিটামিন ই সমৃদ্ধ তেল শুষ্ক ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিম বেসের ক্লেনজার উপকারী। অ্যালকোহল সমৃদ্ধ ক্লেনজার শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা ব্যবহার করবেন না। কারণ এটি ত্বককে আরো শুষ্ক করে তোলে।

স্বাভাবিক ত্বক
স্বাভাবিক ত্বক মসৃণ ও সুন্দর হয়। আর্দ্রতা থাকার কারণে ত্বক খুব শুষ্কও হয় না আবার তৈলাক্তও হয় না। কোথাও সেবামের ক্ষরণও যেমন অনুভূত হয় না, তেমন শুষ্কও বোধ হয় না। তবে এই ধরনের ত্বক বয়সের সাথে সাথে শুষ্ক হতে শুরু করে। ফেসওয়াশ ও পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে পারেন বিশেষ উপায়ে। নরম ব্রাশে সাবান বা ফেসওয়াশ লাগিয়ে ত্বকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে লাগান এবং তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে রক্ত চলাচল খুব ভালো হয়। চোখের চারপাশে আমন্ড অয়েল লাগাতে পারেন। ত্বকেও আমন্ড বেসড প্রসাধনী ব্যবহার করুন।

তৈলাক্ত ত্বক
সেবামের অতিরিক্ত ক্ষরণই তৈলাক্ত ত্বকের মূল কারণ। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিতে ও নারীদের ঋতুস্রাবের সময় এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। ত্বক চকচকে হয়ে যায় এবং ত্বকে ব্রণ ও অ্যাকনে বেশি হয়। নাক, কপাল, চিবুক ও গালে এই তৈলাক্ত ভাব বেশি দেখা যায়। ত্বকের ছিদ্র বেশি খুলে যাওয়ার জন্য এই ধরনের ত্বকে অ্যালার্জি বা ওই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে তৈলাক্ত ত্বকে বলিরেখা কম পড়ে। অ্যারোমাসমৃদ্ধ তেল যেমন চন্দন তেল ব্যবহার করতে পারেন এই ত্বকে। ত্বকে জৌলুস আনার জন্য চন্দন তেলের ব্যবহার বহু প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। অ্যাকনে বা ব্রণ প্রতিরোধ করতেও চন্দন তেল উপকারী। ত্বক তৈলাক্ত হলেও দিনে তিনবারের বেশি ত্বকে সাবান বা ফেসওয়াশ ব্যবহার করা উচিত নয়। কোনো ধরনের ফোমিং ক্লেনজার এবং জেলও তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালো।

মিশ্র ত্বক
কিছুটা শুষ্ক, কিছুটা স্বাভাবিক এবং কিছু তৈলাক্ত হয় এই ধরনের ত্বক। গাল স্বাভাবিক হলেও এই ধরনের ত্বকে টি-জোন হয় তৈলাক্ত। এই ধরনের ত্বক একটু অদ্ভুত হয় তাই খুব সাবধানে পরিষ্কার করা দরকার। ভালো ফেসওয়াশ ও ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। মুখের ত্বকের প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার লাগান। যে অংশ শুষ্ক সেই অংশে ময়েশ্চারাইজার লাগালেও অন্য অংশে লাগাবেন না। শুষ্ক অংশে ভিটামিন ই যুক্ত তেল লাগান তবে টি-জোনে লাগাবেন না।

এস সি

Back to top button