বিনোদন

অভিনেতা নাসির উদ্দিনের গল্প

ঢাকা, ০২ জুলাই- ‘অভিনয় আর দুটো ভাত খাবো বলে ঢাকায় এসেছিলাম। এখন পর্যন্ত সে চেষ্টাই করে যাচ্ছি। জীবনে বহুবার চাকরির চেষ্টা করেছি। ৫-৬ বার চাকরি বদলেছি। শেষ পর্যন্ত আমি বুঝে গিয়েছি চাকরি আমার দ্বারা হবে না। আমি সব ছেড়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছি শুধু অভিনয়ের জন্য’- কথাগুলো বলছিলেন নাসির উদ্দিন খান। সম্প্রতি আশফাক নিপুণের ওয়েব সিরিজে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছেন চট্টগ্রামের এই অভিনেতা।

যদিও অল্প সময় অভিনয় করেছেন, ‘তবে এই অল্প সময়ের উপস্থিতি দর্শকদের আলাদাভাবে দৃষ্টি কেড়েছে। তাকে নিয়ে কথা বলছেন মানুষজন, সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে নাসির উদ্দিন বন্দনা। অনেকেই অবশ্য নাম জানেন না, শুধু ছবি দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করছেন অভিনেতাকে। নেটিজেনদের মুখে তার সংলাপ ফিরছে- ‘রূপালিরে আবার কল টল দিয়েন না, নাম্বারটা ডিলিট কইরা দিয়েন।’

অবশ্য নাসির উদ্দিন দর্শকদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কালের কণ্ঠ’র কাছে অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। বললেন, ‘আসলে যারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, আমার অভিনয় নিয়ে কথা বলেন। তারা স্বাভাবিকভাবেই বেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আমাকে। ফোন করেছেন। তবে এটা আমার কাছে নতুন কিছু না। আমি অভ্যস্ত, আলাদাভাবে আমার উচ্ছ্বাস নেই। মানুষের ভালো লাগছে জেনে আমার ভালো লাগছে।’

নিজের পূর্বের কাজের প্রসঙ্গ টেনে নাসির উদ্দিন জানান, ২০১৭ সালের আয়নাবাজি সিরিজের কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত নাটকের একটি চরিত্র করে বেশ আলোচিত হন। এরপর অস্থির সময়ের স্বস্তির গল্পের মাহুত, ওয়েব সিরিজ তাকদীরের ডোম- তাকে আলোচনায় আনে। সর্বশেষ থানার ছিঁচকে অপরাধী। এই অভিনেতা বলেন, এখন পর্যন্ত ১০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। বেশ কিছু টিভি নাটকে কাজ করেছি, করেছি শর্টফিল্ম।

‘ন ডরাই’ চলচ্চিত্রে নায়িকা সুনেরাহর স্বামী হিসেবে অভিনয় করেছেন তিনি। এই সিনেমায় অভিনয় প্রসঙ্গে ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘কাস্ট করার সময় বন্ধু হিন্দোল রায় বলেছিলেন- আপনার ক্যারেক্টরটা জ্যোস, যদিও এখানে নায়ক আছে, তবু নায়িকারে বিয়া করবেন আপনি। শুনে চোখের কোণে জল এসে গিয়েছিল। নায়িকা বিয়ে করবো আমি! আহা! মনে অনেক আশা নিয়ে বাকবাকুম করতে করতে গেলাম। বিয়েও করলাম। ভেবেছিলাম সুখের সংসার হবে আমার। কিন্তু হায়, শুধু বিয়ে করাই সার হয়েছে। সংসার করা তো দূরের কথা, বাসরটাও ঠিকমতো করতে দিল না নিষ্ঠুর ডিরেক্টর।’

নাসির উদ্দিনের অভিনয় নিয়ে প্রশংসা শোনার অভ্যাস হয়তো রয়েছে। তবে নেটিজেনরা মনে করছেন, ‘মহানগর’ তাকে আমজনতার কাছে খুব সহজে পৌঁছে দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, সামান্য অভিনয়; কিন্তু ওয়েব সিরিজে সেরা অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে তিনি একজন। কেননা তার সামান্য অভিনয় অসামান্য হয়ে উঠেছে শুধু অভিনয়গুণে।

নাসির উদ্দিনের ঢাকার মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া কিন্তু খুব বেশিদিনের নয়। ২০১৬ সালে আসেন ঢাকায়। ঢাকায় আসার গল্পটাও অন্য রকম। নাসির উদ্দিনের মুখ থেকেই শোনা যাক। আমি চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স শেষ করলাম। এর পরে চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট হতে চেয়ে ‘সিএ’ ভর্তি হলাম। প্রগ্রামের কোর্স কমপ্লিট করলাম, কিন্তু পরীক্ষা দিলাম না। আসলে আমার তো পড়াশোনা করতে ভালো লাগে না। মন ছুটে যায় শিল্পকলায়। ২০১১ সালে বিয়ে করলাম। ওই সিএ-এর ওপর ভরসা করে পিএইচপি গ্রুপে চাকরি শুরু করলাম। ওই বছরে বিয়ে করলাম। চাকরি করতে গিয়ে বুঝলাম, আমার মধ্যে ফাঁকিবাজি আছে। এভাবে বেশ কয়েকটা চাকরি করলাম। তত দিনে আমার দু-দুইটা বাচ্চা হয়েছে। যখন বুঝলাম চাকরি আমার দ্বারা হবে না, ততক্ষণে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে।

ইতিমধ্যে আমার অভিনয় নিয়ে যথেষ্ট প্রশংসা শুনি। ১৯৯৫-এ আমি থিয়েটারে যোগ দিই। আমার থিয়েটারের নাম তীর্যক নাট্যগোষ্ঠী। শিল্পকলায় মন ছুটে যাওয়ার কারণেই চাকরিবাকরি ছেড়ে দিলাম। কী করব? অনেকেই আমাকে পরামর্শ দেন ঢাকায় চলে আসতে। কিন্তু ঢাকায় এসে আমি কিভাবে চলব, কে আমাকে অভিনয়ের কাজ দেবে। তার পরেও অনেকে বলল, হবে। আমার দ্বারা হবে। ওয়াহিদ তারিক ভাইয়ের একটি সিনেমায় কাজ করেছি চট্টগ্রাম থাকা অবস্থায়, আর ৫০৬টা শর্টফিল্ম। এই সম্বল নিয়েই ২০১৬ সালে ঢাকায় এলাম। প্রথমে অনেক দিন বসে ছিলাম। তার পরে ধীরে ধীরে অভিনয় জগতে আছি। এখন পুরোটা সময় শুধু অভিনয় নিয়েই আমার চিন্তা।

পরিবারের সমর্থন প্রসঙ্গে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমার বড় ভাই আবু আমার পিতৃতুল্য। তিনি মাথায় ছায়ার মতো রয়েছেন বলে আমি আমার নিজস্ব জীবন যাপন করতে পারছি। আর আমার স্ত্রী বোঝে আমি আসলে কী করতে চাই। তাদের সমর্থন আছে বলেই আমি এখনো সব কিছু ছেড়ে অভিনয় করতে পারছি।’

নাসির উদ্দিন অভিনয়ের বাইরে আরেকটা কাজ করেন। দুরন্ত টিভিতে ভয়েজ আর্টিস্ট হিসেবে আছেন। থিয়েটার নিয়ে নাসির উদ্দিনের চিন্তা অন্যভাবে। বললেন, যেহেতু আমি সেভাবে আর থিয়েটারে সময় দিতে পারব না। তাই সলো বা অন্যভাবে থিয়েটারে ফিরব। হয়তো কোনো দলে যোগ দেব না, সেভাবে সময় হবে না। কবে ফিরব, সেটাই চিন্তা করছি।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

Back to top button